Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Amit Shah

Bengal Polls: মমতা নেই তবু ভিআইপি, শুধু ভবানীপুরেই কেন দুয়ারে ‘অমিতভাই’

শনিবার বিজেপি-র সেনাপতি অমিত শাহ ভবানীপুরের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে ভোট চাইলেন। সেটা যতটা না অমিত শাহের, তার চেয়ে অনেক বেশি ‘অমিতভাই’-এর।

ভবানীপুরে বাড়ি বাড়ি প্রচারে অমিত শাহ।

ভবানীপুরে বাড়ি বাড়ি প্রচারে অমিত শাহ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০২১ ১৬:০২
Share: Save:

জনসভা বা রোড-শো নয়। একেবারে বাড়ি বাড়ি প্রচার। ভবানীপুরে শুক্রবার এমনই কর্মসূচিতে অংশ নিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। নীলবাড়ির লড়াইয়ে বিজেপি-র সেনাপতি দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে জনতার ভোট চাইলেন।

ভবানীপুরের বদলে নন্দীগ্রামে প্রার্থী হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে ভোটগ্রহণ হয়ে গিয়েছে। পঞ্চম দফায় মমতার কথায় তাঁর ‘বড় বোন’ ভবানীপুরে ভোট। লড়াইয়ে মমতার অনেক পুরনো সৈনিক তৃণমূলের আদিতম বিধায়ক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। অন্য দিকে, বিজেপি-র প্রার্থী তৃণমূলের ‘ঘনিষ্ঠতা’ ছেড়ে বেরিয়ে আসা অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ। মমতা না থাকলেও ভবানীপুর যে ‘ভিআইপি’ আসন, সেটাই যেন শুক্রবার নতুন করে বুঝিয়ে দিলেন অমিত। কলকাতা শহরে এই প্রথম কোনও কেন্দ্রে হেঁটে প্রচারে গেলেন তিনি। দরজায় দরজায় রুদ্রনীলের হয়ে ভোট চাইলেন বেলতলা বস্তি এলাকায়।

অথচ কাছেই টালিগঞ্জ আসনে লড়াই করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা আসানসোলের বিজেপি সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়। কিন্তু সেখানে অমিত এমন কোনও কর্মসূচি রাখেননি। কার্যতই বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন ভবানীপুরকে। কেন? বিজেপি শিবিরে কান পাতলে তার উত্তরও পাওয়া যাচ্ছে। গেরুয়াশিবিরের দাবি, ভবানীপুর এ বার দলের পক্ষে। ওখানে পদ্ম যে ফুটছেই, তা সম্যক বুঝেই ভবানীপুর ছেড়ে নন্দীগ্রামে গিয়েছেন মমতা। এ নিয়ে কটাক্ষ করেছিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। নির্বাচনী প্রচারে এসে বলেছিলেন, ‘‘ভবানীপুর থেকে স্কুটি ঘুরিয়ে নন্দীগ্রাম গিয়েছেন মমতা।’’ আবার নন্দীগ্রামে ভোটগ্রহণের দিন মোদী বলেছিলেন, ‘‘দিদি প্রথমে ভবানীপুর ছেড়ে নন্দীগ্রামে গিয়েছিলেন। পরে বুঝলেন সেটা ভুল হয়েছে।’’

ভবানীপুর নিয়ে বিজেপি-র এমন আশাবাদী হওয়ার পিছনে রয়েছে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল। ২০১৬ সালে ওই আসন থেকে মমতা জিতেছিলেন ২৫,৩০১ ভোটে। ১৯.৪৮ শতাংশ ভোট পেয়ে বিজেপি ছিল তৃতীয় স্থানে। কিন্তু তিন বছর পরে লোকসভা নির্বাচনে দক্ষিণ কলকাতা আসনের অন্তর্গত ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রে ভোটের পরিমাণ অনেকটা বাড়িয়ে দ্বিতীয় স্থানে থাকে বিজেপি। যদিও লোকসভা নির্বাচনের ফলের নিরিখে তৃণমূল ভবানীপুরে এগিয়ে ছিল ৩,১৬৮ ভোটে।

আরও একটা বিষয় দেখিয়ে দিয়েছিল ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের ফলাফল। পদ্মঝড়ের দাপট দেখা যায় ভবানীপুরের যেখানে মমতার বাড়ি, সেই ওয়ার্ডেও। সেই ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপি-ই এগিয়ে ছিল। এ ছাড়াও ৬৩, ৭০, ৭১, ৭২, এবং ৭৪ ওয়ার্ডে পদ্মফুল এগিয়ে ছিল জোড়াফুলের তুলনায়।

ভবানীপুর আসনে ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে দ্বিতীয় হয়েছিল কংগ্রেস। বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী দীপা দাশমুন্সি ২৯.২৬ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন। এ বার সংযুক্ত মোর্চার জোট এই আসনটি কংগ্রেসকেই ছেড়েছে। প্রার্থী মহম্মদ শাদাব খান। তবে বিজেপি মনে করছে ‘নামজাদা’ প্রার্থী না থাকায় এবং জোটের পক্ষে হাওয়া তেমন ভাবে না থাকায় ভোটের অঙ্কে অনেকটাই ‘সুবিধাজনক’ জায়গায় আছে তারা। এত সব অঙ্কের পরেও ভবানীপুরে শাহ-সফরের পিছনে রয়েছে আরও একটি কারণ রয়ে গিয়েছে।

ভবানীপুরের বাসিন্দাদের একটা বড় অংশই ‘অবাঙালি’। অনেকেই কলকাতার এই এলাকাকে ‘মিনি ইন্ডিয়া’ বলে থাকেন। অন্য ভাষাভাষীর এলাকার মতো এই বিধানসভা এলাকায় একটা বড় অংশই আবার গুজরাতি। তাই শনিবারের প্রচার যতটা না অমিত শাহের, তার চেয়ে অনেক বেশি ‘অমিতভাই’-এর। এলাকার গুজরাতিদের কাছে ‘বার্তা’ দেওয়াও যে অমিতের লক্ষ্য ছিল, সেটা একান্ত আলোচনায় মেনে নিচ্ছেন রাজ্য বিজেপি নেতাদের একটি অংশ। ওই নেতাদের বক্তব্য, অবাঙালি গুজরাতি অধ্যুষিত ভবানীপুর কেন্দ্রে অমিত-পদক্ষেপ প্রার্থিত অভিঘাত তৈরি করবে। আরও একটি ‘রাজনৈতিক’ কারণের কথাও বলছে গেরুয়াশিবির। তাদের দাবি, নন্দীগ্রামে মমতা হারবেন। সেই সঙ্গে ভবানীপুরেও তৃণমূলকে হারাতে পারলে এই রাজনৈতিক বার্তাও দেওয়া যাবে যে, হার অনুমান করেই ভবানীপুর ছেড়ে নন্দীগ্রামে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

শুক্রবার ভবানীপুরে আরও একটি কর্মসূচি ছিল অমিতের। তিনি ওই বিধানসভা এলাকার জাস্টিস চন্দ্রমাধব রোডের একটি বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজ সারেন। এই বাড়িতে থাকেন রাজ্য বিজেপি-তে ‘জুপিদা’ নামে পরিচিত ৮৯ বছরের সমরেন্দ্রপ্রসাদ বিশ্বাস। অধুনাপ্রয়াত বিষ্ণুকান্ত শাস্ত্রী ও তপন শিকদার রাজ্য সভাপতি থাকার সময়ে তিনি দু’বার বিজেপি-র রাজ্য সম্পাদক ছিলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE