সিঙ্গুরে প্রচারে বেরিয়েছেন সৃজন। ছবি: দীপঙ্কর দে।
এক মাস আগে সিঙ্গুরে কারখানার প্রতীকী শিলান্যাস করেছিল সিপিএমের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআই। এই বিধানসভা কেন্দ্রের বামপ্রার্থী হিসেবে মনোনীত হয়ে ফের শিল্পায়নের স্বপ্ন ফেরি করা শুরু করে দিলেন এসএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য। বৃহস্পতিবার থেকে নেমে পডলেন প্রচারে।
কলকাতার হালতুর বাসিন্দা এই ‘তরুণ তুর্কি’র কথায়, ‘‘আমাদের প্রজন্মের সর্বনাশ করে দেওয়া হয়েছে। এর শুরুটা হয়েছিল সিঙ্গুরে। এখন বাংলায় আসল সঙ্কট তরুণ প্রজন্মের সামনে। তাদের হাতে কাজ নেই। তরুণ প্রজন্মের আশা-আকাঙ্ক্ষার কথা তুলে ধরাই আমার কাজ হবে।’’
২০০৮ সালে দুর্গাপুজোর মরসুমে সিঙ্গুর থেকে পাততাড়ি গুটিয়েছিল টাটাগোষ্ঠী। গাড়ি কারখানা হয়নি। এই জনপদেও বড় শিল্প আসেনি। রাজ্যেও বড় শিল্পের দেখা মিলেছে কই! শিল্প-পরিস্থিতির বেহাল দশার প্রসঙ্গ উঠলেই ফিরে ফিরে আসে সিঙ্গুরের নাম। রাজ্যে ক্ষমতায় এলে এখানে শিল্পস্থাপন করে কর্মসংস্থানের জোয়ার আনার ডাক দিয়েছে সিপিএম তথা সংযুক্ত মোর্চা। শিল্পায়নের বার্তা দিয়েই সিঙ্গুর বিধানসভা কেন্দ্র দখল করতে তরুণ মুখ সৃজনের উপরে ভরসা রাখছে সিপিএম।
সৃজন ২০১৭ সালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে স্নাতকোত্তর পাশ করেন। ছাত্র সংগঠনের দায়িত্ব সামলানোর পরে এ বারেই প্রথম নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। সিঙ্গুরে তৃণমূলের ‘নেতিবাচক’ আন্দোলনের কথা তুলে ধরে সৃজন বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছেন, এখানে কারখানা স্থাপনই তাঁদের প্রধান প্রতিশ্রুতি।
সৃজনের মতো ছাত্রনেতা প্রার্থী হওয়ায় এই জেলার সিপিএমের তরুণ প্রজন্মের নেতা-কর্মীরা উজ্জীবিত। এসএফআইয়ের হুগলি জেলা সম্পাদক অমৃতেন্দু দাস সিঙ্গুরের বাসিন্দা। তাঁর কথায়, ‘‘কত ছেলেমেয়ের ভবিষ্যৎ নষ্ট করে হয়েছে ধ্বংসাত্মক আন্দোলনে। যুবসমাজ এর জবাব চায়। এই প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসেবে সৃজন তাদের কথা তুলে ধরবেন।’’
যে দুই প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে সৃজনকে লড়তে হবে, তাঁদের একজন সিঙ্গুরের জমি-আন্দোলনের অন্যতম মুখ, তৃণমূল প্রার্থী বেচারাম মান্না। গেরুয়া-শিবিরের কে প্রার্থী হবেন, তা এখনও জানা যায়নি। তবে, গত লোকসভা ভোটে এই কেন্দ্রে তৃণমূলকে ভাল ব্যবধানে পিছনে ফেলে দিয়েছিল বিজেপি।
লড়াই কতটা সহজ হবে?
বেচারামের কথা তুলে সৃজনের জবাব, ‘‘ব্যক্তি নন, লড়াই নীতির প্রশ্নে। মানুষের সঙ্কট, অভাব অভিযোগ পূরণে এঁরা সচেষ্ট হননি।’’ এ ব্যাপারে তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে ‘দুর্নীতি’র অভিযোগও করেন তিনি। অমৃতেন্দুর কটাক্ষ, ‘‘জমি-আন্দোলনের মুখ নন, উনি শিল্প-বিমুখতার মুখ।’’
তৃণমূল নেতৃত্বের অবশ্য দাবি, তাঁরা কারখানার বিরোধী ছিলেন না। জোর করে কৃষিজমি কেড়ে নেওয়ার প্রতিবাদে আন্দোলন হয়েছিল। কয়েক মাস আগে সিঙ্গুরের ‘অ্যাগ্রো-ইনডাস্ট্রিয়াল পার্ক’ তৈরির কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই কাজ চলছে। একসময়ে টাটাদের জন্য অধিগৃহীত জমিকে ফের চাষযোগ্য করার প্রক্রিয়াও জারি রয়েছে।
বিরোধীদের অবশ্য অভিযোগ, ওই কাজ ভোটের আগে ‘চমক’। যা সর্বনাশ হওয়ার হয়ে গিয়েছে। না হয়েছে কারখানা, না চাষিদের লাভ হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy