Advertisement
০৭ মে ২০২৪
West Bengal Assembly Election 2021

ব্রিগেডে মিটিং হবে ‘ডিম্ভাত’ চাই রাঁধা, ব্রিগেডে মিটিং হবে,  ‘রুটি-সব্জি’ও বাঁধা

সেদ্ধ-ভাত খেতে যতটা আয়োজন দরকার, তাতেই আমিষ আহার সম্ভব। তবে বামেদের ব্রিগেডে এখনও জনপ্রিয় মেনু— ‘রুটি-সবজি’। আর বিজেপি-র ঢালাও খিচুড়ি।

দেওয়াল লিখনেও প্রচার ব্রিগেড সমাবেশের ‘ডিম-ভাত’ মেনুর।

দেওয়াল লিখনেও প্রচার ব্রিগেড সমাবেশের ‘ডিম-ভাত’ মেনুর।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১০:৫৮
Share: Save:

দুটো আলু, একটা ডিম। সঙ্গে দু’হাতা ঝোল। সঙ্গে গরম গরম ভাত। এমন মেনুর কোনও তুলনা হয় না। সহজ কথায়— ‘সস্তায় পুষ্টিকর’। আয়োজনও কম। সেদ্ধ-ভাত খেতে যতটা আয়োজন দরকার, তাতেই আমিষ আহার সম্ভব। তবে ব্রিগেড সমাবেশের সঙ্গে ‘ডিম্ভাত’-এর সম্পর্কটা তৈরি হয়েছে ইদানীং কালে। বছর কয়েক আগে তৃণমূলের সমাবেশের আগে ‘ডিম-ভাত’ মেনু নিয়ে অনেক রঙ্গ-রসিকতা হয়েছিল। নেটাগরিকরা হামলে পড়েছিলেন তা নিয়ে। তবে বামেদের ব্রিগেডে এখনও জনপ্রিয় মেনু— ‘রুটি-সবজি’। আর বিজেপি-র ঢালাও খিচুড়ি।

তবে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যে মেনুই হোক, তার পিছনে থাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য। সমাবেশ হোক বা কর্মিসভা— অনেক দূর দূর থেকে যাঁরা আসেন, তাঁদের খাবারের ব্যবস্থা করতেই হয়। তার জন্য নানা পথ নেয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। সিপিএম-সহ বিভিন্ন বাম দল আবার এর মধ্য দিয়ে জনসংযোগের কাজও করে নেয়। বামেরা ক্ষমতায় আসার আগে, ক্ষমতার থাকার সময় এবং ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার পরেও কর্মী-সমর্থকদের বাড়ি থেকে রুটি সংগ্রহের কাজ করে। রবিবারের ব্রিগেড সমাবেশের ক্ষেত্রেও এমন পরিকল্পনা রয়েছে। এর পিছনের উদ্দেশ্য— ‘সকলের সহযোগ’ ভাবনার প্রকাশ। দলের বর্ষীয়ান নেতা রবীন দেব বলেন, ‘‘এটা সকলকে যুক্ত করার জন্যই করা হয়। এ বারে ব্রিগেডের জন্যও সেই ব্যবস্থা থাকছে। শনিবার বিকেল ও রবিবার সকাল থেকে রুটি সংগ্রহ শুরু হচ্ছে।’’

বিজেপি-ও মধ্যাহ্নভোজকে এখন রাজনৈতিক কর্মসূচির অঙ্গ করে নিয়েছে। দলের কেন্দ্রীয় নেতারা বাংলায় এসে বাউল, বস্তিবাসী, শ্রমিক, উদ্বাস্তু, কৃষকদের বাড়িতে যে মধ্যাহ্নভোজে যাচ্ছেন, তা-ও জনসংযোগই। শুধু ভোটের সময়েই নয়, সারা বছরই অনেক বিজেপি নেতা প্রাতঃরাশ, মধ্যাহ্নভোজ, নৈশভোজে কর্মীদের বাড়িতে যান। এতে শুধু ওই কর্মীই নয়, সম্পর্ক তৈরি হয় তাঁর পরিবারের সঙ্গেও। এটা আদতে বিজেপি-র ‘প্রেরণাদাতা সংগঠন’ আরএসএসের ধারা। সঙ্ঘকর্তারা মনে করেন, কর্মী বা সমর্থকের রান্নাঘরে প্রবেশ মানে আত্মিক সম্পর্ক তৈরি করা। সেটাই মেনে চলে বিজেপি। সম্প্রতি এই রাজ্যে ভোট রাজনীতির অঙ্গ হয়ে উঠেছে বিজেপি-র আরও একটি কর্মসূচি— ‘সহভোজ’। এটিও সঙ্ঘ পরিবারের রীতি অনুসরণ। বাড়ি বাড়ি থেকে সংগ্রহ করা চাল-ডাল দিয়ে একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া। সহভোজের মেনু সাধারণত হয় খিচুড়ি এবং একটি কোনও তরকারি। তবে বাড়িতে খেতে যাওয়ার ক্ষেত্রে সঙ্ঘ বা বিজেপি নেতাদের ‘আমিষ-নিরামিষ’ বাছবিচার নেই। যিনি যাচ্ছেন এবং যাঁর বাড়িতে যাচ্ছেন সেই হিসেবেই ঠিক হয় মেনু। তবে সাংগঠনিক মেনু সাধারণ ভাবে সব সময়েই নিরামিষ।

তৃণমূলে সে ভাবে মেনু নিয়ে আলাদা কোনও রীতি না থাকলেও বিখ্যাত হয়ে গিয়েছে ‘ডিম-ভাত’। বানান বিভ্রাটে ‘ডিম্ভাত’। তবে কলকাতার যে সমাবেশের পরে ওই মেনু আলোচনার আলোয় এসেছিল, তার অনেক আগে থেকেই দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে ভাতের সঙ্গে ডিমের ঝোল দেখা যেত। বিশেষত, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে জেলায় জেলায় কর্মিসভাগুলিতে। কেন, তা জানিয়েছিলেন তৃণমূলের এক শীর্ষনেতা। ওই নেতার বক্তব্য, এর মধ্যেও রয়েছে সাংগঠনিক চিন্তাভাবনা। প্রথমত, ডিম বাঙালির প্রিয় খাবার। খুব কম মানুষই আছেন, যাঁরা ডিম পছন্দ করেন না। বাংলার দল তৃণমূলে তাই বাঙালির ডিম গ্রহণযোগ্য। দ্বিতীয়ত, এক সঙ্গে অনেকের খাবারের ব্যবস্থার জন্য ডিমের তুলনা নেই। রান্নার ঝক্কি কম। তৃতীয়ত, ডিম-ভাত হলে অন্য কোনও মেনুর দরকার পড়ে না। তৃপ্তি করে খাওয়া যায়। ডিমের চতুর্থ সুবিধা হল মাছ বা মাংসের মত ‘ছোট পিস, বড় পিস’ বিতর্ক নেই। ডিমের মাপ মোটামুটি এক। রাজনৈতিক কর্মসূচিতে মাছ বা মাংস না বেছে ডিম নির্বাচনের আরও একটা সুবিধা— উচ্ছিষ্ট ফেলার সমস্যা নেই। ডিমে কাঁটা নেই, হাড়ও নেই। যা থেকে সভাস্থল নোংরা হওয়ার সম্ভাবনা কম। ডিম কম বা বেশি হওয়ার সম্ভাবনাও কম। তৃণমূলের ওই নেতা বলেছিলেন, ‘‘আগে থেকে বেশি করে ডিম এনে রাখা যায়। সমাবেশে লোক বেশি হয়ে গেলে ঝটপট সেদ্ধ করে ঝোলে ফেলে দেওয়া যায়। আবার লোক কম হলে বাড়তি ডিম ফেরতও দিয়ে দেওয়া যায় বিক্রেতাকে। তবে সবচেয়ে বড় কথা, ডিম-ভাত খুবই সস্তায় পেট ও মন ভরাতে পারে। তাই মিড ডে মিল কিংবা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘মা’ প্রকল্প, সবেতেই ডিম হাজির তার উজ্জ্বল উপস্থিতি নিয়ে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE