শস্য উৎপাদন থেকে শুরু করে রোগ নির্ণয় এবং নিরাময়ের উপায় খুঁজে বার করা, সবটার জন্য বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির ব্যবহার আবশ্যক। তাই স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর স্তরে বায়োটেকনোলজি বিষয়টি পড়ানো হয়ে থাকে। এই বিষয়টির মাধ্যমে পরিবেশ, স্বাস্থ্য, কৃষি, খাদ্য উৎপাদন সংক্রান্ত কাজ এবং সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে কোন কোন প্রযুক্তির ব্যবহার প্রযোজ্য এবং প্রাসঙ্গিক, তা নিয়েই চর্চা চলছে। এই বিষয়টি নিয়ে পড়ার জন্য বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি নিয়ে আগ্রহ থাকার পাশাপাশি, জীবজগত এবং পরিবেশ নিয়েও ওয়াকিবহাল থাকতে হবে।
দ্বাদশের পর শুরু করা সম্ভব?
স্নাতক স্তরে বিষয়টি নিয়ে পড়ার জন্য দ্বাদশে জীববিদ্যা (বায়োলজি), রসায়ন এবং ম্যাথমেটিক্সে দক্ষতা থাকা আবশ্যক। যে হেতু এই বিষয়টি ‘মাল্টিডিসিপ্লিনারি’ হিসাবে পরিচিত, তাই ব্যাচেলর অফ সায়েন্স (বিএসসি) ডিগ্রি কোর্স যেমন পড়ানো হয়, তেমনই ব্যাচেলর অফ টেকনোলজি (বিটেক) পড়ার সুযোগ রয়েছে। সাধারণত তিন বছরের স্নাতক স্তরের কোর্স করানো হলেও কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঁচ বছরের ইন্টিগ্রেটেড কোর্সও করতে পারবেন।
শস্য উৎপাদন থেকে শুরু করে রোগ নির্ণয়ের মতো একাধিক বিষয় নিয়ে পড়ানো হয় বায়োটেকনোলজিতে। প্রতীকী চিত্র।
রাজ্যের কোথায়, কোন কোর্স পড়ানো হয়?
- প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলতি বছর থেকে বায়োটেকনোলজি বিষয়টির ব্যাচেলর অফ সায়েন্স (বিএসসি) ডিগ্রি কোর্স চালু করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে জানানো হয়েছে, চার বছরের ওই কোর্সটিতে পড়াশোনার পাশাপাশি, গবেষণার খুঁটিনাটিও শেখানো হবে।
- কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে উল্লিখিত বিষয়ে মাস্টার অফ সায়েন্স (এমএসসি) এবং পিএইচডি কোর্স করানো হয়। এ ছাড়াও উচ্চশিক্ষা সংক্রান্ত কাজ এবং গবেষণার সুবিধার্থে কেন্দ্রীয় সরকারের ডিপার্টমেন্ট অফ বায়োটেকনোলজির সহযোগিতায় একটি ইনস্ট্রুমেন্টেশন ফেসিলিটিও তৈরি করা হয়েছে।
- যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইফ সায়েন্স অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের তরফে তিন ধরনের কোর্স করানো হয়ে থাকে। মাস্টার অফ সায়েন্স (এমএসসি) এবং পিএইচডি ইন সায়েন্স ছাড়াও ইন্টারডিসিপ্লিনারি কোর্স (আইডিসি)/মাল্টিডিসিপ্লিনারি কোর্স (এমডিসি) কোর্সের সুযোগ রয়েছে।
- কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অফ মলিকিউলার বায়োলজি এবং বায়োটেকনোলজিতে মাস্টার অফ সায়েন্স (এমএসসি) এবং পিএইচডি কোর্সই করানো হয়ে থাকে। তবে, ওই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গবেষণামূলক কাজেরও সুযোগ রয়েছে।
- মৌলানা আবুল কালাম আজাদ ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি (ম্যাকাউট)-এর তরফে বায়োটেকনোলজিতে মাস্টার অফ টেকনোলজি (এমটেক) করার সুযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে স্নাতকোত্তর স্তরে ভর্তি হওয়ার জন্য গ্র্যাজুয়েশন অ্যাপটিটিউড টেস্ট ইন বায়োটেকনোলজি (গ্যাট-বি) বা বিশ্ববিদ্যালয়ের পোস্ট গ্র্যাজুয়েট এন্ট্রান্স টেস্টে উত্তীর্ণ হওয়া প্রয়োজন।
খরচ কেমন?
উল্লিখিত বিষয়টি স্নাতক স্তরে পড়ার জন্য ৩০ হাজার থেকে ১৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে। তবে, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি থেকে পড়ার সুযোগ পেলে খরচের অঙ্ক ৫৭ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকার মধ্যে থাকে। বেসরকারি ক্ষেত্রে খরচের পরিমাণ ১৩ লক্ষ টাকা কিংবা তার বেশিও হতে পারে।
ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থা, কৃষিবিদ্যা প্রতিষ্ঠান, বায়োপ্রোডাক্টস ইন্ডাস্ট্রিতে বায়োটেকনোলজিতে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর যোগ্যতা সম্পন্নদের চাহিদা রয়েছে। প্রতীকী চিত্র।
সর্বভারতীয় স্তরের প্রবেশিকা এবং ফেলোশিপ:
- কমন ইউনিভার্সিটি এন্ট্রান্স টেস্ট (কুয়েট)-র মাধ্যমে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে বায়োটেকনোলজি বিষয়ে স্নাতক স্তরে ভর্তির সুযোগ রয়েছে। এই পরীক্ষাটি পরিচালনা করে ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি (এনটিএ)।
- স্নাতকোত্তর স্তরে ভর্তি হওয়ার ক্ষেত্রে গ্র্যাজুয়েশন অ্যাপটিটিউড টেস্ট ইন বায়োটেকনোলজি (গ্যাট-বি) প্রবেশিকায় উত্তীর্ণ হতে হয়। ওই পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের প্রতি মাসে ফেলোশিপ হিসাবে ১২ হাজার টাকা দেওয়া হবে। এই অনুদান কেন্দ্রীয় সরকারের ডিপার্টমেন্ট অফ বায়োটেকনোলজির তরফে বরাদ্দ করা হয়ে থাকে। ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি (এনটিএ)-এর তরফে ওই পরীক্ষার আয়োজন করা হয়।
- এ ছাড়াও কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি মন্ত্রকের অধীনস্থ ডিপার্টমেন্ট অফ বায়োটেকনোলজির তরফে বায়োটেকনোলজি এলিজিবিলিটি টেস্ট (বেট)-এর আয়োজন করা হয়ে থাকে। ওই পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের কাছে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পিএইচডি করার সুযোগ যেমন রয়েছে, তেমনই তাঁরা জুনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপও পান।
কাজের সুযোগ:
- এগ্রি-বায়োটেকনোলজি, ডায়গনস্টিকস, ফার্মাসিউটিক্যালস, বায়োমেডিক্যাল, জেনোমিক্স, বায়োইনফরমেটিক্সের মতো একাধিক ক্ষেত্রে বায়োটেকনোলজির স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর যোগ্যতা সম্পন্নদের চাহিদা রয়েছে।
- এ ছাড়াও পিএইচডি সম্পূর্ণ করার পর ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থা, কৃষিবিদ্যা প্রতিষ্ঠান, বায়োপ্রোডাক্টস ইন্ডাস্ট্রি কিংবা মেরিন বায়োটেকনোলজির মতো ক্ষেত্রগুলিতেও বিজ্ঞানী, গবেষক কিংবা বিশেষজ্ঞ হিসাবে কাজের সুযোগ থাকছে।
কাজের প্রশিক্ষণ:
কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি মন্ত্রকের অধীনস্থ ডিপার্টমেন্ট অফ বায়োটেকনোলজির তরফে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর যোগ্যতাসম্পন্নদের জন্য ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেনিং প্রোগ্রামের আয়োজন করে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের তরফে প্রতি বছর বায়োটেকনোলজিতে স্নাতক, স্নাতকোত্তর যোগ্যতাসম্পন্নদের গবেষণা, উৎপাদনের মতো ক্ষেত্রে কাজের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে থাকে।
প্রশিক্ষণ চলাকালীন তাঁদের ২৩ হাজার ৩৫০ টাকা ভাতা হিসাবেও দেওয়া হয়। এ ছাড়াও ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা স্টাইপেন্ডও হিসাবেও বরাদ্দ করা হয়। প্রশিক্ষণ চলে ছ’মাস পর্যন্ত। চলতি বছরের প্রশিক্ষণের জন্য ২৪ অগস্ট পর্যন্ত আবেদন গ্রহণ করা হবে।