Advertisement
২৬ মার্চ ২০২৩

ইন্ডাস্ট্রি আমায় সিরিয়াসলি নিল না

তাঁকে কেন্দ্রীয় চরিত্রে নিতে গেলে অন্য এফর্ট দরকার। বললেন কৌশিক সেন। শুনলেন প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্তঅনেক আগেই এ রকম দু’টো চরিত্র করেছিলাম। মৃণাল সেন-এর ‘আমার ভুবন’ আর তপন সিংহের ‘হুইলচেয়ার’-এ। চিরকালই আমার মনে হয়েছিল আমি অভিনেতা হব, হিরো নয়। এখন আমার উচিত বিভিন্ন ধরনের চরিত্রে অভিনয় করা। বললেন কৌশিক সেন।

শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:০১
Share: Save:

পর্দায় কৌশিক সেনের একটা নির্দিষ্ট ইমেজ আছে। ‘ব্যোমকেশ ফিরে এল’-তে সেই ইমেজটা তো ভেঙে চুরমার করে দিয়েছেন...

Advertisement

অনেক আগেই এ রকম দু’টো চরিত্র করেছিলাম। মৃণাল সেন-এর ‘আমার ভুবন’ আর তপন সিংহের ‘হুইলচেয়ার’-এ। চিরকালই আমার মনে হয়েছিল আমি অভিনেতা হব, হিরো নয়। এখন আমার উচিত বিভিন্ন ধরনের চরিত্রে অভিনয় করা। অঞ্জনদা প্রথমেই আমাকে বলেছিল, ‘তুমি তো পাল্টে পাল্টে বিভিন্ন ধরনের চরিত্রে অভিনয় করতে চাও। তাই এ রকম একটা কথা ভাবছি। চরিত্রটা তোমার থেকে হয়তো একটু বেশি বয়সের। ব্যভিচারী, অ্যালকোহলিক...’ তবে প্রথমে আমার মনে হয়েছিল এটা বেশি ভাঙা হয়ে যাচ্ছে না তো!

‘ইতি মৃণালিনী’তে আপনার চরিত্রটা অন্য রকম। তবু ভাঙাটা বেশ কৌশিক-সুলভ...

Advertisement

ঠিকই। ছবিতে আমি সাউথ ইন্ডিয়ান। কবি। কিন্তু সেও ইন্টেলেকচুয়াল।

‘ব্যোমকেশ...’‌‌-এর চরিত্রটা না কি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রতি আপনার ট্রিবিউট। সেটা কী ভাবে?

‘টিকটিকি’ নাটকে সৌমিত্রবাবু যে চরিত্রটা করতেন, সেটার খানিকটা ছায়া এই চরিত্রে আছে। বনেদি বড়লোক। খামখেয়ালি। নানা রকম বদগুণ ছিল। সেটার হাল্কা একটা আভাস আমার চরিত্রে আছে।

ব্যক্তিগত জীবনে আপনি মদ...

...খাই না। ড্রিঙ্ক করার পরে যে অভিনয়টা, সেটা সৌমিত্রবাবু দারুণ ভাল করেন ‘নীলকণ্ঠ’ নাটকে। আমার সেটা খুব কাছ থেকে দেখা। আমি বিশ্বাস করি অভিনেতা হল সে, যে মনে রাখে। সংলাপ মনে রাখে। জীবন মনে রাখে।

মনে হয়নি কেন ইন্টেলেকচুয়াল বা বোহেমিয়ান চরিত্রের বাইরে আপনাকে কিছু অফার করা হয়নি...

এটা প্রযোজকেরাই বলতে পারবেন। তবে অনেক আগেই বুঝেছিলাম আমাকে উপার্জন করার জন্যই সিরিয়াল করতে হবে। মনের খোরাক মেটানোর জন্য থিয়েটার। অনেক সময় থিয়েটারের জন্য আমি অন্যান্য কাজ ছেড়ে দিয়েছি। তাতে অনেকের ধারণা হয়েছে যে আমাকে তো চাইলেই পাওয়া যাবে না।

ব্যাপারটা কি সত্যি, না অপপ্রচার?

আমার ক্ষেত্রে দুটোই হয়েছে।

কোনটা বেশি হয়েছে?

ইন্ডাস্ট্রি ভাবেনি। কিন্তু দোষটা আমার বেশি। আমি যে ফ্রি আছি, সেটা আমি আগ বাড়িয়ে কাউকে বলিনি।

কখনও মনে হয়েছে এমন চেষ্টা হয়েছে যাতে কৌশিককে একটা প্রজেক্টে ঢুকতে দেওয়া না হয়...

ঢুকতে দেওয়া হবে না... এ রকমটা...

এটা একান্তই চরিত্রাভিনেতাদের সমস্যা। নায়কদের নয়...

হুমম্, চরিত্রাভিনেতাদের ক্ষেত্রে টলিউডে অনেক অপশন। যেমন খরাজ, রজতাভ, শান্তিলাল, পীযূষ, শঙ্কর, চন্দন! আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে এ রকম একটা আনফরচুনেট সেকশন আছে। আন্ডাররেটেড কিন্তু অসাধারণ অভিনেতা। মাঝে মাঝে আমার এ নিয়ে দুঃখ হত। আমার মনে হয় একটা সময়ের পরে ইন্ডাস্ট্রি আমায় সিরিয়াসলি নেয়নি।

অপর্ণা সেন নিয়েছেন...

হ্যাঁ। কিছু কিছু পরিচালক নিয়েছেন। কিন্তু না নেওয়ার ফলে হাল্কা আত্মবিশ্বাসের অভাব তৈরি হয়।
মনে হয় পরিচালকেরা যখন ভাবছেন না তখন হয়তো ওটা আমার জন্য নয়।

টলিউড শাশ্বতর কাঁধে ভরসা করে সোলো প্রজেক্টও করছে। হিংসে হয় এমন জায়গাটা পেলেন না বলে?

না। কারণ ইন্ডাস্ট্রিতে আমার ছেলেবেলার দুটো বন্ধু আছে। মাকু (পল্লবী) আর অপু (শাশ্বত)। অপু আমার ইন্সপিরেশন। যখন আমি একটা চরিত্র পাই, যেটা অপুর চরিত্রের মাপে নয় তখন আমার মনে হয় ‘‘আই হ্যাভ টু গিভ মাই বেস্ট।”

‘ব্যোমকেশ...’‌-এ আপনার অভিনয় অনেকটা ‘বুনো হাঁস’-এ সুদীপ্তা চক্রবর্তীর মতো প্রশংসিত। ছোট রোলে দারুণ ইমপ্যাক্ট...

হ্যাঁ। পাওয়ারফুল প্রেজেন্স হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে আমাকে নির্ভর করে কৌশিক ‘শূন্য এ বুকে’ করেছিল।

সেটা ধারাবাহিক ভাবে হয়নি...

হুমম্।

আপনাকে মুখ্য চরিত্রে কাস্ট করার জন্য এটাই কি ঠিক সময়?

আমি আশাবাদী।

কী বলবেন? পেলে ভাল লাগবে নাকি এখন পাওয়া উচিত?

পেলে ভাল লাগবে। কিন্তু পাওয়া উচিত বলব না। ইন্ডাস্ট্রির ভেতরের গল্পগুলো জানি। যে ছবিগুলো ‘সগৌরবে চলিতেছে’ বলে বলা হয় সেগুলো তো আসলে সে ভাবে চলে না। কিছু মাল্টিপ্লেক্স-এ কিছু দিন চলে থেমে যায়। আমাকে কেন্দ্রীয় চরিত্রে নিতে গেলে অন্য এফর্ট দরকার।

কী মনে হচ্ছে? ইন্ডাস্ট্রি কৌশিক সেনের ওপর ইনভেস্ট করবে না?

করবে না। আমার ক্ষেত্রে কিছু ধারণা রয়ে গেছে। পরিচিত মুখ। টেলিভিশন করে। আমার সাম্প্রতিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে যেমন প্রচুর মানুষের উচ্ছ্বাস রয়েছে সে রকম রয়েছে অস্বস্তিও।

মানে ছবিতে থাকলে ঠিক আছে কিন্তু পুরোটা ভরসা না করাই ভাল?

হ্যাঁ।

আচ্ছা বলিউডে একটা আউটিং করলে কি ব্যাপারটা পাল্টাবে? যেমন ‘কহানি’র পর শাশ্বতর হয়েছে। এর আগেও তো শাশ্বত ভাল অভিনয় করতেন...

‘আমার ভুবন’-এ আমি আর শাশ্বত জয়েন্টলি পুরস্কার পেয়েছি। কী দারুণ পারফর্ম্যান্স! কিন্তু বব বিশ্বাস ওর কেরিয়ার অনেকটাই পাল্টে দিল। আর একটা ব্যাপার রয়েছে। রুদ্রনীল, শাশ্বত, ঋত্বিক, এমনকী আমার ছেলের মধ্যেও আছে। সেটা হল কিলার ইনস্টিংক্ট। সেটা আমার মধ্যে নেই। এই নয় যে একটা চরিত্র করতে গেলে আমি খারাপ কাজ করব। কিন্তু একটা চরিত্র পাওয়ার জন্য, পাওয়ার পর, বা একটা থেকে আরেকটায় যাওয়ার মধ্যে পুরোটাই এ সব নিয়ে থাকা। সেখানে আমি ডিফোকাসড হয়ে যাই। কামদুনি আমাকে ভাবায়। মঞ্চে এর পর ‘অ্যান্টিগোেন’ করব। এখন ভাবছি ওটা নিয়ে। হয়তো একটা চরিত্র দেখে আফসোস করি। কিন্তু তার পর ভাবি ওটা পাওয়ার জন্য নিজে তো কিছু করিনি।

ছেলেকে কি বলবেন আমার মতো হোস না?

ও তা হয়নি। আমার বৌ বলেছে, ঋদ্ধিকে তুমি ডিকটেট করবে না। মঞ্চ দিয়ে ঋদ্ধির শুরু। কিন্তু সিনেমার দিকে ওর ঝোঁক অনেক বেশি।

ওকে কী বলেছেন যে অভিনেতা হও, অ্যাক্টিভিস্ট হোয়ো না?

হ্যাঁ, কারণ আমার মনে হয় হি বেটার ডু ইট হিজ ওয়ে। ও বাবাকে যে ভাবে দেখেছে, ওর চয়েসটা পরিষ্কার। ও জানে ও বাবার মতো হবে না।

‘ওপেন টি...’তে অভিনয় করতে গিয়ে কখনও বাবার সত্তাটা সরিয়ে ঋদ্ধির সঙ্গে প্রতিযোগিতা ছিল?

মাত্র দু’টো দৃশ্য ছিল একসঙ্গে। সেটা দেখার সময় বৌকে ঋদ্ধি আর আমি দু’জনেই বলেছি নিজেদের কাজটা বেটার (হাসি)। আমার স্ত্রী সেখানে চুপ। তবে, আমাকে আজকাল ঋদ্ধি সেনের বাবা বললে ভালই লাগে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.