Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

দর্শকের মনে আবীরের রং

এ বার প্রযুক্তি খুঁজল ফেলুদা কার হওয়া উচিত? তুলে আনলেন কল্যাণ কর।‘অহল্যা’ আর বাবলু আমার চোখ খুলে দিল। সুজয় ঘোষ একটি পনেরো মিনিট দৈর্ঘের সিনেমা করেছিল যার নাম ‘অহল্যা’। সিনেমাটি কোনও হলে মুক্তি পায়নি, একটি পানীয় প্রস্তুতকারী সংস্থার স্পনসরশিপে সিনেমাটি ইউটিউব-এ মুক্তি পায় কয়েক মাস আগে।

শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৬ ০০:০৪
Share: Save:

‘অহল্যা’ আর বাবলু আমার চোখ খুলে দিল। সুজয় ঘোষ একটি পনেরো মিনিট দৈর্ঘের সিনেমা করেছিল যার নাম ‘অহল্যা’। সিনেমাটি কোনও হলে মুক্তি পায়নি, একটি পানীয় প্রস্তুতকারী সংস্থার স্পনসরশিপে সিনেমাটি ইউটিউব-এ মুক্তি পায় কয়েক মাস আগে। আন্দাজ করুন তো এখন অবধি কত লোক সেই সিনেমাটি ইউটিউব-এ দেখেছে? ১০০? ১,০০০? ১০,০০০? না... হল না! যদি বলি ৭০ লক্ষ, বিশ্বাস করবেন? হ্যাঁ সত্যি...৭০ লক্ষ! শাহরুখ খান-এর ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’ মারাঠা মন্দির বলে মুম্বই এর একটি হল-এ ২০ বছর টানা চলেছিল... সেই তুলনায় ‘অহল্যা’র হিসেব দেখুন - ধরা যাক প্রতি শো হাউস ফুল হতে ২০০ দর্শক লাগে, তা হলে ৭০ লক্ষ দর্শক মানে ৩৫,০০০ হাউস ফুল শো। যদি দিনে তিনটে হাউস ফুল শো হয়, তা হলে ১১,৬৬৭ হাউস ফুল দিন, অর্থাৎ ১,৬৬৭ সপ্তাহ। এ বারে ১৬৬৭ সপ্তাহকে বছরে হিসেব করলে হয় ৩২ বছর! এইবারে তুলনাটা বুঝতে পারছেন? আপনি হয়ত বলবেন এই তুলনা ঠিক নয়, কারণ ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’ দর্শক পয়সা খরচা করে দেখেছিল, আর এ তো বিনি পয়সায়। ঠিক... হয়ত একদম এক নয়, কিন্তু আমার উদ্দেশ্য হল ইন্টারনেটের ক্ষমতা বোঝানোর এবং আশাকরি সেই ব্যাপারে আপনি আমার সঙ্গে একমত হবেন।

এ তো গেল ‘অহল্যা’র কথা। এই বারে আসি বাবলুর গল্পে। কিছুদিন আগে, তথ্য প্রযুক্তি জগতের কিছু বন্ধু বান্ধব মিলে আমরা গল্প করছিলাম। বিষয় বস্তু হল ই-কমার্স। কী ভাবে আমাদের জীবন ধারা পাল্টে দিয়েছে ই-কমার্স, সেই নিয়ে আলোচনা এবং বাঙালির তর্কযুদ্ধ। বন্ধুর বাড়িতে চা পরিবেশন করছিল একটি ছেলে, দেখলাম আমাদের চা দিয়ে সে চুপ চাপ দুরে দাড়িয়ে আমাদের কথা শুনছে। আমি তার দিকে তাকিয়ে বললাম, “জানো তো আজকাল বাড়ি বসেই জিনিস কেনা যায়, দোকানে যাবার দরকারই পড়ে না?” ফিক করে হেসে ছেলেটি বলল ‘‘জানি স্যার। আমাদের গ্রামে তো আমরা অনলাইনেই এই জিনিস কিনি। এই দেখুন না আমার জুতোটা, আমার মাপ ৮, আর অনলাইন কোম্পানি আমায় পাঠালো তিনটে স্যাম্পল, ৭, ৮, ৯ - যেটা পরে ফিট করবে, সেটা রেখে দিয়ে বাকি দুটো ফেরত দিয়ে দেওয়া যায়। আর দাম দেওয়া যায় ক্যাশ অন ডেলিভারি। ব্যাস আমাদের আর কোনও সমস্যা নেই। আসলে শহরে তো আপনাদের শপিং মল আছে, আমাদের তো তা নেই, তাই অনলাইনই আমাদের সমাধান।” শুনে আমার চক্ষু চড়ক গাছ... ছেলে বলে কি? কী নাম তোমার? ‘‘স্যার বাবলু। আমাদের গ্রামের নাম হেতমপুর।’’ ...আবার সেই পাওয়ার অফ ইন্টারনেট।

এত কথা বলার একটাই কারণ। ...ফেব্রুয়ারির ২২ তারিখে আনন্দplus এর একটি খবর... ফেলুদার পরিচালক নতুন মুখ খুঁজছেন। প্রতিবেদনটি পড়ার পরে আমার মনে হল, আচ্ছা, দর্শক কি তাই চাইছে? একবার রিসার্চ করলে কেমন হয়? তথ্য প্রযুক্তি জগতের সাথে জড়িয়ে আছি প্রায় ২০ বছর হল, ইদানীং বেশ কযেকটি ‘স্টার্ট-আপ’ সংস্থার সাথে যোগাযোগ আছে, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে। সেই রকম একটি analytics সংস্থার কর্ণধারকে বললাম, “আচ্ছা তোমরা কি রিসার্চ করে বলতে পারবে দর্শক কী চাইছে?” সংস্থার রিসার্চ টিম তো খুব উত্তেজিত ‘‘হ্যাঁ, নিশ্চয়ই পারব’’।

গত কয়েক দিন ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করে সেই ইয়ং রিসার্চ টিম খুব ইন্টারেস্টিং রিপোর্ট বানিয়ে আমাকে প্রেসেন্ট করে, যেটা আমি পাঠকদের সঙ্গে শেয়ার করতে চাই। প্রথমে আমরা বোঝার চেষ্টা করেছিলাম, ফেলুদা বদলের কথায় আদৌ কোনও প্রভাব হয়ে ছিল কিনা দর্শকদের মনে। (গ্রাফ ১)

এই গ্রাফটি হচ্ছে রেগুলার ফেলুদা এবং ব্যোমকেশ বক্সীকে নিয়ে দর্শক দের সোশ্যাল মিডিয়া তে আলোচনা। খেয়াল করে দেখুন, ফেব্রুয়ারির ২২ তারিখে গ্রাফ হঠাৎ ছিটকে ওপরে উঠে গেছে, তার মানে সেইদিন আনন্দ প্লাস এর খবরের জেরে অন্য দিনের তুলনায় অনেক বেশি আলোচনা হচ্ছে, যেটা আবার কয়েকদিন পরে নেমে গেছে, অর্থাৎ তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়া কিঞ্চিৎ স্তিমিত। এর অর্থ, সেই দিনের খবর দর্শকদের রিঅ্যাক্ট করিয়েছে এবং তারা আলোচনায় যোগ দিয়েছে জোর কদমে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তারা কী বলতে চেয়েছে? কী তাদের মতামত? তারা ফেলুদা বদল চায় নাকি চায় না? নাকি, দর্শকের কিছু আসে যায় না ? চলুন, সেটা বোঝার চেষ্টা করি।

আগের তথ্য দিয়ে এটা পরিষ্কার যে দর্শকদের মধ্যে ফেলুদা বদল প্রভাব ফেলেছে। এই বারে বোঝা দরকার কি সেই প্রভাব? কারণ, পয়সা দিয়ে টিকিট কেটে তারাই তো আসবে। অতএব তাদের বক্তব্য জানা তো খুব জরুরি! নীচে আমরা দর্শকদের বক্তব্য দেবার চেষ্টা করলাম কযেকটি ভাগে ভেঙে। মনে রাখবেন, সচেতন ভাবেই আমরা ফান ক্লাব থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করেছি, যাতে নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা যায়। (গ্রাফ ২)

রিসার্চ করার সময় আমরা এটা খেয়াল রাখার চেষ্টা করেছি, যে দর্শক দের মতামত আমরা তুলে ধরছি, তারা কোথায় থাকে। সাধারণ বুদ্ধি বলে, অনলাইন, সোশ্যাল মিডিয়া, এসব তো শহুরে ব্যাপার। কিন্তু আমি আগেই আপনাদের হেতমপুর-এর ই -কমার্স এর কথা বলেছি। .শহর, গ্রাম, দেশ, বিদেশ, গরিব, বড়লোক সব মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে। বিশ্বাস করুন, আমাদের রিসার্চ ফেলুদার ব্যাপারেও এক কথা বলছে।

তর্ক বিতর্ক চলেছে পূর্বে ওড়িশা, পশ্চিমে মহারাষ্ট্র, উত্তরে হরিয়ানা, উত্তর পূর্বে অসম, দক্ষিণে কর্নাটক থেকেও। বাদ যায়নি বাংলাদেশ, প্রবল ভাবে আমেরিকা এবং ইংল্যান্ড! সারা বিশ্বেই যে ছড়িয়ে আছে ফেলুদা অনুগামীরা! ফেলুদা বদলে তাদেরও অনেক মতামত আছে...

কোথাও ফেলুদা ভক্ত বলছে ‘‘আরে রবার্ট ডাউনি জুনিয়র (শার্লক হোমস এবং আয়রন ম্যান) যদি নানা চরিত্রে গ্রহণযোগ্য হয়, তাহলে ফেলুদা এবং ব্যোমকেশ এক লোক নয় কেন?’’ কেউ বলছে ‘‘আজকের দর্শক অনেক পরিণত, তাদের মেনে নিতে আপত্তি নেই,’’ কেউ কেউ বলছে, ‘‘আমাদের ভালো লেগেছে ফেলুদাকে, বদলে দিলে আর দেখব না কিন্তু!’’ ৫৬% জনমত কিন্তু একই অভিনেতাকে ফেলুদা এবং ব্যোমকেশ হিসেবে চাইছে। ...রিসার্চ না করলে বোধহয় আমিও বিশ্বাস করতাম না! মনে রাখবেন শহর কিংবা গ্রাম, মহিলা কিংবা পুরুষ, ট্রেন্ডটা কিন্তু একই রকম।

বেশ কয়েক হাজার tweet এবং facebook থেকে নেওয়া এই তথ্য (দু’সপ্তাহে ছ’হাজারের ওপর) কিন্তু আমাদের চোখ খুলে দিল।

আজ থেকে ১০০ বছর আগে, পৃথিবীর সেরা গোয়েন্দা শার্লক হোমসকে মৃত থেকে জীবিত করে ফিরিয়ে আনতে বাধ্য হয়েছিল তার লেখক স্যার আর্থার কোনান ডয়েল। কারণ? পাঠকের চাপে পড়ে। আসলে তারাই তো শেষ কথা! সেই সময় পাঠক সংখ্যা প্রায় ২০,০০০ কমে গিয়েছিল লেখক এর। তখন তো আর সোশ্যাল মিডিয়া ছিল না, কিন্তু এখন আছে।

প্রযুক্তির দ্বারা যে কোনও experiment ঝালিয়ে নেবার উত্কৃষ্ট সুযোগ এখন আমাদের সামনে।

মনে রাখতে হবে, ফেলুদা কিন্তু আপামর বাঙালির। তারাই ঠিক করে দেবে ফেলুদার ভবিষ্যৎ! এক ফেলুদা রসিকের tweet মনে পড়ে গেল ‘‘পাল্টে দিলে আর ফেলুদাই দেখব না!’’ একটা টিকিটের বিক্রি কিন্তু কমছেই!

ফেলুদা মেলেনি

এখনও খোঁজ চলছে। সন্দীপ রায় বললেন স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়-কে

নতুন ফেলুদার খোঁজ পাওয়া গেল?

না, আমার পছন্দের ফেলুদার দেখা পাইনি এখনও। তাড়াহুড়ো করে কোনও ভুল সিদ্ধান্ত নিতে চাই না। ফেলুদার খোঁজ চলছে...

ফেলুদার জন্য অনির্বাণের দিকে ভোট বেশি...

অনির্বাণের অনেক ধরনের ছবি দেখেছি। ওর একটা ডেমো ছিল সেটাও দেখেছি। কিন্তু ফেলুদার জন্য এখনও ও পরিণত নয়। অনেকের কাছে শুনেছি ও সাঙ্ঘাতিক অভিনেতা। কিন্তু ওর চোখেমুখে ফেলুদার ম্যাচিওরিটি দেখতে পাইনি।

আবীরই কি ফেলুদা থাকছেন?

আমার কাছে প্রায়ই প্রচুর মহিলাদের চিঠি আসছে। চিঠিগুলো সবই আবীরের জন্য। প্রত্যেক চিঠিতেই একই অনুরোধ, আবীরকেই আমরা ফেলুদা দেখতে চাই। কেউ এটাও বলেছেন ব্যোমকেশ-ফেলুদা আবীরই করুক না, আপত্তি কী! কিন্তু আপত্তি থেকেই যাচ্ছে। লোকে আবীরকে কী বলে ডাকবে, ফেলুদা না ব্যোমকেশ? বেণুকে (সব্যসাচী চক্রবর্তী) যেমন আজও লোকে ফেলুদা বলেই জানে। আবীরের ক্ষেত্রে এই আইডেন্টিটি ক্রাইসিসটা কিন্তু থেকেই যাচ্ছে। এবং শুধু তা-ই নয়, আবীর ফেলুদা আর ব্যোমকেশ দু’টো চরিত্রে অভিনয় করলে, দু’টো ব্র্যান্ড-ই ওভারল্যাপ করবে বারবার। এটা চাই না। যদিও জানি আবীর অসম্ভব ভাল অভিনেতা।

যিশু যদি ব্যোমকেশ না করতেন?

সম্ভাবনা একেবারেই নেই। যিশু কনট্র্যাক্টবাউন্ড। আমারও একটা ভুল হয়েছে। ‘বাদশাহী আংটি’ করার সময় আমি যদি আবীরকে কনট্র্যাক্টে সই করিয়ে নিতাম, তা হলে ওই সমস্যাটা হত না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE