Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ন্যাড়া মাথা থেকে বেঢপ দেহ, সাহসী বলি-নায়িকারা

ন্যাড়া এক বারই বেলতলায় যায়। কিন্তু প্রিয়ঙ্কা চোপড়াকে প্রশ্ন করলে তিনি হয়তো অন্য উত্তর দেবেন। ‘মেরি কম’ ছবিতে প্রস্থেটিক্সের সাহায্যে প্রিয়ঙ্কাকে একটি দৃশ্যে ন্যাড়া মাথায় দেখা যাবে। প্রিয়ঙ্কার সেই লুক দেখে অনেকেই বেশ আশ্চর্য হয়েছেন। সেই সঙ্গে প্রশ্ন করেছেন, বাস্তবে যদি মাথা কামিয়ে ন্যাড়া হতে বলা হয়, তা হলে কি তিনি রাজি আছেন?

প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০১৪ ০২:১৬
Share: Save:

ন্যাড়া এক বারই বেলতলায় যায়।

কিন্তু প্রিয়ঙ্কা চোপড়াকে প্রশ্ন করলে তিনি হয়তো অন্য উত্তর দেবেন। ‘মেরি কম’ ছবিতে প্রস্থেটিক্সের সাহায্যে প্রিয়ঙ্কাকে একটি দৃশ্যে ন্যাড়া মাথায় দেখা যাবে। প্রিয়ঙ্কার সেই লুক দেখে অনেকেই বেশ আশ্চর্য হয়েছেন। সেই সঙ্গে প্রশ্ন করেছেন, বাস্তবে যদি মাথা কামিয়ে ন্যাড়া হতে বলা হয়, তা হলে কি তিনি রাজি আছেন?

উত্তরে প্রিয়ঙ্কা শুধু হেসে বলেছেন ‘নেভার সে নেভার’। অর্থাৎ আগে থেকে বলছেন না, যে এমনটা তিনি করবেন না!

প্রিয়ঙ্কা একা নন। আজকাল বলিউডের বহু তারকাই লুক নিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছেন। সমান্তরাল ছবির ক্ষেত্রে এই ধরনের সাহস দেখানোটা নতুন কিছু নয়। তবে মূলধারার বাণিজ্যিক ছবির জন্য এত ঘন ঘন এই রকম পরীক্ষা আগে এতটা দেখা যায়নি বললেই চলে। তা সে রাজকুমার হিরানির ‘পিকে’ ছবিতে আমির খান হোন বা ‘ফাইন্ডিং ফ্যানি’ ছবিতে ডিম্পল কপাডিয়া। ‘পিকে’ ছবিতে আমিরের একটি নগ্ন দৃশ্য নিয়ে তো ইতিমধ্যেই হইহই পড়ে গিয়েছে। সেখানে নগ্ন আমিরকে দেখা যাচ্ছে তাঁর পুরুষাঙ্গটা একটা স্টিরিয়ো দিয়ে ঢেকে রাখতে। আর ডিম্পল? ৫৭ বছর বয়সে এসে বলিউডের চিরযৌবনা ‘ববি’ ব্যবহার করেছেন ২০ কেজির প্রস্থেটিক্স! শরীরটা ভারী দেখানোর জন্যই তাঁর এই প্রয়াস।

এর আগে অবশ্য বিদ্যা বালন ‘কহানি’তে প্রস্থেটিক্সের ব্যবহার করে এক অন্তঃসত্ত্বা মহিলার চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ‘ডার্টি পিকচারে’ মেদ বাড়িয়ে কিছুটা বেঢপ চেহারা তৈরি করেছিলেন। সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া ‘ববি জাসুস’ ছবিতে তাঁর ১২টা লুক। তার একটিতে তো আবার নকল দাঁত লাগিয়ে চমকে দিয়েছেন অনেককেই।

বলিউডের নায়িকারা মূলধারার ছবির জন্য এই ধরনের ঝুঁকি আগে বড় একটা নেননি। ১৯৮১-তে সঞ্জীবকুমার প্রস্থেটিক্সের ব্যবহার করেছিলেন ‘চেহরা পে চেহরা’ ছবিতে। দক্ষিণী এবং হিন্দি সিনেমায় তাঁর লুক নিয়ে যথেষ্ট পরীক্ষা করেছেন কমল হাসন। ‘চাচি ৪২০’, ‘দশাবতারম’ থেকে ‘বিশ্বরূপম’ সব ছবিতেই কমল দর্শকদের চমকে দিয়েছেন। প্রত্যেক দিন শু্যটিংয়ের সময় অমিতাভ বচ্চনকে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা একটানা প্রস্থেটিক্স ব্যবহার করতে হয়েছে ‘পা’-তে অরোর চরিত্রে অভিনয় করার জন্য। শোনা যাচ্ছে যে ‘১০২ নট আউট’ ছবির জন্যও অমিতাভ আবার সেই প্রস্থেটিক মেক আপ ব্যবহার করবেন। এ বার ১০২ বছরের এক বৃদ্ধের চরিত্রে অভিনয় করার জনই সেই প্রস্তুতি।

কিন্তু নায়করা যা করতে পারেন, তা নায়িকাদের পক্ষে করা অতটা সহজ ছিল না এত দিন। সমান্তরাল ছবিতে নগ্ন দৃশ্যে (‘ব্যান্ডিট কুইন’-এ সীমা বিশ্বাস) বা ন্যাড়া মাথা হয়ে অভিনয় করাতে (‘ওয়াটার’-এর জন্য শাবানা আজমি এবং নন্দিতা দাস। তবে পরে তাঁরা ছবিটা করেননি) অতটা ঝুঁকি থাকে না। তবে মূলধারার হিন্দি ছবিতে নায়িকাদের ভূমিকাটা আলাদা। তাঁদের থেকে প্রত্যাশাও অন্য রকম। পর্দায় নিজের সৌন্দর্যকে মেলে ধরাটা সেখানে আবশ্যিক। সেখানে নিজেদের কম সুন্দর দেখানোর ঝুঁকি নেওয়াটাও তাই বেশ কঠিন। ন্যাড়া মাথার প্রিয়ঙ্কাই হোক বা অন্তঃসত্ত্বা বিদ্যা কাউকে যে এ রকম চেহারায় দারুণ সুন্দর লাগছে, এমন কিন্তু নয়।

কিন্তু ইদানীং মূলধারার বলিউড ছবিতেও নিজেদের ভেঙেচুরে অন্য রকম করে পেশ করার দিকেই ঝুঁকছেন নায়িকারা। প্রিয়ঙ্কা তো বলেইছেন যে, ‘মেরি কম’ ছবির শু্যটিংয়ের সময়ও তিনি ন্যাড়া মাথা নিয়েই সেটে ঘুরে বেড়াতেন। শু্যটিংয়ে জন্য তিন বার ন্যাড়া হয়েছিলেন তিনি। তবে তা বলে বাস্তবে চুল কামিয়ে দিতে হয়নি প্রিয়ঙ্কাকে। প্রস্থেটিক ব্যবহার করে ওই ন্যাড়া লুকটা তৈরি করেছিলেন তিনি। শুধু তাই নয়। মেরির লুকটার জন্য প্রিয়ঙ্কাকে গত বছর শু্যটিংয়ের সময় এক বার পেশি তৈরি করতে হয়েছিল। শু্যটিং শেষে আবার সেই লুক ঝরিয়ে ফেলতে হয়, কারণ প্রিয়ঙ্কার তখন অন্যান্য ছবির শু্যটিং ছিল। “এ বছর আরও একটা ফেজে শু্যটিং করেছিলাম আমরা। তখন আবার সেই চেহারা তৈরি করতে হয় ওকে। নায়িকা হয়ে এ ভাবে দু’বার নিজের লুকটা পাল্টানো চাট্টিখানি কথা নয়,” বলছেন পরিচালক ওমাং কুমার। এই অন্য রকম লুকগুলোই এখন ছবির ইউএসপি। ট্রেলারেও এগুলোকেই প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। সোশ্যাল নেটওয়ার্কে ঝড় উঠছে।

‘ববি জাসুস’-এর পরিচালক সমর শেখ বলছেন এই সবের কারণ হল বলিউডে কমার্শিয়াল আর প্যারালাল ছবির বিভেদ এখন ভেঙে গিয়েছে। “দর্শক পরিণত হয়েছে। নায়িকারা এখন হিরো। তাই তাঁরা ঝুঁকি নিতে ভয় পাচ্ছেন না।”

১৯৩৬ সালে ‘বোম্বাই কা বিল্লি’ ছবিতে আট রকম ছদ্মবেশ ধরে অভিনয় করেছিলেন রুবি মেয়ার্স। সেটা আবার ছিল ১৯২৭ সালের একটি নির্বাক ছবির রিমেক। ১৯৭৯-তে ভারতীয় অভিনেত্রী পের্সিস খাম্বাট্টা ন্যাড়া হয়ে ‘স্টার ট্রেক: দ্য মোশন পিকচার’য়ে অভিনয় করে সাড়া ফেলে দেন হলিউডে। অল্প বয়সে মারা গিয়েছিলেন পের্সিস। আজকের নায়িকারা হয়তো সেই রুবি বা পের্সিসের দেখানো পথেই হাঁটতে শুরু করেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE