বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে নিয়ে লেখায় বাদশা মৈত্র। গ্রাফিক্স: শৌভিক দেবনাথ।
ব্যক্তি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে দেখার সুযোগ আমার খুব বেশি হয়নি। ফলে, ওঁর এই দিক আমার কাছে অনাবিষ্কৃত। আমার কাছে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মানে পশ্চিমবঙ্গের তরুণ প্রজন্মকে সামনে এগিয়ে দেওয়ার আর একটি নাম। এই ক্ষেত্রে ওঁর সৎ এবং আন্তরিক প্রচেষ্টা আজীবন স্মরণ করার মতো। যদিও রাজ্যবাসী সেটা বুঝতে পারেনি। আমার মতে, এই না বুঝতে পারাটা রাজ্যের জন্য বড় ক্ষতি।
আমার বরাবরের বিশ্বাস, রাজনীতিতে সৎ, সংবেদনশীল মানুষেরই আসা উচিত। কারণ, এই গুণগুলি খুবই বিরল। কিন্তু এই মুহূর্তে রাজনীতির সংজ্ঞা বদলে গিয়েছে। তাই এখনকার রাজনীতিতে এই ধরনের মানুষদের জায়গা নেই। বুদ্ধবাবুকে নিয়ে আমার ব্যক্তিগত স্মৃতি যখন জমা হল, তখন আর উনি মুখ্যমন্ত্রী নেই। সেই সময় নন্দীগ্রাম-সিঙ্গুর আন্দোলন নিয়ে একটা লেখার অনুরোধ এসেছিল। আমি নিজে গিয়ে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম ঘুরে আসার পর ওঁকে অনুরোধ জানাই, বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় বসব। এক কথায় রাজি হয়েছিলেন। সেই সময় মুখোমুখি বসে ওঁর থেকে শুনেছিলাম, কী ভাবে সদ্যপ্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যে শিল্পের জন্য টাটাদের এনেছিলেন। কী কারণে তারা চলে যেতে বাধ্য হল। উনি খুব খোলামনে বিষয়টির খুঁটিনাটি তুলে ধরেছিলেন। সেই সময় বুদ্ধবাবুর প্রত্যেকটি কথা থেকে আক্ষেপ ঝরে পড়েছিল।
আজ আরও একটা কথা মনে পড়ছে। এক বার নির্বাচনের আগে, শিল্পী-সাহিত্যিকদের নিয়ে বুদ্ধবাবু বৈঠক ডেকেছিলেন। অনেকে এসেছিলেন। অনেকে আসতে পারেননি। তেমনই এক অনুপস্থিত সাহিত্যিক একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন তাঁকে। পরে জেনেছি, সেই চিঠিতে তিনি বিরোধী নেত্রী সম্বন্ধে যাচ্ছেতাই ভাবে কটু কথা লিখেছিলেন। বুদ্ধবাবুর সংবেদনশীল মন চিঠির সেই অংশ পড়ায় বোধহয় বাধা দিয়েছিল। সে দিন তিনি কোনও কুৎসা পাঠ করেননি। কটু কথার অংশটুকু না পড়ে জানিয়েছিলেন, ওই অংশ কোনও দিনই তিনি সকলের সামনে পাঠ করবেন না। এই সভ্য আচরণ ক’জন দেখাতে পারেন?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy