আমার দীর্ঘ দিনের বন্ধু ধর্মেন্দ্র চলে গেল। সোমবার একটু বেলায় খবরটা এল। কারণ, দেওল পরিবারের তরফে খবরটা শুরুতে প্রকাশ করা হয়নি। আমি যখন শ্মশানে পৌঁছলাম, তখন ধরমের অন্ত্যেষ্টি প্রায় শেষের দিকে। সেই মহূর্তে দাঁড়িয়ে ধরমের সঙ্গে আমার কাটানো অজস্র স্মৃতি মনের মধ্যে ভিড় করছিল।
আরও পড়ুন:
শ্মশানে সানি, ববিদের সঙ্গে দেখা হল। আমাকে জড়িয়ে ধরে ওরা দু’জনেই হাউ হাউ করে কেঁদে ফেলল। কারণ, আমি তো ওদের অল্প বয়স থেকে দেখেছি। সানি বলল, ‘‘‘ইস পার জ়োর নহি’ ছবির শুটিংয়ে গোয়ায় বাবার সঙ্গে আমিও গিয়েছিলাম। আপনার নিশ্চয়ই মনে আছে।’’ আবার এক বার ধর্মেন্দ্রকে ছবির গল্প শোনাতে গিয়েছিলাম। সামনে ছিল ববি। সেই ঘটনাও আমাকে জানাল ববি।
পঞ্জাবের এক গ্রাম থেকে এসে হিন্দি ছবিতে রাজত্ব করার আখ্যান ধর্মেন্দ্রকে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। ও তো দিলীপ কুমারকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে এসেছিল। ধর্মেন্দ্র আর আমি এক বছর আগে-পরে হয়তো অভিনয় করতে আসি। অল্প সময়ের মধ্যেই আমাদের মধ্যে বন্ধুত্ব তৈরি হয়। একসঙ্গে প্রায় ৬-৭টা ছবিতে কাজ করেছি। ও আমার পরিচালনায় ছবিও করেছে। আমাকে বলত, ‘‘বিশু, আমি তো ক্ষেতে লাঙল চালাতাম। আমাকে স্টার বানিয়েছে দেশের মানুষ।’’
আমি আর ধর্মেন্দ্র ছিলাম এক থালার বন্ধু। একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া, এক ঘরে ঘুমোনো— অভিজ্ঞতা বলে শেষ করতে পারব না। শুটিংয়ের পর ধরমের ফার্মহাউজ়ে একসঙ্গে ব্যাডমিন্টন খেলেছি। শুটিংয়ের সময়ে গরমকালে ওর বাড়ি থেকে ছাস আসত। আর ধরম বলত, ‘‘দাও, বিশুকেও দাও।’’ দু’জনে ভাগ করে খেতাম।‘’
‘ইশ্ক পর জ়োর নহি’ ছবির একটি দৃশ্যে ধর্মেন্দ্র এবং বিশ্বজিৎ(ডান দিকে)। ছবি: সংগৃহীত।
ধর্মেন্দ্র খোলা মনের মানুষ ছিল। সোজা কথা বলতে ভালবাসত। ওর মনের কথা আমার সঙ্গে ভাগ করে নিতে পছন্দ করত। রোম্যান্টিক মানুষ ছিল। টুকটাক সম্পর্কেও জড়িয়েছে। কিন্তু হেমা ওর জীবনে আসার পর ধরমের জীবনটাই বদলে যায়। ধর্মেন্দ্র-হেমার প্রেম তো আমার চোখের সামনেই পরিণতি পেল। ‘কহতে হ্যায় মুঝকো রাজা’ ছবিতে তো আমি ধর্মেন্দ্র-হেমাকে নির্বাচন করেছিলাম। তখনও ওদের প্রেম দেখেছি। হেমাকে প্রচণ্ড ভালবাসত ধরম।
কথা দিয়ে কথা রাখত ধর্মেন্দ্র। উত্তরবঙ্গে বন্যার ত্রাণ সংগ্রহের জন্য কলকাতায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলাম। আমার এককথায় ধর্মেন্দ্র সেখানে উপস্থিত হয়। অনুষ্ঠানের দিন ও আসতে পারবে কি না, তা নিয়ে বাকি শিল্পীদের মধ্যে গুঞ্জন তুঙ্গে। ধরম বলল, ‘‘আমি এক জন জাট। যদি আমার লাশ না পড়ে, তা হলে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকব!’’ কথা রেখেছিল আমার বন্ধু।
ধরমের শেষকৃত্যের পর হেমা (হেমা মালিনী)-র বাড়িতে গিয়েছিলাম। অনেক কথা হল। কন্যা এষা ছাড়াও ওর সঙ্গে অভয় দেওল ছিল। জামাইরাও তত ক্ষণে পৌঁছে গিয়েছিলেন। সায়রা বানো, মধুও এসেছিল। ওদের সঙ্গে কথা হল। হেমাকে দেখলাম, বেশ সামলে নিয়েছে। আমাকে দেখেই বলল, ‘‘আপনার বন্ধু চলে গেল!’’
কারও মৃত্যুর খবর রটে গেলে শুনেছি, তার আয়ু আরও বেড়ে যায়। ধরম যখন হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরল, তখনও ওর খবর নিয়েছি। ৮ ডিসেম্বর ওর জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানাতে বাড়ি যাব ভেবেছিলাম। আমার পরিচালিত ‘অগ্নিযুগ: দ্য ফায়ার’ ছবিতে ওর অংশের শুটিং শেষ করে গিয়েছে ধরম। ছবিতে ও পঞ্জাব কেশরী লালা লজপত রাইয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছিল। ধর্মেন্দ্রের সহকারী জয়রাজের সঙ্গে আমি নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছিলাম। খবর নিতাম। কিন্তু আজকের সকালটা অন্য রকম ছিল। ধরম চলে গেল।
(সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে অনুলিখিত।)