নিকষ কালো জর্জেট। তাতে ছোট্ট ছোট্ট সাদা ফুল। কালো হাতাকাটা ব্রালেট কাটের ব্লাউজ়। উপর দিয়ে সাবেক আমলের ব্রাকেটি। বুকের মধ্যিখানে আলগোছে সরু ভাঁজের আঁচল। একটু নড়চড় হলেই বক্ষবিভাজিকা প্রকাশ্যে। চুলের ভাঁজে রক্তজবা।
পাপিয়া অধিকারী। সেই কবে চলে গিয়েছে ১৯৮৮! তাঁর গা থেকে ‘দেবীবরণ’ ছবির সেই জনপ্রিয় গান ‘বিবি পায়রা’র তকমা সরলো কই?
কালীপুজোর ফ্যাশনে পাপিয়া অধিকারী। ছবি: সংগৃহীত।
অভিনেত্রী তথা বিরোধী দলের রাজনীতিবিদ সদ্য সেই আমেজ নতুন করে ফিরিয়ে আনলেন। এ বছরের কালীপুজোয় পোশাকপরিকল্পক রাইকিশোরী কৃষ্ণকলির পোশাকে সেজে। রাইকিশোরীও আনন্দবাজার ডট কমকে বললেন, “ওঁর এই বয়সে এখনও এত প্রাণপ্রাচুর্য, ভাবা যায় না! ওঁকে দেখেই মনে হয়েছিল, আশির দশকের ‘বিবি পায়রা’কে ফিরিয়ে আনলে কেমন হয়?” যেমন ভাবা তেমনই সাজ। এক কথায় রাজি অভিনেত্রীও। ক্যামেরার সামনে এই বয়সেও বিপজ্জনক ভঙ্গিতে দাঁড়াতে কোনও দ্বিধা নেই তাঁর!
পাপিয়া জোরে হাসতে হাসতে বললেন, “এই বয়সেও পাপিয়া অধিকারীর বক্ষভাঁজ দেখা যাচ্ছে! এর থেকে মুখরোচক আলোচনা আর কী হতে পারে?” নিজের কথার পক্ষে পাল্টা যুক্তিও দিয়েছেন। তাঁর কাছে বয়স সংখ্যামাত্র।
সাহসী পাপিয়া অধিকারী! ছবি: সংগৃহীত।
পোশাকপরিকল্পও যে তেমনটাই ভাবেন তার জন্য কৃতজ্ঞ তিনি। পাপিয়ার কথায়, “একটা সময় বহু বিজ্ঞাপনের মুখ ছিলাম। শ্রীকান্ত গুহঠাকুরতার পরিচালনায় ‘দেবীবরণ’ ছবির ওই গান আমার পেশাজীবনে বাড়তি অক্সিজেন জুগিয়েছিল। আশা ভোঁসলের কণ্ঠে, বাপ্পি লাহিড়ির সুরে গানটা এখনও পুজোর মণ্ডপে বাজে। সাফল্যের সেই রেশ যদি এখনও আমায় জড়িয়ে থাকে, থাকুক না!”
কালীপুজো শুধুই আলোর উদ্যাপন, না কি শক্তির আরাধনা? পাপিয়া কী ভাবে দীপাবলিকে দেখেন?
প্রশ্ন শুনে পলকে পিছু হাঁটলেন তিনি। জানালেন, ঘোর বৈষ্ণব তাঁরা। বাড়িতে রাধা-কৃষ্ণের নিত্যপুজো। একবার তিনি একটি কালীমূর্তি উপহার পেয়েছিলেন। তাঁর মা কল্যাণী অধিকারী নিজের বাড়িতে সেই মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন। “সেই থেকে আমাদের বাড়িতে দেবীর পুজো শুরু। এখন বড় মন্দির করেছি। সেখানে শিবমূর্তির সঙ্গে দেবীর অধিষ্ঠান।” কত লোক আসে পুজো দিতে। মানত করে যান। প্রার্থনা সফল হলে দেবীকে সাজিয়ে দিয়ে যান তাঁরা। কখনও সোনার চোখ দিয়ে। কখনও সোনার হারে।”
চেনা ভঙ্গিতে পাপিয়া অধিকারী। পোশাক এবং রূপসজ্জা: রাইকিশোরী কৃষ্ণকলি। ছবি: সোম। সহযোগিতায়: মৌসুমী পায়েল।
তেমনই একটি ঘটনা ভাগ করে নিলেন পাপিয়া। “আমার পরিচিত এক মহিলার সন্তান কিছুতেই পরীক্ষায় পাশ করছে না। তিন বার এক শ্রেণিতে থাকার পর মেয়েটি আমাদের মন্দিরে মায়ের কাছে মানত করল। পরের বছর তৃতীয় হয়ে পাশ করল তার মেয়ে!”
কালীপুজো পাপিয়ার জীবনে আরও অনেক কারণে অর্থবহ। বাবার ব্যবসা পড়ে গিয়েছিল। তাঁর মা একা হাতে লড়াই করে বড় করেছেন অভিনেত্রীদের। “আমার মায়ের লড়াই তাই আমাদের মধ্যেও থেকে গিয়েছে।” বলতে বলতে বড় করে শ্বাস নিলেন। সপাট বললেন, “একটা সময় পুজো উদ্বোধন করতে করতে দম ফেলার ফুরসত পেতাম না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৌজন্যে কবে থেকে সে সব বন্ধ! কাঁচি পড়েছে পেশাজীবনেও। এ বছরেও কালীপুজোর কয়েকটি উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ডেকেছিলেন উদ্যোক্তারা। পরে নিজেরাই বাদ দিয়ে দিলেন!” তবু তিনি হারেননি, দাবি অভিনেত্রী। কালীপুজো তাই তাঁর কাছে শক্তি আরাধনার আর এক নাম।