Advertisement
E-Paper

‘জয় আমার জীবনের প্রথম পুরুষ, প্রথম প্রেম! কী করে ভুলে যাই বলুন তো?’ কান্নায় ভেঙে পড়লেন প্রথম স্ত্রী

‘‘জয়ের হই হই করে বাঁচার ধরন আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। আমার কলেজবেলার ‘ক্রাশ’। ভেসে গিয়েছিলাম ওর প্রেমে।’’

অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০২৫ ১৫:১২
শাসকদলের কাউন্সিলর অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্মৃতিতে জয় বন্দ্যোপাধ্যায়।

শাসকদলের কাউন্সিলর অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্মৃতিতে জয় বন্দ্যোপাধ্যায়। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

কয়েক বছর ধরে আমার পুজো ভাল কাটছে না। এক পুজোয় বাবাকে হারিয়েছি। এ বছর পুজোর আগে জয় চলে গেল! হয়তো এ বার প্যান্ডেলে ওর অভিনীত ছবির গান বাজবে। ১৫ অগস্ট থেকে ও হাসপাতালে। সে দিন থেকে আমিও কাজের ফাঁকে ফাঁকে হাসপাতালে গিয়েছি। ওর মা ও বাড়ির বাকিদের যা প্রয়োজন হয়েছে, পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। অনেক দিন ধরে অসুস্থ। ইদানীং অল্প কথা বললেই হাঁপিয়ে যেত। তবু ভেবেছিলাম, ফিরে আসবে। অদম্য প্রাণশক্তি ছিল তো।

জয়ের জীবনীশক্তি আকর্ষণ করেছিল আমাকে। তখন অভিনয় প্রায় ছেড়ে দিয়েছে। জনপ্রিয়তাও স্তিমিত। তার পরেও হই হই করে বাঁচত। আমি উত্তর কলকাতার মেয়ে। বাড়ির নিয়মকানুন প্রাচীনপন্থী। জয়ের হই হই করে বাঁচার ধরন আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। ভেসে গিয়েছিলাম জয়ের প্রেমে। আমার কলেজবেলার ‘ক্রাশ’ ছিল ও। আমার মা জয়ের ছবি একটা সময় নিয়মিত দেখত। জয়ের ছবির জনপ্রিয় গান শুনতে পছন্দ করত। মায়ের কাছে ওর অভিনয়ের কত গল্প শুনেছি! জাতীয় পুরস্কার পাওয়া এক অভিনেতা বিনোদন দুনিয়ায় হই হই করতে করতে এল। যত দিন ইন্ডাস্ট্রিতে ছিল, দাপটের সঙ্গে রাজত্ব করেছে। তার পর যেন কর্পূরের মতো উবে গেল। যাওয়ার পরেও একটা মিষ্টি গন্ধ ছড়িয়ে দিয়ে গেল। কর্পূর উবে গেলেও যেমন সুগন্ধ থাকে।

আমি নেতা বা অভিনেতা জয় নয়, মানুষ জয়ের সঙ্গে ঘর করেছি। ভীষণ রঙিন জীবন। নিজের শর্তে বরাবর বাঁচতে পছন্দ করা এক স্বাধীনচেতা মানুষ। বড়লোক ব্যবসায়ী ঘরের ছেলে। তার পরেও মাটিতে পা তার। মা-বাবাকে কী যে ভালবাসত! পূর্ণবয়স্ক এক পুরুষ ছেলেমানুষের মতো মা-বাবাকে আঁকড়ে থাকত। তার উপরে নিজেকে নিয়ে একেবারেই সচেতন ছিল না। অঙ্ক কষে বাঁচেনি জয়। ও জীবনের অঙ্ক কষতেই জানত না। কিন্তু ভীষণ ভাল কথা বলতে পারত। গুছিয়ে নিজের বক্তব্য বোঝাতে পারত। যে কোনও মানুষকে কথার জালে বন্দি করতে পারত। আমাকেও হয়তো এ ভাবেই বন্দি করেছিল।

২০০৯-২০১১ সাল। রাজনৈতিক পালাবদলের শুরু। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর মা-মাটি-মানুষকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য লড়ছেন। জয়ও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েছিল। ওর বক্তৃতা সকলে মন দিয়ে শুনত। তার পরেই হঠাৎ রাজনৈতিক মতাদর্শ বদল! ‘রাজনীতিবিদ’ জয় ‘অভিনেতা’ জয়ের থেকে অনেক আলাদা। ভীষণ চাঁছাছোলা, স্পষ্টবক্তা। এটা রাজনীতির অঙ্গ। সম্ভবত সেই কারণেই কারণে-অকারণে বিতর্কে জড়িয়েছে। যে মানুষটা নেই, তার এই দিকটা নিয়ে আজ কিচ্ছু বলার নেই। তবে এক এক সময় মনে হত, শুধু অভিনয় নিয়ে থাকলে বাংলা বিনোদন দুনিয়া অনেক ভাল ছবি উপহার পেত। পরিচালক নব্যেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের ‘চপার’ ছবিতে অভিনয় করে জাতীয় সম্মান অর্জন করেছিল।

তখন জয় মানে হয় সুখেন দাস, নয়তো অঞ্জন চৌধুরী। ‘অনন্যা’ ছবির ব্যর্থতা দেখে এই মানুষটাই অভিনয়ের উপর আগ্রহ হারিয়েছিল। বলত, ‘অপর্ণা সেনের ছেলের ভূমিকায় অভিনয় করলাম। নিজেকে নিংড়ে দিয়েছিলাম। দর্শক দেখলই না!’ তার পর কিশোরকুমারের মৃত্যু। জয় বলল, ‘আর আমার গান কে গাইবে?’ সেই সময় পুজোয় হিট ছবির গান বাজত। ১০টা কিশোরকুমারের গানের মধ্যে প্রথম দুটো জয় অভিনীত ছবির গান। সে সব নিয়ে আক্ষেপ ছিল ওর মনে। ইদানীং কেউ ফোন ধরতে চাইত না ওর, সে কথাও দুঃখ করে বলেছে। বিচ্ছেদের পরেও আমাদের কখনও সখনও দেখা হত, কথাও হত।

অনেকে জানতে চান, আমি কেন আর জয়ের মতো দ্বিতীয় সংসার পাতলাম না?

কী বলি! কাজের প্রচণ্ড চাপ। তার উপরে সম্পর্কের বাঁধনে জড়ানো মানে ‘প্রতিশ্রুতি’র দায়বদ্ধতা। আজ জয়ের মৃত্যুসংবাদ শুনে মনে হচ্ছে, কোথাও বুঝি জয়ও জড়িয়ে ছিল। কোনও মেয়ের জীবনের প্রথম পুরুষ, প্রথম প্রেম— থেকেই যায়। ওই যে বললাম, কর্পূরের সুগন্ধের মতো। জয়ের জন্মদিন ২৫ মে। চলে গেল ২৫ অগস্ট। তারিখগুলোয় কী অদ্ভুত মিল, না? আজ আমি থাকব ওর সঙ্গে। বরাবরের মতো চলে যাচ্ছে। আমার কাছ থেকে এই ‘বিদায়’টুকু বোধহয় ওর প্রাপ্য।

Joy Banerjee Ananya Banerjee
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy