‘সড়ক’ ছবিতে ‘মহারানি’র ভূমিকায় অন্য কাউকে রাখার কথা ভাবতে পারেননি পরিচালক মহেশ ভট্ট। তাঁকে ছাড়া বলিউডের খলনায়কের তালিকাটাও বোধহয় অসম্পূর্ণ থেকে যেত। দু’সপ্তাহ ধরে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করার পরে অবশেষে হার মানলেন বলিউডের সেই অন্যতম জনপ্রিয় খলনায়ক। সদাশিব অম্রপুরকর।
ফুসফুসে সংক্রমণ নিয়ে কোকিলাবেন ধীরুভাই অম্বানী হাসপাতালে গত ২৫ অক্টোবর থেকে ভর্তি ছিলেন সদাশিব। দিন কয়েক আগে ভেন্টিলেটরে রাখা হয়েছিল তাঁকে। কাল গভীর রাতে মারা যান তিনি। বয়স হয়েছিল ৬৪। তাঁর স্ত্রী ও তিন মেয়ে বর্তমান। আগামী কাল আহমেদ নগরে অম্রপুরকরের জন্মভিটেয় শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে তাঁর।
১৯৫০ সালে নাসিকে জন্ম অম্রপুরকরের। আসল নাম ছিল গণেশকুমার নারওড়ে। ১৯৭৪ সালে নিজেই নাম বদলে রাখেন সদাশিব অম্রপুরকর। তবে পরিবার পরিজন আর বন্ধু মহলে তাত্যে বলেই পরিচিত ছিলেন। চেয়েছিলেন গায়ক হতে। কিন্তু এক দিন গানের স্কুলে তাঁর গলার স্বর নিয়ে নানা কথা শুনতে হয়েছিল তাঁকে। তাই গায়ক হওয়ার স্বপ্ন ছেড়ে চলে যান থিয়েটারে অভিনয় করতে।
সেই শুরু। থিয়েটার থেকে মরাঠি ছবিতেও অভিনয় করতে শুরু করেন। কিন্তু হিন্দি ছবিতে প্রথম ব্রেক আসে পরিচালক গোবিন্দ নিহালনির সূত্রে। ‘অর্ধ সত্য’ ছবির জন্য এক জন নতুন খলনায়কের মুখ খুঁজছিলেন নিহালনি। থিয়েটারে সদাশিবের অভিনয় দেখে পছন্দ হয়ে যায় তাঁর। পরিচালক তখনই মনস্থির করে ফেলেন, নিজের পরবর্তী ছবিতে সদাশিবকে দিয়েই কাজ করাবেন তিনি। ওম পুরি আর স্মিতা পাটিলের মতো অভিনেতারা থাকতেও খলনায়ক রামা শেট্টির ভূমিকায় সদাশিবের অভিনয় সকলের নজর কাড়ে। তার পর থেকে আশি আর নব্বই দশকের প্রচুর হিন্দি ছবিতে খলনায়কের ভূমিকায় দেখা গিয়েছে তাঁকে। কিছু ছবিতে কাজ করেছেন কমেডিয়ান হিসেবেও। ‘সড়ক’-এ বৃহন্নলা মহারানির ভূমিকায় অভিনয় করে ফিল্ম ফেয়ারও পান সদাশিব। ‘কাল চক্র’, ‘আঁখে’, ‘ইশ্ক’, ‘কুলি নম্বর ওয়ান’, ‘গুপ্ত’, ‘হাম সাথ সাথ হ্যায়’। তালিকা বেশ দীর্ঘ। বেশ কয়েকটি বাংলা ছবিতেও দেখা গিয়েছে তাঁকে। গত কয়েক বছর ধরে অবশ্য বলিউডের সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছিল তাঁর। ‘বম্বে টকিজ’ ছবিতে একটি ক্যামিও চরিত্রে শেষ দেখা গিয়েছিল তাঁকে। শেষের দিকে শুধু মরাঠি ছবিতেই কাজ করছিলেন।
তবে ছবি করা কমিয়ে দিলেও বিভিন্ন সামাজিক কাজকর্মে ব্যস্ত রাখতেন নিজেকে। হোলিতে জলের অপচয় নিয়ে সচেতনতা গড়ে তোলার চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। গত বছর মার্চে এই নিয়ে একটি প্রতিবাদ মিছিলে অংশ নিতে গিয়ে মারও খেতে হয়েছিল এই প্রবীণ অভিনেতাকে।
প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে অমিতাভ বচ্চন। সদাশিবের মৃত্যুতে টুইট করেছেন অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব। নরেন্দ্র মোদী আজ লিখেছেন, “আমরা সদাশিব অম্রপুরকে এক জন প্রতিভাবান অভিনেতা হিসেবে মনে রাখব। ওঁর পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা।” অমিতাভ বচ্চনও লিখেছেন, “কলকাতায় ঘুম ভাঙল সদাশিব অম্রপুরকরের মৃত্যুর দুঃখের খবর শুনে। এক জন সহকর্মী। এক জন প্রতিভা। প্রার্থনা।” কী বলেছেন সড়কের পরিচালক মহেশ ভট্ট? তাঁর স্মৃতিচারণা, “মহারানির চরিত্র সদাশিবকে শোনানোর পরে আমি বলে দিয়েছিলাম, দর্শক চরিত্রটা পছন্দ না-ও করতে পারে। কিন্তু ও তবু অফারটা নিয়েছিল। ও না থাকলে সড়ক হয়তো সত্যিই এত জনপ্রিয় হতো না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy