তারানাথ তখনও সংসারী। বৈরাগ্যের ভাব মনের মধ্যে দেখা দিচ্ছে। স্বপ্নে মাতু পাগলির আনাগোনা। সে জানে না, এই মাতু পাগলি কে? কেনই বা স্বপ্নে দেখা দিয়ে ডাকে তাকে? মনের এ রকম অবস্থা নিয়েই ধুনি জ্বেলে শ্মশানে মাঝেমধ্যে তপস্যায় বসতে দেখা যাচ্ছে তারানাথকে। এ রকমই একটি ছবি সম্প্রতি ভাগ করে নিয়েছেন অভিনেতা সপ্তর্ষি মৌলিক। আরও এক জনপ্রিয় তান্ত্রিক ‘ভাদুড়ি মশাই’য়ের স্মৃতি উস্কে দিয়ে সেই ছবি জানাচ্ছে, ছোট পর্দার পর বড় পর্দায় দেখা দেবে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনপ্রিয় এই চরিত্র। নামভূমিকায় সপ্তর্ষি স্বয়ং।
তিনটি গল্পের একটি আধারে কাকলি ঘোষ-অভিনব মুখোপাধ্যায়ের আগামী ছবি ‘ভূতপূর্ব’। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘মণিহারা’, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘তারানাথ তান্ত্রিক’ আর মনোজ সেনের ‘শিকার’ নিয়ে এই বাংলা অ্যান্থলজিটি। তারানাথ এই ছবির সূত্রধর বা কথক। অভিনয়ে সপ্তর্ষির সঙ্গে রয়েছেন সন্দীপ্তা সেন, রূপাঞ্জনা মিত্র, অভিজিৎ গুহ, বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী, সত্যম ভট্টাচার্য, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য-সহ এক ঝাঁক ভাল অভিনেতা।
পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের ভৌতিক সিরিজ় ‘পর্ণশবরীর শাপ’-এর দৌলতে তান্ত্রিক ভাদুড়িমশাই এখন দর্শকপ্রিয়। জনপ্রিয়তার নিরিখে দুই তান্ত্রিকের মধ্যে অদৃশ্য প্রতিযোগিতা তৈরি হতে পারে? আবার ছোট পর্দায় তারানাথ তান্ত্রিক হিসাবে জনপ্রিয় টোটা রায়চৌধুরী। তাঁর অভিনয়ের সঙ্গে সপ্তর্ষির অভিনয়ের তুলনাও কিন্তু টানতে পারেন দর্শক...?
অভিনেতার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে যোগাযোগ করেছিল আনন্দবাজার ডট কম। সপ্তর্ষি দুটো সম্ভাবনাই উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি পাল্টা যুক্তি দেখিয়েছেন, “দর্শক চাইলে আলোচনা করতেই পারেন। আবার ভালবেসে তুল্যমূল্য বিচার করার চেষ্টাও করতে পারেন। কিন্তু আমার মনে হয় সেটি হবে না।” তাঁর মতে, দুটো গল্পের বিষয় বা পটভূমিকা একেবারেই আলাদা। দ্বিতীয়ত, টোটা অভিনয় করেছিলেন পরিণত তারানাথ তান্ত্রিকের চরিত্রে। সপ্তর্ষি অভিনীত চরিত্রটি তারানাথের অল্প বয়সের, এমনটাই তাঁকে জানিয়েছেন পরিচালক। ফলে, বয়সের ব্যবধানও অনেক। অভিনেতার মতে, এই দিক থেকেও তুলনা টানার জায়গা নেই।
আরও পড়ুন:
তবে শ্মশানে বসে শুটিং করতে করতে তন্ত্রসাধনার সামান্যতম অনুভূতি অভিনেতার মধ্যে তৈরি হয়েছিল। সে কথা তিনি বলেছেন অকপটে। “সেটে বসে তপস্যার দৃশ্যে অভিনয় আর শ্মশান লাগোয়া কোনও জায়গায় বসে একই দৃশ্য করার মধ্যে অনেক ফারাক। সামনে ধুনি জ্বলছে। আমার গায়ে তান্ত্রিকের সাজ। বাতাসে দাপটে আগুনের ঝাপটা লাগছে চোখেমুখে। এ রকম আবহে শুটিং করলে দৃশ্য অনেক বেশি জীবন্ত হয়ে ওঠে।” পাশাপাশি, এই ধরনের চরিত্রও সপ্তর্ষি আগে করেননি। ফলে, তারানাথ তান্ত্রিক তাঁর জীবনে মনে রাখার মতো একটি কাজ হয়েই থাকবে।
গোয়েন্দা আর ভূত এখনও বিনোদনের বাণিজ্যের পালে টাটকা বাতাস। একটি ছবিতে তিনটি ভূতের গল্প প্রেক্ষাগৃহে দর্শক টানতে পারবে?
সপ্তর্ষি কিন্তু আশায় ভর করে রয়েছেন। কাজ করতে করতে তাঁর উপলব্ধি, “পরিচালক জুটি নতুন। পোড় খাওয়া অভিনেতাদের পাশাপাশি নতুনরাও আছেন। আর আছে গল্প বলার ভঙ্গি। যে কারণে চিত্রনাট্য পড়ে অভিনয়ে রাজি হই।” অভিনেতার দাবি, তাঁকে যদি ছবির বিষয়ভাবনা আকর্ষণ করতে পারে তা হলে দর্শকদেরও এই ছবি ভাল লাগবে।