পরিচালক ঋত্বিক ঘটকের শতবর্ষে যদি প্রশ্ন ওঠে, তাঁর সময়ে তুলনামূলক কম জনপ্রিয় এই পরিচালককে মনে রাখতে বাংলা বিনোদন দুনিয়া কী করেছে? টলিউড উদাহরণ দেবে, কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের ছবি ‘মেঘে ঢাকা তারা’। যদিও ছবিটি প্রয়াত পরিচালকের জীবনীছবি নয়। ঋত্বিকের জীবন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ছবিটি বানানো হয়েছিল। ১৪ মার্চ মুক্তি পাচ্ছে তাঁকে নিয়ে তৈরি আরও একটি ছবি ‘অলক্ষ্যে ঋত্বিক’। এই ছবি দিয়ে পরিচালক হিসাবে আত্মপ্রকাশ করবেন মিলন ভৌমিকের ছেলে শুভঙ্কর ভৌমিক। তাঁর দাবি, তিনি ঋত্বিকের জীবনীছবিই বানাচ্ছেন। নামভূমিকায় শিলাজিৎ মজুমদার।
গত বছর গায়ক-অভিনেতাকে দেখা গিয়েছে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘অযোগ্য’ ছবিতে। সেখানে তিনি প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে সমান্তরাল চরিত্রে অভিনয় করেছেন। দর্শক এবং সমালোচকের প্রশংসা পেয়েছে তাঁর অভিনয়। এ বার তিনি ‘ঋত্বিক ঘটক’। “সকলের আগে কপালের অনেকটা চুল চেঁছে, কামিয়ে তুলে দিয়েছিলাম। যাতে পরিচালকের সঙ্গে আমার চেহারায় সামান্যতম মিল পাওয়া যায়”, জবাবে আনন্দবাজার ডট কমকে এ কথা বললেন শিলাজিৎ। আরও অমিল আছে তাঁর। ঋত্বিক ঘটক কঙ্কালসার। গায়ক-অভিনেতা যথেষ্ট স্বাস্থ্যবান। মুখেচোখেও মিল নেই। অভিনয় একমাত্র হাতিয়ার তাঁর।
চ্যালেঞ্জটা নেবেন বলেই কি এত অমিল থাকা সত্ত্বেও এই চরিত্রে রাজি হলেন?

‘অলক্ষ্যে ঋত্বিক’ ছবির শুটিংয়ে শিলাজিৎ মজুমদার। ছবি: সংগৃহীত।
শিলাজিৎ অকপট, “ঋত্বিকবাবুর সঙ্গে আজীবন আমার নাম জুড়ে যাবে, এই ভাবনা থেকে রাজি হয়েছিলাম।” এত অমিল থাকা সত্ত্বেও পরিচালক কেন তাঁকেই বেছে নিলেন, সেটা অবশ্য তিনি জানেন না। শুরুতে অভিনেতাকে বলা হয়েছিল, প্রস্থেটিক মেকআপের সহযোগিতা নেওয়া হবে। রূপটানশিল্পী তাঁর মুখের মাপজোক নিয়েছিলেন অনেক। প্রায় ৫-৬ ঘণ্টা বসে রূপটান নেওয়ার পর নিজেকে আয়নায় দেখে শিলাজি়তের মনে হয়ছিল, “কখনও আমি যেন অশোককুমারের মতো, কখনও সলিল চৌধুরী!” কিছুতেই ‘ঋত্বিক ঘটক’ হয়ে উঠতে পারছিলেন না। এ দিকে, চেহারার যদি একটুও পরিবর্তন না হয় তা হলে খ্যাতনামী পরিচালকের চরিত্রে অভিনয় করবেন কী করে? “তখনই নিজ দায়িত্বে কপালের চুল কামাই। নকল দাঁত লাগাই। আমার চেহারা বদলে যায় অনেকটা। আমিও ক্যামেরার সামনে স্বচ্ছন্দ।”
অভিনয় শুরুর আগে যতটা সম্ভব পড়াশোনা করেছিলেন। ঋত্বিক অভিনীত ছবি ‘যুক্তি তক্ক গপ্পো’, ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ দেখেছিলেন। বাকিটা নিজের মতো করে অভিনয়ের চেষ্টা করেছেন। তাঁর দাবি, “ওই চেষ্টাই সার। আদতে কিস্যু হয়নি।” শিলাজিতের বিপরীতে ‘সুরমা ঘটক’ পায়েল সরকার। ওঁকে কত নম্বর দেবেন? শুনে প্রবল হাসলেন গায়ক-অভিনেতা। বললেন, “ওরও আমার মতোই অবস্থা। কোনও দিক থেকে মিল নেই। পায়েলও ওর মতো করে চেষ্টা করেছে। তবে আমার থেকে ভাল করেছে।” তাঁর আরও মত, পায়েল যথেষ্ট অভিজ্ঞ অভিনেত্রী। এই ধরনের অভিনেতাদের সঙ্গে কাজ করার অনেক সুবিধে। এঁরা বাকিদের পরামর্শ দেন, ক্যামেরার অ্যাঙ্গেল বুঝিয়ে দেন।

জুটিতে পায়েল সরকার, শিলাজিৎ মজুমদার। ছবি: সংগৃহীত।
ছবিতে অভিনয়ের আগে কমলেশ্বরের ‘মেঘে ঢাকা তারা’ও দেখেছিলেন শিলাজিৎ। তাঁর কথায়, “সামান্য দেখেছি। অপু (শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়) কী ভাবে ঋত্বিক ঘটককে সামলেছে দেখার জন্য। বেশি দেখিনি, যদি ওর প্রভাবে প্রভাবান্বিত হয়ে পড়ি!” দেখার পর কি মনে মনে ঢোঁক গিলেছিলেন? ফের হাসলেন। শিলাজিৎ জানালেন, শাশ্বতের তুলনা তিনি নিজেই। তাঁকে বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা তাঁর নেই।
আরও পড়ুন:
সম্প্রতি, মৃণাল সেনের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের শ্রদ্ধার্ঘ্য ‘পদাতিক’। ছবিটি ভীষণ ভাল। কিন্তু বক্স অফিসে ব্যর্থ। ‘অলক্ষ্যে ঋত্বিক’ নিয়ে কী আশা শিলাজিতের? গায়ক-অভিনেতা স্বভাবজাত ভঙ্গিতে বললেন, “ঋত্বিকবাবু নিজের আমলেই ‘সেলেবল’ ছিলেন না! যদিও বিখ্যাত হওয়ার সমস্ত গুণ ওঁর ছিল। পরিচালক মুম্বই গিয়ে ‘মধুমতী’র মতো চিত্রনাট্য লিখেছিলেন। আরও অনেক কাজ করেছিলেন। পরিচালনায় ঝোঁক ছিল বলে সে দিকেই বেশি ঝুঁকেছিলেন।” সেই জায়গা থেকেই পর্দার ‘ঋত্বিক’-এর মত, “এমন একজনের জীবন নিয়ে তৈরি ছবি কি আদৌ বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে সফল হবে? জানি না। অভিনয় করার সময় ভাবিওনি।” শিলাজিতের হয়ে জবাব দিয়েছেন ছবির পরিচালক শুভঙ্কর। তাঁর দাবি, বাণিজ্য নয়, এই প্রজন্মের কাছে ঋত্বিক ঘটককে পৌঁছে দিতেই এই ছবি বানিয়েছেন তিনি।