Advertisement
E-Paper

‘চোখের বালি’র আদলে পোস্টার, নায়িকার নাম ‘তিতলি’! এক যুগ পরেও ঋতুপর্ণকে খুঁজছেন ইন্দ্রদীপ

মুখে ‘বাংলা ছবির পাশে দাঁড়ান’ স্লোগান। শ্বাস-প্রশ্বাসে আক্ষেপ, ইশশ্! ঋতুপর্ণ যদি থাকতেন, বাংলা বিনোদন দুনিয়া বেঁচে যেত।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০২৫ ২১:৩১
‘গৃহপ্রবেশ’ ছবির পোস্টার, ট্রেলারমুক্তি অনুষ্ঠান।

‘গৃহপ্রবেশ’ ছবির পোস্টার, ট্রেলারমুক্তি অনুষ্ঠান। নিজস্ব চিত্র।

সকাল থেকে আকাশ মেঘলা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মেঘ নিংড়ে দমকে দমকে বৃষ্টি। বাংলা বিনোদন দুনিয়াও একই ভাবে ভারাক্রান্ত? ১২ বছর পরেও! এই ১২টা বছরে বাংলা ছবি, ধারাবাহিক কতটা এগিয়েছে? সারা বছর ‘বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে’ দশা হলেও ৩০ মে বুঝি টলিউডের ‘স্বীকারোক্তি দিবস’। এ দিন ঋতুপর্ণ ঘোষের মৃত্যুবার্ষিকী। এ দিন তাঁকে নতুন করে খুঁজে দেখার দিন। আর মাইকে জোর গলায় বলার দিন, “ঋতুদা, তোমায় খুব প্রয়োজন গো! বাংলা ছবিকে একমাত্র তুমিই বাঁচাতে পারবে।”

উপলক্ষ, ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তের ঋতুপর্ণ ঘোষ স্মরণে তৈরি ছবি ‘গৃহপ্রবেশ’-এর ট্রেলার মুক্তি। প্রযোজনায় ক্যালাইডোস্কোপ সংস্থার কর্ণধার সমীরণ দাস। এক ঘর সাংবাদিকের সামনে পরিচালকের স্বীকারোক্তি, “ওঁকে ছাড়া থাকতে পারি না। তাই ঋতুদার খোঁজে এই ছবি বানানো। ছবির মধ্যে যদি হারিয়ে ফেলা পরিচালককে খুঁজি পাই।” ইন্দ্রদীপ স্বীকারোক্তি শুরু করতেই শ্রীকান্ত মোহতা, মহেন্দ্র সোনি, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, রাজ চক্রবর্তী, শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়, রুদ্রনীল ঘোষ, ‌আবীর চট্টোপাধ্যায়, জিতু কমল, সোহিনী সেনগুপ্ত, স্নেহা চট্টোপাধ্যায় এবং প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় অনর্গল। প্রত্যেকে লজ্জা সরিয়ে মুক্তকণ্ঠে বললেন, “ঋতুপর্ণের একটা ভাল চিত্রনাট্য, ভাল চরিত্র, ভাল ছবি, ভাল পরিচালনা, ভাল অভিনয় বাঁচিয়ে দিতে পারে বাংলা বিনোদন দুনিয়াকে।”

ইন্দ্রদীপ তাঁর আগামী ছবিতে নানা ভাবে খুঁজেছেন প্রয়াত পরিচালককে। ‘চোখের বালি’র আদলে ‘গৃহপ্রবেশ’-এর পোস্টার বানিয়েছেন। নায়িকার নাম ‘তিতলি’। এই নামে ঋতুপর্ণার বিখ্যাত ছবি রয়েছে। দুর্গাপুজোর আবহে গল্পের পটভূমিকা। যেন প্রয়াত পরিচালকের ‘উৎসব’-এর গন্ধমাখা! সে কথা বলতে বলতে গলা ধরে এসেছে ইন্দ্রদীপের। ছবির নাম যদিও শুরুতে রেখেছিলেন ‘মেঘপিওন’। এক স্বামী পরিত্যক্ত নারী বৃদ্ধ শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে দিন কাটায়। তার জীবনে দামাল হাওয়া হয়ে এক চিকিৎসকের আগমন। ভালবাসা যখন গাঢ় তখনই প্রশ্ন তোলে তার পরিবার, স্বামী থাকতেও নতুন জীবন বেছে নেওয়া আদৌ উচিত ‘তিতলি’র? নামভূমিকায় শুভশ্রী। তাঁকে ঘিরেই গল্প আবর্তিত। শুভশ্রীর জীবনে টাটকা অক্সিজ়েন জিতু। বান্ধবী স্নেহা। শ্বশুর-শাশুড়ি কৌশিক, সোহিনী। পরিবারের অন্যতম সদস্য রুদ্রনীল। ইন্দ্রদীপ এই ছবির পরিচালক, কাহিনীকার, সুরকার। চিত্রনাট্য, সংলাপ লিখেছেন সম্রাজ্ঞী বন্দ্যোপাধ্যায়।

ঋতুপর্ণ ঘোষ স্মরণে প্রযোজক শ্রীকান্ত মোহতা।

ঋতুপর্ণ ঘোষ স্মরণে প্রযোজক শ্রীকান্ত মোহতা। ছবি: সংগৃহীত।

ট্রেলারমুক্তির আগে-পরে ঋতু-কথা। শ্রীভেঙ্কটেশ ফিল্মসের দুই কর্ণধারের অন্যতম মহেন্দ্র সোনির কথায়, “হিট হচ্ছে ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’-সহ একের পর এক ছবি। ঋতুদার ফোন, ‘শুধুই এই ছবি বানালে হবে? ভাল ছবি বানাতে হবে তো?’ তার পরেই তৈরি হল ‘চোখের বালি’।” মহেন্দ্রর মতে, ঋতুপর্ণ বেঁচে থাকলে এখন নেটফ্লিক্স যে মানের সিরিজ়-ছবি দেখাচ্ছে তা বহু আগেই বানিয়ে ফেলতেন! কৌশিকদা মনে করলেন তাঁর ‘আরেকটি প্রেমের গল্প’-এর শুটিংয়ের গল্প। “ঋতুদা যখন নারীর রূপ ধরতেন তখনই প্রশ্ন থাকত, ‘আমায় রেখার মতো দেখাচ্ছে? না কি ‘মৌসুমীর মতো রে?’ আমরা বলতাম, রেখার মতো, রেখার মতো।” যে দিন নারীরূপে সেজে ঋতুপর্ণ ক্যামেরার সামনে এসেছিলেন সে দিন কৌশিক থেকে উপস্থিত প্রত্যেকে বাক্‌রুদ্ধ! ভীষণ সুন্দর দেখিয়েছিল প্রয়াত পরিচালককে! শট দিয়ে নিজের সাজঘরে ঋতুপর্ণ। হঠাৎ সেখানে ডাক পড়ল কৌশিকের। দুরু দুরু বক্ষে ছবির পরিচালক উপস্থিত। ভাবছেন, নির্ঘাৎ বকবেন কারণে বা অকারণে। তা নয়! হাপুস নয়নে কাঁদছেন ঋতুপর্ণ। কান্না মুছতে গিয়ে টিস্যু পেপার মুখে-চোখে আটকে। কোনও মতে চোখের জল সামলে তিনি ডুকরে উঠেছিলেন, “মেয়েটা চলে গেল রে কৌশিক! কিছুতেই ধরে রাখতে পারলাম না!” ঋতুপর্ণ যে অন্তরে রাধা ছিলেন।

রাজ জানিয়েছেন, কী ভাবে তাঁর টেলিফিল্ম ‘এক ছুট’ প্রযোজনা করেছিলেন প্রসেনজিৎ। তাঁকে খবর দিয়েছিলেন ঋতুপর্ণ। আবার সেই তিনিই রাজের ‘চ্যালেঞ্জ’ ছবির ‘কৃষ্ণ করলে লীলা, আমরা করলে বিলা’ গানকে সমর্থন জানিয়ে বিতর্কের মুখে ঝামা ঘষে দিয়েছিলেন পরিচালক। আবীরের আক্ষেপ, তিনি একটা ছবিও ঋতুপর্ণের পরিচালনায় করতে পারেননি। সান্ত্বনা, “অঞ্জন দত্ত পরিচালিত ‘ব্যোমকেশ’ ছবির শুটিংয়ের গোটা একটা দিন ঋতুদা সেটে ছিলেন। আমায় শাল নেওয়া শিখিয়েছিলেন।” প্রসঙ্গত, অঞ্জনের ‘ব্যোমকেশ’-এর আগে ঋতুপর্ণ ঘোষণা করেছিলেন, তিনি এই গোয়েন্দাকে নিয়ে ছবি বানাবেন। মুখ্য ভূমিকায় প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। অ়ঞ্জনের ছবি তাঁকে এতই প্রভাবিত করেছিল যে, তিনি নিজের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন!

চোখের বালির পোস্টরমুক্তি।

চোখের বালির পোস্টরমুক্তি। নিজস্ব চিত্র।

অনুষ্ঠান শেষ ‘বুম্বাদা’র স্মৃতিচারণে। পেস্তা-সবুজ পাঞ্জাবি আর পাটিয়ালা পাজামা! বছর ষাটেকের ‘যুবক’ ফিরে গেলেন কয়েক দশক আগে। যখন উঠতে-বসতে তাঁর আর ঋতুর ঝগড়া! কাজে-অকাজে, কারণে-অকারণে। বরাবর তিনি মানাতেন প্রিয় পরিচালককে। সেই তিনিই প্রসেনজিতের বাড়িতে ‘নিষিদ্ধ’ যখন প্রথম সারির ম্যাগাজ়িনের সম্পাদক! অভিনেতা পরিচালককে সপাট বলেছিলেন, “তুই আমার রান্নাঘরে ঢুকে পড়িস। বসে খাওয়াদাওয়া করিস। আমার নাড়ি-নক্ষত্র জানিস। তুই আর আমার বাড়িতে ঢুকবি না! যদি পেশা বদলাস তা হলে আবার তোর জন্য দরজা খোলা।” ঋতুপর্ণও মেনেছিলেন। সম্পাদকের পদ ছেড়েই চলে গিয়েছিলেন টলিউডের ‘ইন্ডাস্ট্রি’র কাছে। বলেছিলেন, “আমি তো আর সম্পাদক নই। চল, তা হলে আবার ছবি, ধারাবাহিক বানাই।”

কথা দিয়ে বিনিসুতোর মালা গাঁথতে গাঁথতেই ‘গৃহপ্রবেশ’, ‘চোখের বালি’র পোস্টারমুক্তি। প্রত্যেকের উপলব্ধি, “সবাইকে বকাঝকা করতেন। সকলকে সিধে রাখতে বেত হাতে এ রকম কড়া হেডমাস্টার মশাইয়েরই খুব দরকার। ঋতুপর্ণ সেটাই ছিলেন।”

Indradeep Dasgupta Grihapravesh Rituparno Ghosh Movie Trailer
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy