Advertisement
E-Paper

শুধু রাজনীতি বা বিনোদনে কেন! বাঁচা বা লোক ঠকানোর তাগিদেও অনেকে অভিনয় করেন: শতাব্দী রায়

“আমি কেন, আজকের দিনে কেউই ‘আতঙ্ক ২’ বানাতে পারবেন না।"

কেমন আছেন অভিনেত্রী-সাংসদ শতাব্দী রায়?

কেমন আছেন অভিনেত্রী-সাংসদ শতাব্দী রায়? ছবি: ফেসবুক।

উপালি মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০২৫ ০৯:২২
Share
Save

অভিনয়ে ফিরতে এক যুগেরও বেশি সময় পার। মানুষ বদলে গিয়েছে। কাজ করার ভঙ্গি পাল্টেছে। এত বদল দেখে একটু কি বুক কেঁপেছিল তাঁর? মৈনাক ভৌমিকের ছবি ‘বাৎসরিক’ দিয়ে আবারও ক্যামেরার মুখোমুখি শতাব্দী রায়। এই প্রজন্মের সঙ্গে কাজ করে খুশি সাংসদ-অভিনেত্রী? আনন্দবাজার ডট কমের কাছে অকপট।

প্রশ্ন: শতাব্দী রায় কি নিয়মিত অভিনয়ে করবেন?

শতাব্দী: নিয়মিত কি না জানি না। যদি গল্প ভাল লাগে, চরিত্র পছন্দ হয় আগামী দিনে আবার হয়তো আমাকে দেখা যাবে। যেমন, মৈনাক ভৌমিকের ছবি ‘বাৎসরিক’ দিয়ে কয়েক যুগ পরে অভিনয়ে ফিরলাম। আমার সঙ্গে সময় ভাগ করে নেওয়াটাও একটা বড় ব্যাপার। আমার তো প্রচণ্ড কাজের চাপ।

প্রশ্ন: কেমন লাগল?

শতাব্দী: সব কিছুরই ধারা বদলে গিয়েছে। প্রযুক্তি পাল্টে গিয়েছে। মানুষের মধ্যেও বদল এসেছে। কাজ করার পদ্ধতিও আগের মতো নেই। তাই ভয়ে ভয়ে ছিলাম, কতটা মানিয়ে নিতে পারব। দুটো-তিনটে ক্যামেরায় কাজ করায় অভ্যস্ত নই। তার পরেও বলব, কাজ করে ভাল লেগেছে। একটানা কাজের পর ক্লান্তি চলে আসে। লম্বা বিরতির পর কাজে ফেরা মানে তাজা মন নিয়ে কাজে নামা। যেন নতুন করে ফিরলাম। কেমন কাজ করলাম সেটা দর্শকের উপরে ছেড়ে দিলাম।

প্রশ্ন: মৈনাকের ছবিতে কাজ করতে রাজি হলেন কেন?

শতাব্দী: এই প্রজন্মের ভাল পরিচালক বলে। মৈনাক ভাল ছবি বানায়— এই প্রশংসাও শুনেছি। তাতে ভরসা বেড়েছে। আর ছবির বিষয়। অন্য রকম চরিত্র। ভৌতিক আবার সম্পর্কের বুনোট— দুটো উপাদানই ছবিতে আছে। সব মিলিয়ে রাজি হয়ে গেলাম।

প্রশ্ন: আমরা কী ভাবে আপনাকে দেখব?

শতাব্দী: ছবিতে এক সদ্য স্বামীহারা স্ত্রীর গল্প বলা হয়েছে। সে আর তার ননদ এক বাড়িতে থাকে। এই ননদের ভূমিকায় আমি। গল্প যত এগোবে ভাইয়ের বৌ আর ননদের সম্পর্কের নানা দিক প্রকাশ্যে আসবে। আপাতত এর বেশি কিছু বলব না।

‘বাৎসরিক’ ছবির একটি দৃশ্যে শতাব্দী রায়।

‘বাৎসরিক’ ছবির একটি দৃশ্যে শতাব্দী রায়। ছবি: সংগৃহীত।

প্রশ্ন: বাস্তবে শতাব্দী ‘রায়বাঘিনি ননদিনী’?

শতাব্দী: না না! একেবারেই নয়। আমার একজন দাদা, শারণ্য রায়। বৌদি সঙ্গীতা বলে, আমি ওর খুব ভাল বন্ধু। ওকে ব্যবসা করতে উৎসাহ দিয়েছি। আবার তুতো ভাইয়ের বৌরাও আমায় পছন্দ করে। আমাদের মেয়েদের একটা গ্রুপ আছে। সেই গ্রুপে শুধু বোনেরা নয়, বৌদিরাও আছে। আমরা একসঙ্গে সকলে মিলে ঘুরতে যাই। টিপিক্যাল ননদ-বৌদির সম্পর্ক আমাদের মধ্যে নেই।

প্রশ্ন: কাজের পদ্ধতিগত পরিবর্তনের সঙ্গে গল্প বলার ধারাও বদলেছে। আপনার সময়ের মতো নিটোল পারিবারিক গল্প নিয়ে ছবি খুব কম হয়...

শতাব্দী: দিন বদলেছে। সময় বদলেছে। মানুষের হাতে এত সময়ও নেই যে ধৈর্য ধরে আগের মতো বসে বসে ছবি দেখবেন। তা ছাড়া, মানুষ নতুনত্বের পূজারি। নতুন কিছু না পেলে সে-ই বা কেন প্রেক্ষাগৃহে পা রাখবে! যুগের সঙ্গে, সময়ের সঙ্গে নিজেকে বদলাতে হবে। তবে দর্শক ছবি দেখবেন। খেয়াল করে দেখুন, হিন্দিতে, বাংলায় এখনও কিন্তু সম্পর্কের গল্প, পারিবারিক গল্প দেখানো হয়, ভিন্ন মোড়কে। বদলাতে আপনাকে হবেই। পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে।

প্রশ্ন: অ্যাসিড টেস্টের মধ্যে দিয়ে তো বাংলা ছবি যাচ্ছে, যে সাফল্য আসার কথা সেটি আসছে কই!

শতাব্দী: বাংলা ছবিও চেষ্টা করছে অন্য রকম ছবি করার, ভিন্ন স্বাদের গল্প বলার। কিন্তু টলিউডে যে অনেক সমস্যা! বাজেট একটা বড় ব্যাপার। এখানে কম বাজেটের ছবির উপরে জোর দেওয়া হয়। প্রেক্ষাগৃহের সংখ্যা অনেক কমে গিয়েছে। কম খরচে ভাল প্রযুক্তির ছবি তৈরি অনেক বড় লড়াই। সেই লড়াইও জিততে চেষ্টা করছেন তাঁরা। আমার কানে খবর আসে। এর পরেও কী করে বলব যে টলিউড চেষ্টা করছে না? দর্শকও যে পুরোপুরি মুখ ফিরিয়েছে, সেটাও নয়। আমি তো মনে করি এটা আমাদের জন্য ইতিবাচক দিক।

প্রশ্ন: এই প্রজন্মের অভিনেতাদের নিয়েও কি একই ভাবে আশাবাদী? ওঁরা আপনাদের মতো পরিশ্রমী?

শতাব্দী: ওরা ওদের মতো। আমাদের থেকে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী। অনেক বেশি আত্মনির্ভরশীল। বেশ কিছু ক্ষেত্রে ওরা আমাদের থেকেও বেশি জানে। সেই সমস্ত ওদের কাজে ছায়া ফেলে। ভাল বা মন্দ— যেটাই করে, আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে করে। এটা প্রশংসা করার মতো।

প্রশ্ন: বর্তমান সামাজিক পরিস্থিতি দেখে মনে হয়, ‘আতঙ্ক ২’ তৈরির উপযুক্ত সময়, আপনি সিক্যুয়েল বানাবেন?

শতাব্দী: তপন সিংহের জুতোয় পা গলাব! এত স্পর্ধা, সাহস— কোনওটাই আমার নেই। তপনদা বলেই ওই ছবি তৈরি করতে পেরেছিলেন। আমি কেন, আজকের দিনে কেউই ‘আতঙ্ক ২’ বানাতে পারবেন না।

প্রশ্ন: আপনি যখন রাজনীতিতে তখনও পুরোদমে অভিনয় করছেন, সে সব ছেড়ে কেন...

শতাব্দী: (আগেভাগে থামিয়ে দিয়ে) আজ থাক না। এই গল্প আর একদিন।

প্রশ্ন: ফেলে আসা দিন ডাকে? হইহই করতে করতে অভিনয়, ছবিমুক্তি, গ্ল্যামার...

শতাব্দী: আমার শতাব্দী রায় হয়ে ওঠার মাধ্যম তো ওই জীবন। এখনও আমি আগে অভিনেত্রী। অভিনয় আমাকে সাধারণ মানুষের কাছে পরিচিতি, জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছে। কত অভিজ্ঞতা, ঘটনা জমে আছে। সে সব ভোলা যায় কখনও?

প্রশ্ন: ছোট পর্দা, ওয়েব প্ল্যাটফর্ম— এখন সিনেমা ছাড়াও অনেক মাধ্যম। পরিচালনা করতে ইচ্ছা করে না?

শতাব্দী: ওটা অনেক বড় বিষয়। প্রচুর সময় দিতে হবে। একটা সময় পরিচালনা করেছি তো। জানি, জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ— সব করতে হয়। অবশ্যই মাধ্যম অনেক। কিন্তু আমার হাতে যে সময় কম!

মৈনাক ভৌমিকের ছবিতে শতাব্দী রায়।

মৈনাক ভৌমিকের ছবিতে শতাব্দী রায়। ছবি: সংগৃহীত।

প্রশ্ন: রাজনীতিতে বেশি অভিনয় করতে হয় না কি বিনোদন দুনিয়ায়?

শতাব্দী: (নিজেকে গোছাতে একটু বেশিই যেন সময় নিলেন) করতেই হবে, এমন কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। যাঁরা মনে করেন অভিনয় করবেন তাঁরা করেন। (ফের একটু থেমে) রাজনীতি বা বিনোদন দুনিয়ার বাইরের অনেকেও তো অভিনয় করেন। সম্পর্কে অভিনয় করেন। বাঁচার তাগিদে, ঠকানোর তাগিদে, ভাল থাকার তাগিদে, কাউকে খারাপ রাখার তাগিদে অভিনয় করেন। শুধু রাজনীতি বা বিনোদন দুনিয়ার মানুষদের কাঠগড়ায় দাঁড় করাবেন না। রোজই আমাদের কোনও না কোনও কারণে অভিনয় করতেই হয় (হাসি)। এই প্রসঙ্গে আমার এক ভক্তের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে।

প্রশ্ন: বলুন না...

শতাব্দী: এক অনুরাগী প্রশ্ন করেছিলেন, ‘অভিনয়ের বাইরে কী করেন?’ আমি আমার লেখা কবিতার পঙ্‌ক্তি ধার নিয়ে বলেছিলাম, ‘অভিনয় করি না’।

প্রশ্ন: শতাব্দী রায় এখনও কবিতা লেখেন?

শতাব্দী: নিয়মিত হয় না। সারা দিনের পরে হয়তো ইচ্ছেও করে না। তার উপরে আমি খুবই কুঁড়ে। লিখছি, লিখব করতে করতে সময় পেরিয়ে যায়। আবার না লিখলেও মনখারাপ করে। যখন মন চায়, লিখি।

Satabdi Roy Mainak Bhaumik MP

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে আপনার সাবস্ক্রিপশন আপনাআপনি রিনিউ হয়ে যাবে

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।