Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Ajeeb Dastaans

নামকরণেই সার্থকতা

অজীব দাস্তানস

অজীব দাস্তানস ফাইল চিত্র

দীপান্বিতা মুখোপাধ্যায় ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২১ ০৬:৩৭
Share: Save:

নামের মধ্যে ‘অজীব’ থাকলেও, গল্পগুলো ততটা অজীব নয়। প্রতিটি কাহিনির কোনও না কোনও বাঁকে আমাদের চেনা বাস্তব উঁকি মারে। তা সত্ত্বেও ছবির নামকরণ সার্থক। কেন, তা জানতে হলে এই নেটফ্লিক্স অরিজিনালস দেখতে হবে।

অ্যান্থলজি ড্রামায় সব ক’টা কাহিনি একসূত্রে বাঁধা থাকে অথবা একটা থিমকে ভিত্তি করে তা গড়ে ওঠে। সেখানে কোনও গল্প জোর ধাক্কা দেয়, কোনওটা নেহাতই পানসে লাগে। সম্প্রতি ওটিটি প্ল্যাটফর্মে যে ক’টা অ্যান্থলজি ড্রামা এসেছে, তার কোনওটাই দর্শককে পুরোপুরি সন্তুষ্ট করতে পারেনি। সেই সব সিনেমার নিরিখে বিচার করলে ‘অজীব দাস্তানস’ আলাদা ছাপ ফেলে যায়। তার প্রধান কৃতিত্ব নীরজ ঘেওয়ানের ‘গিলি পুচি’র। শেষপাতের মিঠাইয়ের মতো ‘গিলি পুচি’কে আপাতত সরিয়ে রাখা যাক। ‘অজীব দাস্তানস’-এর প্রতিটি কাহিনির কেন্দ্রীয় চরিত্রে মহিলা। বিষয়গত যোগসূত্রও রয়েছে। বর্ণবৈষম্য, উচ্চবিত্ত বনাম নিম্নবিত্ত। আর প্রতিশোধ— কোথাও তা গায়ে কাঁটা দেয়, কোথাও ঠোঁটের রেখায় হাসি আঁকে!

প্রথম কাহিনি ‘মজনু’, পরিচালক শশাঙ্ক খৈতান। স্বার্থের কারণে মর্জিহীন বিয়েতে রাজি হয় বাবলু ভাইয়া (জয়দীপ অহলওয়াত)। বিত্তবান বাড়ির শৌখিন আসবাবের মতো স্ত্রী লিপাক্ষী (ফতিমা সানা শেখ) একাই গুমরোয়। পরকীয়া করে স্বামীর বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করলেও, জ্বালা জুড়োয় না তার। সেই জ্বালা দ্বিগুণ করে দিতে পরিচালক প্লটে নিয়ে আসেন হ্যান্ডসাম হাঙ্ক রাজকে (আরমান রলহান)। প্রেম-পরকীয়ার সোজা রাস্তায় হাঁটেনি শশাঙ্কের কাহিনি। পরপর টুইস্ট দিয়ে গিয়েছেন, যা হজম করতে খানিক সমস্যা হয়। জোলো ক্লাইম্যাক্সের জেরে অভিনেতাদের ভাল পারফরম্যান্সও ধোপে টেকেনি। আর ‘মির্জ়াপুর’ সিরিজ়ের পরে অন্য কোনও চরিত্রের নাম বাবলু ভাইয়া বোধহয় দেওয়াই উচিত নয়।

দ্বিতীয় কাহিনি ‘খিলোনা’, পরিচালক রাজ মেহতা। লোকের বাড়ি কাজ করে মীনল (নুসরত ভারুচা) নিজের আর ছোট বোন বিন্নির (ইনায়ত বর্মা) পেট চালায়। এলাকার ইস্ত্রিওয়ালা সুশীলের (অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়) সঙ্গে তার একটা সম্পর্কও রয়েছে। তবে প্রেম নয়, এ কাহিনি সমাজের দুই মেরুর বাসিন্দাদের পাওনা বুঝে নেওয়ার। আর সেই বুঝে নেওয়ার পথেই দুর্ঘটনা ঘটে যায়। জুভেনাইল ক্রাইমের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরলেও, সেখানে কোনও মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা নেই। আর সেটাই ‘খিলোনা’র দুর্বলতা। ‘লুডো’র পরে ইনায়তকে এখানেও ভারী মিষ্টি লেগেছে। নুসরতও মানানসই, তবে অভিষেকের এখানে করার কিছু ছিল না।

চতুর্থ কাহিনি কেয়োজ় ইরানির ‘অনকহি’, অ্যান্থলজির দ্বিতীয় ভাল ছবি। নাতাশা (শেফালি শাহ) আর রোহনের (টোটা রায়চৌধুরী) ঠোকাঠুকির দাম্পত্য। তাদের একমাত্র মেয়ে ক্রমশ বধির হওয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তার জন্য সাইন ল্যাঙ্গুয়েজে পোক্ত হয়ে ওঠা মা চায়, বাবাও সেই সহমর্মিতা দেখাক। এই ইসুতেই দাম্পত্য কলহ চরমে ওঠে। গুমোট গরমের পরে প্রথম বৃষ্টির মতো নাতাশার জীবনে আসে কবীর (মানব কওল)। সাইন ল্যাঙ্গুয়েজই হয়ে ওঠে নাতাশার আর কবীরের সম্পর্কের সুতো। শেফালি আর মানব দু’জনেই শুধু চোখ দিয়ে অভিনয়টা করে ফেলতে পারেন, হাতের মুদ্রার প্রয়োজনই ছিল না। বোমান ইরানির ছেলে হিসেবে অভিনয় দিয়েই ইন্ডাস্ট্রিতে পা রেখেছিলেন কেয়োজ়। কিন্তু প্রথম পরিচালিত ছবিতে তিনি বুঝিয়েছেন, নির্দেশনাটাই তাঁর আসল জায়গা।

এ বার আসা যাক ছবির তৃতীয় কাহিনিতে। নীরজ ঘেওয়ানের ‘গিলি পুচি’, নামটার মতোই মোলায়েম একটা গল্প। জাতপাত, সমকামিতা, নারীর অধিকারের লড়াইয়ের মতো জটিল বিষয়কে কী অনায়াসে একপাত্রে নিয়ে এসেছেন নীরজ। ভারতী মণ্ডল (কঙ্কণা সেন শর্মা) এক ফ্যাক্টরি ওয়ার্কার। কাষ্ঠকঠিন ভারতীকে সেখানে কেউ মেয়ে বলেই ভাবে না। এমনকি, ছেলেদের শৌচাগারই তাকে ব্যবহার করতে হয়। ফ্যাক্টরির হাড়ভাঙা খাটুনি নয়, ভারতীর নজর ডেটা অ্যানালিস্টের কাজে। কিন্তু নিচু জাতির একজন টেবিল-চেয়ারে বসে কম্পিউটার চালাবে? সহকর্মী থেকে ঊর্ধ্বতন সকলেই নিজস্ব ভাষায় অপমান করে যায় তাকে। অন্য দিকে ব্রাহ্মণ বাড়ির বৌ প্রিয়া (অদিতি রাও হায়দরি)। উচ্চবর্ণ আর রূপের জোরে সব কিছুই যার কাছে সহজলভ্য। এই দুই মেরুর বাসিন্দার মধ্যে বন্ধুত্ব হয়। সেই বন্ধুত্বের এক ভিন্ন রূপ দেখিয়েছেন নীরজ। আধঘণ্টার ছবিতে কঙ্কণা একাই বাজিমাত করেছেন। তাঁর মুখের পেশি, চোখ অনেক না বলা কথা বলে দিয়েছে। ছবি শেষেও এ কাহিনির রেশ রয়ে যায়।

‘গিলি পুচি’ আর ‘অনকহি’ দুটো কাহিনির দৌলতেই কর্ণ জোহর প্রযোজিত ‘অজীব দাস্তানস’ এ যাত্রা উতরে গেল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ajeeb Dastaans
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE