না, বুকের বাঁ দিকটা ওঁর চিনচিন, ঝিনঝিন কোনওটাই করেনি। ওঁর নাম রাজ চক্রবর্তী। উনি শুধু সফল পরিচালক, প্রযোজক বা বিধায়ক নন, সফল স্বামী এবং বাবাও। শুধুই নিজের নির্বাচনী এলাকার মানুষদের নয়, নিজের পরিবারেরও যত্ন নিতে জানেন। রাজ চেনেন তাঁর অভিনেত্রী স্ত্রী শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়কে।
এই দেখা সেই দেখা নয়! উনি জানেন, একটা ছবি কী ভাবে দর্শকদের কাছে পৌঁছে দিতে হয়। রাজই ওঁর বৌয়ের সব চেয়ে বড় সমর্থক, উৎসাহদাতা, ‘চিয়ার লিডার’।
দেবশ্রী, শুভশ্রী, রাজ চক্রবর্তী। ছবি: ফেসবুক।
আমি আমার ছোট বোনের জন্ম, বেড়ে ওঠা, ইন্ডাস্ট্রি জয় করা, দেবের সঙ্গে বন্ধুত্ব এবং মন ভাঙা— সব কিছুর সাক্ষী। আজ আমি খুব গর্ব করে, অহঙ্কার করে বলি, শুভ শুধুই যে প্রত্যেক মুহূর্তে নিজেকে ভেঙেগড়ে দক্ষ অভিনেত্রী হয়েছে তা নয়। তার চেয়েও বড়, আমার বোন সাফল্যের শিখর ছুঁয়েও নিখুঁত ভাবে নিজের সংসার, সন্তান, স্বামীর দেখভাল করছে। এই ভারসাম্য খুব কম মেয়ে রক্ষা করতে পারে।
সে দিন নজরুল মঞ্চে ইতিহাস তৈরি হল। তার নেপথ্যে শুধুই কি দেব বা শুভশ্রী? তা তো নয়। কী করে অস্বীকার করা যাবে তাঁদের জীবনসঙ্গীদের! তাঁরা ভরসা রেখেছেন বলেই এই ‘ইতিহাস’ তৈরি হতে পারল। ভুলে যাবেন না, দেব-শুভশ্রী দু’জনেই পেশাদার। ওরা কাজ করে নিজের বাড়ি ফেরে। আমার বোন কারও বৌ। দুই সন্তানের মা। দেব তেমনই কারও সন্তান। কারও প্রেমিক।
আজ এই বয়সে এসে ওরা দু’জনেই জানে, কোথায় সীমা টানতে হয়। তাই রাজের বুকে চিনচিনে ব্যথা হয় না। বরং গর্বে ফুলে ওঠে। ‘প্রাক্তন’ শব্দটা ভীষণ ভারী। সবার জন্যই। কিছু কিছু মানুষ সেই ভার সারা জীবন বহন করে চলে না। এটাও একটা ‘আর্ট’ মনে হয়। আবার নিজের জীবন নিজের মতো করে গুছিয়ে নেওয়াটাও তো এ রকম ‘আর্ট’ বা শিল্প। আপনারা কী বলেন?
দুই বোন শুভশ্রী আর দেবশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়। ছবি: ফেসবুক।
তা হলে কি আমার বোন আগের তুলনায় অনেক সংযত? এখন আর আগের মতো নিজের আবেগ, অনুভূতি প্রকাশ করে না? আমি বলব, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যে কোনও মানুষেরই বদল হয়। যদিও সবটাই নির্ভর করে সেই মানুষটার উপর। শুভ অবশ্যই নিজেকে সংযত করেছে। তা বলে নিজের অনুভুতি প্রকাশ করে না, সে কথাই বা কী করে বলি? ও যে ভীষণ অনুভূতিপ্রবণ। এ প্রসঙ্গে নচিদার (নচিকেতা চক্রবর্তী) গানের কথায় বলতে হয়, ‘যার উষ্ণ আঁচে, ভালবাসা বাঁচে…’। এখনও আমাদের দেখা হওয়ার পরে ও যে ভাবে জড়িয়ে ধরে, মনের ক্লান্তি দূর হয় যায়। আমার মনে হয় শুভ জানে, আবেগ, অনুভূতি— এগুলো কার কাছে প্রকাশ করবে।
আরও পড়ুন:
আমি একে ঠিক বদল বলব না। শুভ আগের তুলনায় অনেক বেশি অভিজ্ঞ হয়েছে। নিজের জীবন দিয়ে সঠিকটা বেছে নিতে শিখেছে। সারা ক্ষণ চেষ্টা করে, পৃথিবীর সমস্ত নেতিবাচকতা থেকে নিজেকে দূরে রাখতে। আগের তুলনায় আরও আধ্যাত্মিক মনের হয়েছে। এটাও ওকে মাটির কাছাকাছি থাকতে সাহায্য করে। নিজের শিকড় শুভ কখনও ভোলে না। তাই হয়তো ঘরে-বাইরে আজ এত সফল। এটাও তো এক রকমের ‘আর্ট’!
দেবশ্রীর প্রাণ ইউভান। ছবি: ফেসবুক।
এর জন্য রাজের ভূমিকা অনেক। একজন মেয়ের পরিবার এবং পেশা— দুটো দিকে ভারসাম্য রেখে চলা তখনই কঠিন, যখন নিজের জীবনের উপর তার কোনও নিয়ন্ত্রণ থাকে না। সংযত, সুশৃঙ্খল জীবনযাপন, স্বামী-সন্তান আর নিজের কাজের সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা, সবটাই আমার ভগিনীপতির মতো বর পেয়েছে বলেই শুভ পারে। সব কিছু দু’জনে ভাগ করে নেয়। আমি বাবা আমার জামাইকে নিয়ে একটু বেশিই পক্ষপাতদুষ্ট। আগেও বলেছি, এখনও বলি, আমার চোখে দেখা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ স্বামী রাজ চক্রবর্তী।