মঙ্গলবার রাতে নতুন করে শোরগোল টলিপাড়ায়। পরিচালক শ্রীজিৎ রায়-সহ এক ঝাঁক সদস্য ডিরেক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়া বা ডিএইআই থেকে গত রাতে ইস্তফা দিয়েছেন। খবর ছড়াতেই নতুন করে জল্পনা শুরু পরিচালক বনাম ফেডারেশন দ্বন্দ্ব নিয়ে।
সঙ্গে তীব্র গুঞ্জন, পরিচালকেরা নাকি ‘ব্যাকফুটে’! ক্রমশ শক্তি বাড়ছে ফেডারেশনের। সে রকমই কিছু ঘটছে?
জানতে আনন্দবাজার ডট কম যোগাযোগ করেছিল সংগঠনের দুই সদস্য পরিচালক ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরী এবং বিদুলা ভট্টাচার্যের সঙ্গে। প্রশ্ন রাখতেই ইন্দ্রনীলের সাফ জবাব, “যেটা হচ্ছে সেটা সকলেই জানেন। মঙ্গলবারের এই ঘটনার প্রেক্ষিতে বুধবার সকালে ফোন করেছিলেন এক সাংবাদিক। তিনিও জানতে চেয়েছিলেন, আমি কেন গিল্ড ছেড়ে দিলাম! শুনে অবাক। আমি কখন গিল্ড ছাড়লাম? এত গুজব ছড়াচ্ছে কেন?”
বক্তব্য রাখতে গিয়ে ইন্দ্রনীল পাল্টা প্রশ্ন রেখেছেন, এত গুজব কে ছড়ায়? কেন ছড়ায়?
“গুজব ছড়াতেও কিন্তু পরিশ্রম করতে হয়”, দাবি তাঁর। নিজেই নিজের করা প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। জানিয়েছেন, এর উত্তর সকলেই জানে। পাশাপাশি, ফেডারেশনের বিরুদ্ধে ১৫ জন পরিচালকের পৃথক ১৫টি মামলা দায়ের বিষয়টি নিয়েও মতামত দিয়েছেন। তাঁর কথায়, “প্রথমেই পরিষ্কার করে দিই, গিল্ড থেকে কিন্তু এই মামলা দায়ের করা হয়নি। তাঁদের সন্বন্ধে ফেডারেশনের পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয়েছে, আমরা নাকি প্রযোজকদের হয়ে অনেক কিছু করছি। এটাও প্রমাণসাপেক্ষ এবং এই প্রমাণ দাখিলের দায় আমাদের নেই। কারণ আমরা জানি, আমরা মামলা কেন করছি। সকলেই জানেন, কেন এই পদক্ষেপ।” ইন্দ্রনীলের আরও সংযোজন, এত সংখ্যক সদস্য ইস্তফা দিচ্ছেন— এটাই বা কেন বলতে হচ্ছে? এই প্রশ্ন তুললেই সকলে উত্তর পেয়ে যাবেন। তাঁর মতে, প্রত্যেকে পরিণতবয়স্ক। প্রত্যেকে নিজের ভালমন্দ বুঝছেন। সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ করছেন। বক্তব্যের শেষে পরিচালকের আবারও প্রশ্ন, “যাঁরা চলে যাচ্ছেন তাঁরা আদৌ ছিলেন কি? এটাই এখন বড় প্রশ্ন।”
চলতি বছরের শুরুতে পরিচালক-ফেডারেশন দ্বন্দ্ব যখন নতুন করে মাথাচাড়া দেয়, তখনই পথ দেখান পরিচালক বিদুলা ভট্টাচার্য। তিনি একাই কলকাতা হাই কোর্টে ফেডারেশনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। অভিযোগ, ফেডারেশনের ‘একুশে আইনে’র গেরোয়, অযথা হস্তক্ষেপে কাজ করতে পারছেন না। বিদুলার এই অভিযোগ বাংলার প্রায় প্রতি পরিচালকের। এর পরেই বাকি ১৪ পরিচালক হাই কোর্টে আলাদা ভাবে মামলা দায়ের করেন।
আরও পড়ুন:
সেই বিদুলা বিষয়টিকে কী চোখে দেখছেন? সুদূর তাইল্যান্ড থেকে জবাব জানিয়েছেন তিনি। বলেছেন, “শ্রীজিৎদার ডাকে আমরা সকলে যখন গিয়েছিলাম দাসানি স্টুডিয়োয়, আর তার পরেই যখন দেখলাম, দাদার যুদ্ধটা এক দিনও টিকল না, দাদা ক্ষমা-টমা চেয়ে কাজে ঢুকলেন— সে দিনই আমরা জানি, এই ল়ড়াই এত সহজ নয়। এ রকম আরও পরিস্থিতি তৈরি হবে।” দিনকয়েক আগে সুব্রত সেন, সুদেষ্ণা রায়, ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরী, বিদুলা ভট্টাচার্য-সহ এক ঝাঁক পরিচালক একটি ভিডিয়ো ভাগ করে নেন। সেখানে তাঁরা জানান আদালতে প্রকৃতপক্ষে কী ঘটছে। তাঁদের বক্তব্য, তখনই তাঁরা টের পাচ্ছিলেন, হয়তো পাল্টা এ রকম কিছু ঘটতে চলেছে।
বিদুলার দাবি, “আমরা জানতাম, আনুষ্ঠানিক ভাবে কারা গিল্ড ছাড়বেন। শ্রীজিৎদা যে দিন ক্ষমা চান সে দিনই আমরা জানতাম, দাদা গিল্ড ছাড়তে বাধ্য হবেন। ওঁরা কিন্তু কেউ স্বেচ্ছায় কিছু করছেন না। ওঁরা করতে বাধ্য হচ্ছেন।” পরিচালকের বিশ্বাস, আগামী দিনে এ রকম আরও অনেককে ভয় দেখিয়ে গিল্ড ছাড়তে বাধ্য করা হতে পারে। এটা বোঝাতে যে, পরিচালকদের দায়ের করা মামলায় কোনও সমস্যা হচ্ছে না ফেডারেশনের। প্রকৃত ঘটনা যদিও অন্য। হাসতে হাসতে বিদুলা বলেছেন, “এই মামলা এবং মামলার শুনানি দেখে ফেডারেশন এত ভয়ে আছে যে বিভিন্ন ভাবে ‘গল্প’ তৈরি করে ছড়িয়ে দিচ্ছে।”