সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে কলম ধরলেন অরুন্ধতী হোমচৌধুরী
গান-অন্তপ্রাণ এক জন মানুষ। তাঁর কথায় সুর। ভাবনায় গান। শয়নে-স্বপনে-জাগরণে গানের বাইরে কিচ্ছু বুঝতেন না। গলা নষ্ট হয়ে যাবে, এই ভয়ে বেশি জোরে কথাই বলতেন না! আমাদেরও রীতিমতো বকতেন। বলতেন, ‘‘আস্তে কথা বল। বেশি কথা বোলোই না। এতে গলা খারাপ হয়ে যাবে।’’ এই ছিলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। আমাদের সন্ধ্যাদি। মায়ের সমান দিদি। সারাক্ষণ আমাদের ভাল-মন্দ নিয়ে যিনি মাথা ঘামাতেন।
গান যাতে তাঁকে ছেড়ে না যায় তার জন্য কী নিয়মনিষ্ঠা! নিয়মিত গলা সাধা, গলার যত্ন নেওয়া- এই বয়সেও। ১৫ দিন অন্তর কথা হত ফোনে। তখনও গান নিয়েই বলতেন। শুধু নিজের সময় নয়, এই প্রজন্মের গান শুনতেও খুব ভালবাসতেন। যাঁদের গান শুনে খুশি হতেন, তাঁদের ফোন করে প্রশংসায় ভরিয়ে দিতেন। এ ভাবেই এই প্রজন্মের শিল্পীদের সঙ্গেও তাঁর নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। এবং যেহেতু তিনি সবার বড়, তাই নিয়মিত খোঁজও নিতেন সবার।
সন্ধ্যাদির যে দিন অনুষ্ঠান থাকত তার দু’দিন আগে থেকে আবদার, ‘‘আমার গান শুনতে যেতে হবে অরুন্ধতী।’’ আমারও মুখিয়ে থাকতাম। গান শোনার পরে আরও একপ্রস্থ তাই নিয়ে আলোচনা। এইটা কি ঠিক গেয়েছি? ওই গানের সুর ঠিক ছিল? যে দিন কোনও কারণে গানে কোনও ত্রুটি থাকত, সে দিন কথাই নেই। ঘুরেফিরে বারেবারে আফশোস, ‘‘কী খারাপ গাইলাম! গানটা ঠিকমতো গাইতেই পারলাম না।’’ দিদির কী মনখারাপ!
দিদির বাড়ি গেলেও খুব খুশি হতেন। নিজের হাতে রান্না করে রাখতেন। তারপর ফোনে বলতেন, ‘‘অরুন্ধতী তোর জন্য নিজের হাতে ওমুক পদ রেঁধেছি। তোকে কিন্তু সবটা খেয়ে যেতে হবে।’’ এই আন্তরিকতা আর কোথায় পাব? মাথার উপর থেকে ছাদটাই যেন সরে গেল!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy