আবার বছর কুড়ি পরে। ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’র অ্যালবামের এই নাম এখন প্রযোজ্য ‘পরশপাথর’ ব্যান্ডের জন্য। বাস্তবেই তারা ফের ২০ বছর পরে জোট বাঁধছে। ২০০০-এর আশপাশে সাড়া ফেলেছিল বেশ কয়েকটি বাংলা ব্যান্ড। তাদের মধ্যে অন্যতম ‘পরশপাথর’। কিন্তু একটা সময়ের পরে ব্যান্ডের সদস্যেরা বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। থমকে যায় গানের সফর। ২০ বছর পরে আবার তারা একসঙ্গে। কেন?
ব্যান্ডে বাংলায় গান গেয়ে টিকে থাকা যায় কি না, এই নিয়ে আলোচনার শেষ নেই। অনেকেই কলকাতা ছেড়ে মুম্বইমুখী হন। সমাজমাধ্যমে রিলের যুগে ভিন্ন ভাষায় গান গেয়ে ‘রিচ’ বৃদ্ধি করেন। এহেন সময়ে ফের বাংলা গানের জন্য একজোট হচ্ছে ‘পরশপাথর’। কী ভাবে সম্ভব হল, জানালেন ব্যান্ডের শিল্পী অয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়।
কেন থমকে গিয়েছিল ব্যান্ড? অয়নের স্পষ্ট উত্তর, “খ্যাতির বিড়ম্বনা বলে একটা কথা রয়েছে। আমাদের ব্যান্ড হঠাৎ থমকে যাওয়ার পিছনেও এমন কিছুই ঘটেছিল।” সেই সময় কলকাতা-সহ গোটা বাংলায় ‘পরশপাথর’-এর অনুষ্ঠানের যথেষ্ট চাহিদা ছিল। তাদের অ্যালবামও শ্রোতারা শুনতেন। ব্যান্ডের সদস্যেরা জনপ্রিয় হতে থাকেন। কিন্তু এই জনপ্রিয়তাই বাধা হয়ে দাঁড়ায়। আরও বেশি ও আরও বড় মাপের কাজ করার জন্য অনেকেই মুম্বই গিয়ে কাজ করতে শুরু করেন।
জনপ্রিয়তা থাকলেও, গান গেয়ে উপার্জন তেমন হত না। মানুষ ‘পরশপাথর’-এর গান শুনত ঠিকই। কিন্তু গান গেয়ে উপার্জন করে সংসার চালানো খুব সহজ ছিল না। যথারীতি যে যাঁর কাজের স্বার্থে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। বর্তমানে কি পরিস্থিতির কিছুটা বদল হয়েছে? ফের বাংলা গান গেয়ে ব্যান্ড টিকিয়ে রাখার সাহস তৈরি হচ্ছে কী ভাবে? অয়ন বলেন, “এখন উপার্জনের দিকটা অনেকটাই উন্নত হয়েছে। আগেও আমাদের গান মানুষ শুনত। কিন্তু ব়ড় অঙ্ক পারিশ্রমিক দিয়ে আমাদের তখন কে-ই বা নিতেন? ‘ভূমি’ ব্যান্ড যখন নিজেদের পারিশ্রমিক ৬৫ হাজার টাকা করে দিল, আমরা তখন ৩৫-৪০ হাজার টাকা নিতাম। এর মধ্যেই সাউন্ডও নিতে হতে আমাদেরই। বিষয়টা হল, ‘ভূমি’ দর বাড়িয়েছিল ঠিকই। কিন্তু অঙ্কটা এক লক্ষের ঘর ছা়ড়াতেও অনেকটা সময় লেগে গিয়েছিল। এখন সেই পরিস্থিতিতে বদল এসেছে।”
তখন মানুষের খরচও তো কম ছিল? এমনটা মানতে নারাজ ‘পরশপাথর’ ব্যান্ডের কণ্ঠশিল্পী। তাঁর মতে, “এখন একটা জিনিসের দাম ১০০ টাকা হলে, তখন হয়তো সেটা ৮০ টাকা ছিল। খুব ব্যবধান তো ছিল না।”
২০ বছর আগে ব্যান্ডে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা প্রত্যেকেই ফিরেছেন। “আমি, ঋষি, চিরদীপ, কিংশুক, হামটু, রাজা আগেই ছিলাম। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে কি-বোর্ডে বুটি ও বেস গিটারে বাচস্পতি। সমিধও বেস গিটার বাজাবে কয়েকটি গানের সঙ্গে। তবে আমাদের একসঙ্গে এক জায়গায় আনার পিছনে রয়েছেন দু’জন মানুষ— ‘পৃথিবী’ ব্যান্ডের কৌশিক চক্রবর্তী ও অনুষ্ঠানের কিউরেটর তৌসিম রহমান।”
আরও পড়ুন:
‘কাউকে ভালবাসলে তাঁকে মুক্ত করে দাও। সে যদি ফিরে আসে, বুঝবে সে তোমার।’ আমেরিকার লেখক রিচার্ড বাচ-এর এই উক্তিতে বিশ্বাসী অয়ন। তাই হাসতেই হাসতেই তিনি বলেন, “আমরা সবাই সবাইকে ছেড়ে এগিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু ফেরাটা সত্যিই অসাধারণ হয়েছে। সবাই কিন্তু এক ডাকে রাজি হয়ে যায়।”
‘পরশ পাথর’-এর অন্যতম সদস্য ছিলেন অনিন্দ্য বসু। তিনি কেন বাদ রইলেন? এই প্রসঙ্গে অয়নের স্পষ্ট জবাব, “‘ইচ্ছেডানা’ অ্যালবামে আমরা যাঁরা ছিলাম, তাঁরাই আবার জোট বাঁধছি। আসলে একটা সময়ে অনিন্দ্যদা বলেছিল, ওকে ও আমাকে বেশি পারিশ্রমিক দিতে হবে বাকিদের থেকে। ও তাই সরে গেল। কিন্তু আমি বাকিদের সঙ্গে সমান ভাবে এগোতে চেয়েছিলাম। বাদ্যযন্ত্র ছাড়া তো গান সম্ভব নয়। আর অনিন্দ্যদা কিন্তু আমাদের তৈরি করা গান দিয়েই ‘শহর’-এর অ্যালবাম তৈরি করেছিল। সে ও নিজের মতো করুক। কিন্তু মানুষ ‘পরশ পাথর’-এর গান আবার শুনতে চায়। তাই আমরা এক হচ্ছি।”
ফের বাংলা ব্যান্ডে একজোট হওয়ার নেপথ্যে রয়েছে আরও একটি বিষয়, এমনই দাবি অয়নের। একসঙ্গে কাজ করতে গেলে মতের অমিল হয়ে থাকে। কিন্তু ‘পরশপাথর’ ব্যান্ডে সেই ভাবে কখনও মতের অমিল হয়নি। সকলে বেঁধে বেঁধে থাকতেন। এটাই আবার বছর কুড়ি পরে ফিরে আসতে মনোবল জুগিয়েছে এই বাংলা ব্যান্ডকে।
উল্লেখ্য, আগামী ১৮ ডিসেম্বর কলকাতার এক প্রেক্ষাগৃহে অনুষ্ঠান করবে ‘পরশপাথর’।