Advertisement
E-Paper

একসঙ্গে অনুষ্ঠানে ভিন্ন ধারার শিল্পীরা! বাংলা সঙ্গীতজগতেও কি ‘পাশে দাঁড়ানোর’ চল শুরু? কী বলছেন শিল্পীরা?

কয়েক জন শিল্পীর সঙ্গীতসফর সমান্তরাল পথে চলেছে ঠিকই। কিন্তু এক মঞ্চে সচরাচর তাঁদের সহাবস্থান বিরলই বলা যায়। আজ তাঁরা এক মঞ্চে।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২৫ ০৮:৫৭
একজোটে অনুষ্ঠান নিয়ে বললেন শিলাজিৎ, উপল, অনুপম ও গৌরব।

একজোটে অনুষ্ঠান নিয়ে বললেন শিলাজিৎ, উপল, অনুপম ও গৌরব। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

শিল্পীদের মধ্যে অদৃশ্য প্রতিযোগিতার কথা শোনা যায় প্রায়ই। সেই প্রতিযোগিতা থাকা অস্বাভাবিকও নয়। কিন্তু একসময় যে শিল্পীদের ‌উচ্চতার ভিন্ন ভিন্ন পরিসর ও পরিচয় ছিল, তাঁরা এখন চেনা সেই ছক ভেঙে জোট বাঁধছেন। কিন্তু কেন? এই নতুন ছকে বাঁধা অনুষ্ঠান কি সৃজনশীল আদানপ্রদানের জন্য? না কি ‘বাংলা ছবির পাশে দাঁড়ান’-এর মতো সঙ্গীতজগতেও সেই হাওয়া বইতে শুরু করেছে? অস্তিত্বের সঙ্কট?

কয়েক জন শিল্পীর সঙ্গীতসফর সমান্তরাল পথে চলেছে ঠিকই। কিন্তু এক মঞ্চে সচরাচর তাঁদের সহাবস্থান বিরলই বলা যায়। শ্রোতারাও তাঁদের ভিন্ন ভিন্ন উচ্চতায় মাপতেন। কিন্তু আজ তাঁরা এক মঞ্চে। যেমন একটি অনুষ্ঠানে জোট বাঁধছেন শিলাজিৎ মজুমদার ও বাংলা ব্যান্ড চন্দ্রবিন্দু। কিছু দিন আগে একই মঞ্চে একজোটে গান গেয়েছেন কবীর সুমন ও অঞ্জন দত্ত। এই নতুন ধারা কি বাংলা সঙ্গীতজগতের সৃজনশীল এলাকাকে পোক্ত করতে, না কি শুধুই পরস্পরের পিঠ চাপড়ানো? শিলাজিতের স্পষ্ট বক্তব্য, “আমি কিন্তু বহুকাল ধরে একসঙ্গে অনুষ্ঠান করছি। আমরা একসঙ্গে মিলেমিশেই কাজ করতে ভালবাসি। আমার অনুষ্ঠান দেখতে রূপম আসে। আমিও ওর অনুষ্ঠান দেখতে যাই।” একসময় কবীর সুমন, অঞ্জন দত্ত, নচিকেতা চক্রবর্তী ও শিলাজিতের নাম পর পর উঠে আসত। তবে শিলাজিৎ মনে করেন, শুরুর দিকে তাঁর সময়ের শিল্পীদের মধ্যে একসঙ্গে কাজ করার প্রবণতার অভাব ছিল। কিন্তু ক্রমশ সেই ছক ভেঙেছে। তাঁর কথায়, “আমাদের সময়ের শিল্পীরা খুব একটা একসঙ্গে অনুষ্ঠান করতেন না। তবে পরে আমি, রূপম, উপল, অনিন্দ্য, ‘শহর’-এর অনিন্দ্য সকলেই একসঙ্গে কাজ করেছি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একসঙ্গে কাজ করতে ভাল লাগে বলেই একসঙ্গে কাজ করেছি। পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা রয়েছে। অন্য কোনও উদ্দেশ্য নেই।”

ছবির গানের পরিচালনা করার পাশাপাশি, অনুপম রায়ের মঞ্চের অনুষ্ঠানও অনুরাগীদের মধ্যে জনপ্রিয়। নতুন উঠতি শিল্পীদের তিনি ফিচার করেছেন তাঁর অনুষ্ঠানে। তবে একই মঞ্চে খ্যাতনামী শিল্পীদের অনুষ্ঠান এখনও কোনও ধারায় পরিণত হয়নি বলেই তিনি মনে করেন। অনুপমের বক্তব্য, “একটা অনুষ্ঠানে একাধিক শিল্পীর অনুষ্ঠান পর পর সাজানো থাকে। এটা বহু দিন ধরেই হচ্ছে। এক মঞ্চে একাধিক শিল্পীর অনুষ্ঠান সেই ভাবে আর কোথায় হয়েছে? যে ক’টি অনুষ্ঠান হয়েছে, তাকে নতুন কোনও ধারা এখনও বলা যায় না।”

‘চন্দ্রবিন্দু’র উপল সেনগুপ্ত অবশ্য মনে করেন, মঞ্চে প্রথম অনুষ্ঠান হলেও তাঁদের ও শিলাজিতের গানের মধ্যে বেশ কিছু সাদৃশ্য রয়েছে। তাই নিজেদের ভিন্ন ঘরানা ও উচ্চতার শিল্পী বলতে রাজি নন তিনি। তাঁর কথায়, “শিলাজিতের গানের মধ্যে আফ্রিকার সঙ্গীতের ছাপ রয়েছে। আমাদের গানের মধ্যেও তা রয়েছে। শব্দ নিয়ে নানা রকমের ওঠাপড়া (ওয়র্ড জাগলিং) রয়েছে আমাদের দু’জনের গানেই।” শিলাজিৎ বলেন, “আমি ‘চন্দ্রবিন্দু’র সঙ্গে আগেও ‘আবোল তাবোল’ নিয়ে একটি কাজ করেছিলাম। কিন্তু এই প্রথম মঞ্চে অনুষ্ঠান করব।”

এক মঞ্চে অনুষ্ঠান করলে কোনও সুবিধা তৈরি হয় না। বরং সেখানে অন্য রকমের একটি চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়, মনে করেন উপল। “একসঙ্গে অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে একটা সমস্যা আছে। হতেই পারে, শিলাজিতের কিছু শ্রোতা চন্দ্রবিন্দু-র গান পছন্দ করেন না। তাঁরা হয়তো তাই অনুষ্ঠানটায় আর এলেন না। এতে বাণিজ্যিক তেমন কোনও সুবিধা হয় না। একজোট হয়ে অনুষ্ঠান করার একটাই উদ্দেশ্য। শিলাজিতের সঙ্গে আমাদের গান গাইতে ভাল লাগছে”, বলেন উপল। একই ব্যান্ডের আর এক শিল্পী চন্দ্রিল ভট্টাচার্যের অবশ্য স্পষ্ট মত, এই ভাবনা একান্তই আয়োজকদের। একজোটে অনুষ্ঠান করার ফলে তিনি বাণিজ্যিক দিকটি ইতিবাচক ভাবেই দেখছেন। তাঁর কথায়, “এই ভাবনা আয়োজকদের। কিন্তু আমাদের পরস্পরের সঙ্গে অনুষ্ঠান করতে ভালই লাগে। এর আগে প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে কবীর সুমনের অনুষ্ঠানও দেখেছি। এটা সঙ্গীতজগতে নতুন করে ‘পাশে দাঁড়ানোর’ মতো কোনও প্রবণতা বলে মনে হয় না। তবে হ্যাঁ, একই মঞ্চে দুই শিল্পী একসঙ্গে অনুষ্ঠান করছেন, এটা সচরাচর হয়নি। এটা ঠিক, শিলাজিতের কিছু শ্রোতা হয়তো আমাদের চিনবেন। আবার আমাদের কিছু শ্রোতা শিলাজিৎকে চিনবেন। তাতে বাণিজ্যিক দিক থেকেও ভালই হবে। তবে এমন শ্রোতাও রয়েছেন, যাঁরা উভয়ের গানই হয়তো পছন্দ করেন।”

একাধিক শিল্পীদের নিয়ে কাজ করে থাকেন রুবেশ সরকারও। একমঞ্চে একাধিক শিল্পীদের নিয়ে অনুষ্ঠান পরিকল্পিত রয়েছে তাঁর ভাবনাতেও। নিজেও সঙ্গীতশিল্পী তিনি। তাই সৃজনশীল পরিধিটা বড় করার জন্য এই উদ্যোগ ইতিবাচক বলেই মনে করেন তিনি। তবে পাশাপাশি তিনি বলেন, “বাণিজ্যিক কিছু সুবিধা তো রয়েছেই। একটা ছবিতে যেমন দু’জন তারকা থাকলে উভয় পক্ষের অনুরাগীরাই ছবিটা দেখেন। একই নিয়ম এখানেও প্রযোজ্য। তবে কোন কোন শিল্পীকে এক জায়গায় নিয়ে আসা যায়, সেই কিউরেশন-এর নেপথ্যেও সৃজনশীলতা প্রয়োজন।”

বাংলা সঙ্গীতজগতের বহু শিল্পীর সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা গৌরব চট্টোপাধ্যায়ের। যিনি এই জগতে ‘গাবু’ নামেই পরিচিত। এক মঞ্চে একসঙ্গে একাধিক শিল্পীর অনুষ্ঠান সঙ্গীতজগতের জন্য খুবই স্বাস্থ্যকর বলে মনে করেন তিনি। “সঙ্গীতশিল্পীরা বরাবরই একসঙ্গে কাজ করতে ভালবাসেন। আমি যেমন ড্রামার। যন্ত্রটা এত বড়। মঞ্চে সেটাও তো আমরা ভাগাভাগি করে নিই। কখনও আমি কারও ড্রাম্‌স বাজাই। আবার কখনও অন্য কেউ আমার ড্রাম্‌স বাজায়। এটাই রেওয়াজ।” শিল্পীদের ভাবনাচিন্তা, দর্শন ভিন্ন হয়। সেই ভিন্নতা পেরিয়ে এসে অনুষ্ঠান সাজানোর ক্ষেত্রে আয়োজকের কিছু ভাবনা থাকতেই পারে। কিন্তু শিল্পীদের ক্ষেত্রে এক মঞ্চে অনুষ্ঠান করার একমাত্র কারণ, একসঙ্গে গানবাজনা করার প্রতি ভাললাগা। এমনই মনে করেন গাবু। তাঁর কথায়, “আলাদা করে কারও পাশে দাঁড়াতে হবে, এই প্রয়োজন মনে হয়নি। বরং কোনও ভাবনা ছাড়াই আমরা একজোটে কাজ করতে ভালবাসি। আসলে একসঙ্গে সময় কাটাতেও ভাল লাগে। শিলাদা ওর গ্রামের বাড়িতে দুটো বড় অনুষ্ঠান করেছিল। আমরা গিয়ে বাজালাম।”

সমাজমাধ্যমে প্রায়ই শিল্পীদের একজোটে কাজ করতে দেখা যায়। যাকে ‘কোল্যাব’ বলা হয়ে থাকে। তবে শুধু নেটপাড়ার মধ্যে বন্দি না থেকে মঞ্চেও নিজেদের চেনা গণ্ডি থেকে বেরিয়ে এসে অন্য শিল্পীর সঙ্গে মঞ্চ ভাগ করে নিচ্ছেন তাঁরা। তবে কোন শিল্পীর সঙ্গে কোন শিল্পীর মেলবন্ধন হবে, সেই ভার শিল্পীরা আয়োজকদের উপরেই ছেড়ে দিতে চান।

Silajit Majumder Chandrabindoo Anupam Roy
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy