Advertisement
০২ মে ২০২৪
Bappi Lahiri

মধ্যরাতে ঋতুপর্ণার বাড়িতে বাপ্পির স্মৃতি, লাহিড়ী পরিবারের সঙ্গে আলাপে আনন্দবাজার অনলাইন

ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের বাড়িতে বাপ্পি লাহিড়ীর নাতি রেগো। সঙ্গে প্রয়াত সুকারের কন্যা ও জামাই। সুর ও সঙ্গীতের জমাটি আড্ডায় উঠে এল একাধিক প্রসঙ্গ।

Bappi Lahiri’s grandson Rego B visitited Bengali actress Rituparna Sengupta’s home with family

(বাঁ দিক থেকে) ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, বাপ্পি লাহিড়ীর নাতি রেগো বি এবং মেয়ে রিমা লাহিড়ী। —নিজস্ব চিত্র।

স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২৪ ১৬:২৯
Share: Save:

ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের বাড়ি। রাত এগারোটা। বাড়ির দরজা খোলা। কোনও প্রশ্ন না করেই অভিনেত্রীর নিরাপত্তারক্ষী বললেন, ‘‘ওপরে’’। সেই ‘ওপর’ থেকেই ভেসে আসছে সুর— ‘ইয়াদ আ রহা হ্যায়, তেরা প্যার’। গাইছেন বাপ্পি লাহিড়ীর নাতি রেগো বি। সামনে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। সঙ্গে বাপ্পি লাহিড়ীর মেয়ে রিমা লাহিড়ী এবং তাঁর স্বামী গোবিন্দ বনশল। আর বাপ্পির স্ত্রী। সঙ্গে ঋতুপর্ণার পরিবার।

গান চলতে থাকে। রেগো দাদুর কথা বলতে বলতে শুরু করেন, ‘এই তো জীবন। যাক না যে দিকে যেতে চায় প্রাণ’। ঠিক বাপ্পি লাহিড়ীর মতো তাঁর গলায় মোটা সোনার চেন। চশমাও ঠিক দাদুর মতো। আদব-কায়দাও এক। দূর থেকে ভুল করে যে কেউ তাঁকে বাপ্পি লাহিড়ী ভেবে বসতেও পারেন।

বাপ্পির সুর দেওয়া, গাওয়া তুমুল জনপ্রিয় গানগুলি সঙ্গীতের বিচারে কতটা উঁচু মানের, সে তর্ক ভিন্ন। তবে টানা তিন-চার দশক ধরে সেই সুরগুলির উপরে ভিত্তি করে যে একাধিক পেশা আবর্তিত হয়েছে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। আনন্দবাজার অনলাইনকে যেমন রিমা বললেন, ‘‘কুমার শানু, শান, অলকা ইয়াগনিক, উদিত নারায়ণ সকলে এক সময় আমাদের বাড়িতে বাবার কাছে আসতেন। মাছ-ভাত খাওয়াও হচ্ছে, আবার বাবা ওঁদের গান নিয়েও নানা কিছু ভাবছেন। সাহায্য করতেন এগিয়ে যেতে। এখন বলিউডে সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা খুব শক্ত! কেউ সুযোগ দেয় না। জায়গাও ছাড়ে না।’’

বাবার সঙ্গে অনুষ্ঠানে গান গাইতেন রিমা। বললেন, ‘‘ছোটবেলায় গোলগাল ছিলাম। মঞ্চে আমায় গান গাইতে দেখে রেখা চুমু খেয়ে কোলে নিয়েছিলেন। আর দিলীপকুমার বাবাকে বলতেন, ‘আমাদের সন্তান নেই। রিমাকে আমাদের দিয়ে দাও।’ বলিউডকে ছোট থেকেই দেখছি।’’

ঋতুপর্ণা আর বাপ্পি লাহিড়ীর পরিবারের আত্মীয়তার সম্পর্ক। বাপ্পিদার মাছভাতের প্রতি ভালবাসার কথা ভেবে ঋতুপর্ণার বাড়িতে তেল কই, তোপসে, পাঁঠার মাংস, এই চৈত্রেও নতুন গুড়ের মিষ্টি— সব হাজির। সেই সমস্ত আয়োজনের মধ্যে শুধুমাত্র আনন্দবাজার অনলাইনের জন্য রিমা আর রেগোর সঙ্গে আড্ডা দিলেন ঋতুপর্ণা। বললেন, ‘‘জোর করে বাপ্পিদা আমায় গান রেকর্ড করিয়েছিলেন। রাত জেগে স্টুডিয়োতে আমার জন্য বসে থাকতেন।’’ রিমা উৎসাহ নিয়ে যোগ করলেন, ‘ফুলমতি’ গান ঋতুপর্ণার গলায় শোনার পর, তাঁর বাবা বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন, এই গান অভিনেত্রী ঋতুপর্ণারই গাওয়া কি না। এতটাই ভাল লেগেছিল তাঁর।

কথার মাঝে আবার গান ধরলেন বছর পনেরোর রেগো। তাঁর মধ্যে সুর চলে নিরন্তর। স্প্যানিশ ভাষায় যখন গান ধরলেন তিনি, ঋতুপর্ণা বললেন, ‘‘এই বয়সে পনেরোটা ভাষায় ও গান গাইতে পারে।’’

৩ বছর বয়সে তবলা বাজাতে শুরু করেছিলেন গায়ক অপরেশ লাহিড়ীর একমাত্র পুত্র বাপ্পি লাহিড়ী। আর ২ বছর বয়সে রেগো সুর করে ‘হনুমান চালিশা’ পড়তে শুরু করেন। চমকে গিয়েছিলেন বাপ্পি। নাতিকে নিয়ে সে দিন থেকেই স্বপ্ন দেখা শুরু ‘শরাবি’, ‘ডিস্কো ডান্সার’, ‘গুরুদক্ষিণা’, ‘অমর সঙ্গী’র গানের স্রষ্টার।

সারেগামাপা থেকে ‘বাচ্চা পার্টি’ নামে একটি গান মুক্তি পেয়েছিল। যে গান রেগো গেয়েছেন বারো বছর বয়সে। ইউটিউবে গান আসতেই লক্ষাধিক মানুষের তা নজর কাড়ে। ‘হম তুমহে চাহতে হ্যায়’ ছবির জন্য ‘সেওয়া সেওয়া’ নামে একটি গানও গেয়েছেন তিনি। আনন্দবাজার অনলাইনকে রিমা বলছিলেন, তাঁর বাবা ওই গান শুনে রেগোর জন্য কতটা খুশি হয়েছিলেন। রিমার বিশ্বাস, আজও রেগোর সব কিছুতে বাবার আশীর্বাদ আছে।

উত্তমকুমারের শেষ ছবি ‘ওগো বধূ সুন্দরী’র অন্যতম আকর্ষণ ছিল বাপ্পির সুর। বোতলে ঠুনঠুন আওয়াজ তুলে ‘এই তো জীবন’ কে ভুলতে পারে! শুধু গায়ক বা সুরকার নন, গানে নতুন শব্দ তৈরি করেছিলেন তিনি। রেগোও ঠিক একই পথে হাঁটছেন। বললেন, ‘‘প্রাচ্য আর পাশ্চাত্য, দুই ধারার সঙ্গীত শুনতে-শুনতে আমি গান তৈরি করা শুরু করেছি। আর সেখানে নতুন শব্দ প্রয়োগ নিয়ে কাজ করছি।’’

গানের নেশা বয়সের তুলনায় অনেকটাই বড় করে দিয়েছে রেগোকে। তিনি বন্ধু, আড্ডা, ইনস্টাগ্রাম বা রাত-পার্টিতে নিজের সময় নষ্ট করতে চান না। তিনি কেবল চেনেন তাঁর দাদুর সঙ্গীতকে। উত্তমকুমার থেকে তাপস পাল, প্রসেনজিৎ হয়ে দীর্ঘ ধারাবাহিক বৃত্ত তৈরি করেছে, এখানেই বাপ্পি একক ইন্ডাস্ট্রি। তবে এই ইন্ডাস্ট্রিকে কখনও বাংলা-হিন্দির গণ্ডিতে বাঁধা যায় না। ‘শরাবি’ ছবিতে তাঁর সুরে ‘দে দে পেয়ার দে’ গানে কখনও থাকতে পারে ‘আল্লা মেঘ দে পানি দে’-এর অনুষঙ্গ। রেগো আবার গান ধরেন, ‘মঙ্গলদীপ জ্বেলে’, নরম হয়ে আসে তাঁর কণ্ঠ। পাশে রিমা। গান শেষ হওয়ার পরে বলেন, ‘‘আমাদের শিল্পী পরিবার। আবেগ বেশি। এই সময়ে রেগোর মতো নরম মনের মানুষ কী ভাবে লড়াই করে নিজের জায়গা তৈরি করবে সেটাই দেখার। বাপ্পি লাহিড়ীর নাতি হলেই তো সব হয়ে যায় না। ওর প্রতিভা আছে। ও পরিশ্রমী। তবুও চারিদিকে এত মানুষ। এত গান। কঠিন সময়...’’ ইতিমধ্যেই ইনস্টাগ্রামে গানের জন্য রেগোর দশ লক্ষ অনুরাগী। সলমন খান, সোনু নিগম ভালবাসেন তাঁকে। ঋতুপর্ণা এগিয়ে দিচ্ছেন রেগোকে।

ছেলের সঙ্গে এ বার রিমাও গান জুড়লেন। কলকাতায় এসে তাঁর ‘হোপ এইট্টি সিক্স’-এর কথা মনে পড়ছে। নিজে গানকে পেশা করেননি রিমা। বললেন, ‘‘আমার জীবনের না-গাওয়া সব গান রেগোর কণ্ঠস্বর হয়ে ফিরছে। ওর মধ্যে বাপ্পি লাহিড়ী ফিরে আসুক।’’

রাত গাঢ় হয়। এক নায়িকার বাড়িতে এক গায়ক তথা মন্ত্রীর এবং তাঁর পরিবারের প্রবেশ। বাপ্পি লাহিড়ি যেন মিলিয়ে দিচ্ছেন সকলকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bappi Lahiri Grandson Rituparna Sengupta
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE