টলিপাড়া প্রসঙ্গে তাঁর মতামত ব্যক্ত করলেন অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
গত কয়েক দিন ধরেই টলিপাড়ায় যা শুরু হয়েছে, তা দেখে এক জন শিল্পী হিসেবে আমি অত্যন্ত চিন্তিত। আজ সকালেই শ্রীজিতের (পরিচালক শ্রীজিৎ রায়) ফেসবুক লাইভ দেখেছি। তার পর কিছু কথা ফেসবুকে লিখেছি। সত্যি বলতে যা শুরু হয়েছে, সেটা ভাল নয়!
আমি একটু পিছিয়ে যেতে চাই। গত বছর জুলাই-অগস্ট মাসে পরিচালক রাহুল মুখোপাধ্যায়ের ছবিকে কেন্দ্র করে প্রথম সমস্যার সূত্রপাত। তার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নবান্ন থেকে বললেন যে আর শুটিং বন্ধ হবে না। তার মানে, হয় তখন তিনি মিথ্যা বলেছিলেন, অথবা টলিউড পরিচালনা করার জন্য যাঁদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীকে ভুল প্রমাণিত করতে উদ্যোগী হয়েছেন। সেই জন্যই এখন এই অসহযোগিতা।
গত বছর টলিপাড়ায় কর্মবিরতির পর নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন পরিচালক গৌতম ঘোষ, মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় এবং আমার ভাই দেব। আমার তো খুব খারাপ লাগছে, তাঁরা এখন চুপ করে রয়েছেন কেন? তাঁদের বক্তব্য জানতে ইচ্ছে করছে। আজকে শুটিং বন্ধ হয়ে গেলে তাঁদের ভাবমূর্তিও তো নষ্ট হচ্ছে।
এ বার দেখা যাচ্ছে, ঠিক যে যে কারণে শুটিং বন্ধ হল, সেই একই কারণ আবার ফিরে এসেছে। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় বাংলা তথা দেশের প্রথম সারির পরিচালক। জাতীয় স্তরের পুরস্কার পেয়েছেন। সেই মানুষটির নতুন ছবির শুটিং বন্ধ করে দেওয়া হল। দলের একাংশ আগেই উত্তরবঙ্গে পৌঁছে গিয়েছিল। তার পরে বন্ধ করা হল কাজটা। কলাকুশলীরা নাকি তাঁর কোনও বক্তব্য আঘাত পেয়েছেন! পরিচালক ফেসবুকে লাইভ করতে বাধ্য হলেন। জয়দীপ মুখোপাধ্যায়ের নতুন সিরিজ়ের শুটিং জট এখনও কাটেনি। তার পর শ্রীজিৎ। লক্ষ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়ে গেল।
বলা হচ্ছে, পরিচালকদের একাংশের বক্তব্যে নাকি টেকনিশিয়ান ভাইয়েরা দুঃখ পেয়েছেন। তাই তাঁরা কাজ করতে রাজি নন। কেউ বলছেন, নির্দেশ দিয়েছে ফেডারেশন। আবার কেউ পরিচালকদের বিরুদ্ধে যে ঠিক কী অভিযোগ রয়েছে, সেটাই ভাল করে বলতে পারছেন না। আবার এই পরিচালকদের বিরুদ্ধে কোনও নির্দিষ্ট অভিযোগও কিন্তু কেউ এখনও প্রমাণ করতে পারেননি। তাই সন্দেহ জাগে, টেকনিশিয়ানরা দিনের শেষে কি চক্রান্তের শিকার হচ্ছেন!
বহু বছর এই বাংলা চলচ্চিত্র জগতে রয়েছি। আমি জানি, কোনও টেকনিশিয়ান কাজ বন্ধ করতে চান না।কারণ অনেকেই দৈনিক পারিশ্রমিকে কাজ করেন। অভিনেতা পরিচালক এবং টেকনিশিয়ানেরা একটা পরিবারের মতো। এই সুসম্পর্কে কেউ ভাঙন ধরাতে চাইছে। ঠিক যে ভাবে রাজ্যবাসী জানেন, আরজি কর-কাণ্ডে একা সঞ্জয় রায় দোষী নন। নেপথ্যে আরও অনেক বড় মাথারা রয়েছেন। তেমনই ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল মহল জানে, টেকনিশিয়ানরা শুটিং বন্ধ করেননি। নেপথ্যে এমন কোনও খেলোয়াড় রয়েছেন, যাঁর কথা না শুনলে টেকনিশিয়ানদের গিল্ড কার্ড পর্যন্ত বাজেয়াপ্ত হতে পারে। সেই ব্যক্তিটি কে, সেটা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও অবশ্যই জানেন।
পরিচালকদের বিরুদ্ধে কী অভিযোগ, তা নিয়ে এখনও কোনও সদুত্তর পাওয়া যায়নি। ইন্ডাস্ট্রির একটা বড় অংশ মনে করছে, টলিউডে মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠেরা যাঁদেরকে নিজের ইচ্ছেমতো দাস-দাসীতে পরিণত করতে পারছেন না, শুটিং বন্ধ করে তাঁদের ক্ষতিসাধন করা হচ্ছে। মাথা নোয়াতে বাধ্য করা হচ্ছে। আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলে তাঁর বিরোধীরা তাঁকে মিথ্যাবাদী প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন। তার জন্য টেকনিশিয়ানদের বার বার ব্যবহার করা হচ্ছে। তাঁদের কাঁধ ব্যবহার করে কেউ প্রতিহিংসার বন্দুক চালাচ্ছেন, যাতে টলিউডের চূড়ান্ত ক্ষতি প্রত্যেক বার দেখতে পাওয়া যাচ্ছে।
পরিচালকেরা এখন যে জাঁতাকলে পড়েছেন, টেকনিশিয়ানরাও সেই একই জাঁতাকলে পড়ে যন্ত্রণায় ছটফট করছেন। টেকনিশিয়ান ভাইরা মুখ ফুটে বলতে পারছেন না, যে তাঁদের কাঁধে কে বা কারা বন্দুক রাখছেন। আসলে এখন শুধু নিজেরটা ভাবলে আর চলবে না। অবিলম্বে ইন্ডাস্ট্রির প্রযোজক, পরিচালক, অভিনেতা— সকলে মিলে কঠিন প্রতিবাদ করে যদি এই প্রবণতা বন্ধ না করা হয়, যদি একে অপরের পাশে না দাঁড়ান, তা হলে আরও খারাপ দিন আসতে চলেছে।
(সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে অনুলিখিত।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy