Advertisement
E-Paper

অভিনেতা কী ভাবে জননেতা হবেন, সেটা বুঝতে বুঝতে পাঁচ বছর কেটে যায়: স্বীকারোক্তি সঙ্ঘশ্রীর

চলতি নির্বাচনকে মাথায় রেখে শুরু হয়েছে আনন্দবাজার অনলাইনের বিশেষ বিভাগ ‘ভোটের দিব্যি’। নির্বাচন নিয়ে তাঁদের মনোভাব ব্যক্ত করছেন আপনাদের পরিচিত মুখেরা। এ বারে ভোট নিয়ে লিখলেন সঙ্ঘশ্রী সিংহ।

সঙ্ঘশ্রী সিংহ

সঙ্ঘশ্রী সিংহ

শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০২৪ ০৮:৫৬
Image of Sanghasri Sinha

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

প্রতি পাঁচ বছর অন্তর নির্বাচন আসে ও যায়। কিন্তু, মানুষের পরিস্থিতি বদলায় কি? বর্তমান সময়ে দেশের যা রাজনৈতিক অবস্থা, তা বর্ণনা করতে আমার একটাই শব্দ মাথায় আসে সেটা ‘স্টকহোম সিনড্রোম’-এ ক্ষেত্রে এক জন মানুষ কষ্ট বা দুঃসহ পরিস্থিতির মধ্যে থাকতে থাকতে এতটাই অভ্যস্ত হয়ে যান যে, তাঁর সামান্য সুস্থ অবস্থাও ভাল লাগে না।

এই মুহূর্তে রাজ্যে হোক কিংবা কেন্দ্রে, দুই ক্ষেত্রেই পরিস্থিতি যে খুব অনুকূল, তেমনটা নয়। ধরে নেওয়া যাক, এমন অবস্থায় মধ্যবিত্ত মানুষ সরকার পরিবর্তনের কথা ভাবল, কিন্তু তার পর যে পরিবর্তন আসবে, তা বর্তমান পরিস্থিতির তুলনায় যে আরও বেশি দুর্বিষহ হবে না, সেই গ্যারান্টি কে দেবে? তাই ভাই যা চলছে চলুক, যা ক্ষতি হচ্ছে হোক।

আগে দেখছি, যাঁরা রাজনীতি করছেন সেটাই তাঁদের নেশা বা পেশা। অন্য পেশার মানুষের সঙ্গে রাজনীতির আঙিনার মানুষের কর্মব্যস্ততার তুলনা করা যেত না। নিজের আখের গোছানোর থেকেও বড় হয়ে দেখা দিত মানবধর্ম। কিন্তু সম্প্রতি বেশ কয়েক বছরে দেখলাম, খেলোয়াড় থেকে অভিনেতা কিংবা প্রাক্তন আমলা— সকলেই রাজনীতিতে যোগ দিচ্ছেন। একটা নির্ধারিত সময় পেরোনোর পর তাঁরা বলছেন, রাজনীতিটা আমার দ্বারা হচ্ছে না, পেশার ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে। তাই আমার প্রশ্ন তাঁদের, কেন আপনারা এই দিকটা আগে ভাবলেন না? কারণ, পাঁচ বছর আপনি অনিচ্ছা-সহ কাজ করে বা না করে যে ভাতা, কর ছাড়, পেনশন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পাবেন, তা আমাদেরই করের টাকায়। তাই গায়ে লাগে!

এই মুহূর্তে দেশের কৃষকদের কথা না বললেই নয়। গত কয়েক বছরে বার বার পথে নেমেছেন কৃষকেরা। যাঁরা অন্ন তুলে দিচ্ছেন আমাদের মুখে, তাঁদের পেটে খাবার নেই। সামান্য ক’টা টাকা সুদের জন্য আত্মহত্যা করছেন কৃষকেরা। এ ক্ষেত্রে নিজের এক অভিজ্ঞতার কথা বলতে হয়। দেশের সব থেকে বড় যৌনপল্লিতে ছবির শুটিং করতে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে জানতে পারি, ১৭ বছরের এক মেয়েকে তার কৃষক বাবা বিক্রি করে দেন। কারণ, তার বদলে একটা জমি ও চার সন্তানকে বাঁচাতে চেয়েছিলেন তিনি। দেশের এই অবস্থার ঠিক কবে পরিবর্তন ঘটবে?

সাধারণত গ্রীষ্মকালেই ভোট হয়। রোদ, গরম সব উপেক্ষা করে দেখি, প্রার্থীরা ভোট চাইতে বেরোন। সেটা ভাল। কিন্তু, পরক্ষণেই মনে হয় ভোট মিটলেই তো এই প্রার্থীর সঙ্গে দেখা করতে গেলেও লাগবে অনুমতি। অনেক ক্ষেত্রে তো জুতোর সোল খুলে যায়, তবু প্রার্থীর দেখা মেলে না। আসলে সাধারণ নাগরিক হিসেবে প্রতি বার এই প্রশ্নগুলো নিজেই নিজেকে করি— ভোট দেব, কিন্তু প্রার্থীর দেখা পাব তো?

পেশায় আমি অভিনেত্রী। নির্বাচনের সময় এলেই দেখা যায়, অভিনেতা-অভিনেত্রীদের মধ্যে রাজনৈতিক সত্তা প্রকাশ পায়। অনেকেই এসেছেন, রাজনীতিতে সাফল্যও পেয়েছেন। তবে এ ক্ষেত্রে পথপ্রদর্শক বলতে আমার জয়ললিতার কথাই মনে পড়ে। আমার মনে হয়, রাজনীতি ও অভিনয় দুটো ভিন্ন পেশা। অভিনয় শেখায় আত্মকেন্দ্রিক হতে। নিজের উপর নজর দিতে। সেখানে রাজনীতি শেখায় জনদরদি ও স্বার্থশূন্য হতে। দুটো কাজ তো একে অপরের পরিপন্থী। আমার মনে হয়, এক জন অভিনেতা কী ভাবে জননেতা হবেন, সেটা বুঝতে বুঝতেই পাঁচ বছর কেটে যায়।

আমি যে রাজনীতির বোদ্ধা, তেমন নয়। কিন্তু সমাজে চারপাশে যা ঘটেছে কিংবা ঘটছে, তা দেখছি। সমাজবদ্ধ জীব, তাই প্রভাবিত হই। নব্বইয়ের দশকে দেখেছি, এক সরকারের খামখেয়ালিপনা। যেখানে ধরে নেওয়া হল, ক্লাস ফাইভে এসে নাকি ছাত্রছাত্রীরা ইংরেজি পড়বে! এই সিদ্ধান্ত যে কত ছাত্রছাত্রীর কেরিয়ার শেষ করেছে, তা হাতে গুনে শেষ করা যাবে না। আবার অন্য দিকে এই সরকার ভাবল, টাটা এখানে শিল্প করবে না। মানুষের কর্মসংস্থানের দিকটা কি তাঁদের একেবারেই চোখ এড়িয়ে গিয়েছিল? পুরনো বিতর্ক থাক, আজ বরং এখানেই শেষ করছি। তবে একটা প্রশ্ন মনে আসছে। যে ভরসা নিয়ে আমরা ভোট দিচ্ছি, নিজেদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ একটা রাজনৈতিক দলের হাতে তুলে দিচ্ছি। তারা সেটা নিয়ে ভাল কিছু করবে, না কি মুচমুচে ডালবড়া বানিয়ে চায়ের সঙ্গে পার্টি অফিসে খাবে, বার বার এই বিষয়টা ভাবায়।

Lok Sabha Election 2024 Bengali Actress West Bengal Politics
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy