Advertisement
E-Paper

কেউ মুখে বলেছেন, কেউ নির্বাক, কেউ সাহসী তো কেউ ভীরু, টলিপাড়ায় প্রেমপ্রস্তাবে কে কেমন?

নিবেদন ছাড়া কি প্রেমের গুরুত্ব নেই। ভালবাসা কি অব্যক্ত হতে পারে? প্রেম প্রত্যাখ্যানেও কি বন্ধুত্বের সুতো জোড়া? প্রেম নিবেদন প্রসঙ্গে মতামত জানালেন টলিপাড়ার দুই প্রজন্মের সদস্যেরা।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৯:০১

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

প্রেমে পড়া বারণ হলেও ভালবাসা জীবনে যে কারণে বা অকারণেই আসে! তার পরশ অনুভব করা যায়। যুক্তি-তর্কের বেড়া ভেঙে প্রেমের জোয়ারে গা ভাসানোর ব্যাকরণের পাঠোদ্ধার যে বেশ কঠিন, তা সহজেই অনুমেয়। প্রেম আসে, কখনও আসে প্রত্যাখ্যান। প্রেম দিবস আসছে। শনিবার ‘প্রোপোজ় ডে’, যার বাংলা তর্জমা করলে দাঁড়ায় প্রেম নিবেদন দিবস। প্রেম নিবেদন নিয়ে টলিপাড়ার সদস্যেরা ভাগ করে নিলেন তাঁদের অভিজ্ঞতা।

অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ অবিবাহিত। তাঁর প্রেমজীবন নিয়েও অনুরাগীদের কৌতূহল। তবে রুদ্রনীল জানালেন, তিনি কখনও কাউকে প্রেম নিবেদন করেননি। ভালবাসা নিয়ে অভিনেতার নিজস্ব ব্যখ্যাও রয়েছে। রুদ্রনীল বললেন, ‘‘দু’ধরনের মানুষ রয়েছেন। এক জন অন্যের বাইরের সৌন্দর্য বা তাঁর অর্থনৈতিক অবস্থা দেখে প্রেমে পড়েন। আবার দ্বিতীয় শ্রেণির ব্যক্তির কাছে প্রাধান্য পায় পছন্দের মানুষটির জ্ঞান, বুদ্ধি, বিবেক। আমি এই দ্বিতীয় গোত্রে বিশ্বাসী।’’

রুদ্রনীলের মহিলা অনুরাগীর সংখ্যা ইর্ষণীয়। নিজে প্রেমে না পড়লেও জীবনে অজস্র প্রেমের প্রস্তাব পেয়েছেন অভিনেতা। কিন্তু কখনও তা গ্রহণ করেননি। ‘প্রেম করা’ শব্দবন্ধ নিয়েও রুদ্রনীলের আপত্তি রয়েছে। বললেন, ‘‘বিষয়টা আমার কাছে অনেকটা চাকরি করার মতো! প্রেম কোনও সিলেবাস নয়। আমি বিশ্বাস করি, প্রেম করা যায় না, প্রেম হয়। প্রেমে ভেসে যেতে হয়।’’ তাই জীবনে সেই কাঙ্ক্ষিত প্রেমের অপেক্ষাতেই রয়েছেন রুদ্রনীল। তাঁর কথায়, ‘‘কাউকেই আঘাত দিতে চাই না। ভয় করে। তাই প্রস্তাব এলেও বন্ধুত্বে আটকে রাখি। তাতে সম্পর্কটা অন্তত টিকে থাকে।’’

অভিনেত্রী সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায়ের জীবনে একাধিক বার প্রেম এসেছে। কিন্তু তার থেকেও বেশি এসেছে প্রেমের প্রস্তাব। স্কুল জীবন থেকে সূত্রপাত— প্রাপ্তির ঝুলি এখনও পূর্ণ। অভিনেত্রী কি নিজে কখনও কাউকে প্রেম নিবেদন করেছেন? একটু ভেবে বললেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত আমি শুধুমাত্র আমার মা-বাবাকে প্রোপোজ় করেছি।’’

তবে বিশেষ দিনে কাউকে প্রেম নিবেদন করতেই হবে বলে মনে করেন না সুস্মিতা। অভিনেত্রীর কথায়, ‘‘বছরের যে কোনও দিনই কাউকে মনের কথা জানানো যায়। শুধু ভাল করে বলতে হবে।’’ সুস্মিতা জানালেন, খুব ঘটা বা জাঁকজমক আয়োজনের মধ্যে দিয়ে ভালবাসা নিবেদন তাঁর পছন্দ নয়। অভিনেত্রীর কথায়, ‘‘খুব সহজ ভাবে এবং সরাসরি মনের কথা বললে আমার ভাল লাগে। কারণ তার মধ্যে একটা সাহস লুকিয়ে থাকে।’’

বর্ষীয়ান অভিনেতা পরান বন্দ্যোপাধ্যায়ের যৌবনে প্রেমের পরিবেশ কেমন ছিল? হেসে বললেন, ‘‘প্রোপোজ় করার কোনও ব্যাপারই ছিল না। আমি তোমাকে ভালবাসি— শুধু এটা তো বাঙালির প্রেম নয়।’’ পরান বিশ্বাস করেন, দুই নর-নারীর মধ্যে প্রেম সময়ের সঙ্গে জমে ওঠে। অভিনেতার কথায়, ‘‘চেহারা, শিক্ষা, ব্যবহার সব মিলিয়ে তৈরি হয় আকর্ষণ। বন্ধু এবং ভালবাসার মানুষটির মধ্যে কিন্তু পার্থক্য রয়েছে।’’

পরান বিপত্নীক। কথা প্রসঙ্গেই প্রেম এবং স্ত্রীকে নিয়ে এক মজার অভিজ্ঞতা শোনালেন তিনি। বললেন, ‘‘তাকে তো ভালবেসেই ঘরে এনেছিলাম। কিন্তু ৫০ বছর একসঙ্গে ঘর করার পর একদিন বললাম যে আমরা নিজেরা কখনও নিজেদের ‘আমি তোমাকে ভালবাসি'— এই কথা বলার সুযোগ পাইনি।’’ উত্তরে স্ত্রী নাকি তাঁকে শুধু একটিই উত্তর দিয়েছিলেন— ‘মরণ!’ পরান বললেন, ‘‘মন যদি অন্যের মনে আটকে যায়, সেটা যুগলের আচার- ব্যবহারেই বোঝা যায়। একে অপরকে চিনতে পারে। আলাদা করে আর প্রোপোজ় করার প্রয়োজন পড়ে না।’’

পরান নিজে কাউকে কোনও দিন প্রেম নিবেদন করেননি। তবে মহিলা অনুরাগীদের আচরণ তিনি বুঝতে পারেন। হাসতে হাসতে বললেন, ‘‘আমি তাঁদের তাৎক্ষণিক অনুরাগ টের পাই। কিন্তু আমাকে পছন্দ করলেও আমাকে সামনে থেকে দেখে কখনও কারও প্রেম নিবেদনের সাহস হয়নি।’’ পরানের রসবোধের পরিচয় নতুন করে দেওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই। কথা প্রসঙ্গেই মজার ঘটনা শোনালেন তিনি। বললেন, ‘‘আমিও মজা করে অনেক পরিস্থিতি সহজ করে দিই। এক অনুরাগী ছবি তোলার বাহানায় বললেন, ‘আমি একটু জড়িয়ে ধরতে চাই।’ আমি বললাম, ‘ধরবেন যখন, তা হলে দেরি করলেন কেন!’’’ পরানের মতে, তাঁর প্রতি অনুরাগীদের ভালবাসাকে তিনি সম্মান করেন। তাই কখনও কোনও আচরণ অপছন্দ হলেও তা লঘু করে দিতে জানেন অভিনেতা।

বিশেষ কোনও দিনে কাউকে প্রেম নিবেদন করার বিপক্ষে তনুশ্রী চক্রবর্তী। তবে প্রেম দিবসের আগে প্রতিটি দিন এখন ‘উৎসব’-এর মতো পালিত হয় বলে মনে করেন তনুশ্রী। তাই কেউ প্রেম নিবেদন দিবসে কাউকে মনের মধ্যে চাপা পড়ে থাকা কথা উজাড় করে দিতে চাইলে তার মধ্যে কোনও দোষ দেখেন না তনুশ্রী। অভিনেত্রী বললেন, ‘‘স্কুলজীবনে এই দিনগুলো নিয়ে আমাদের মধ্যে খুবই মাতামাতি ছিল। কিন্তু এখন তো যে কোনও দিনই একে অন্যকে ভালবাসা নিবেদন করতে পারে।’’

তনুশ্রীর জীবনে একাধিক প্রেমের প্রস্তাব এসেছে। কিন্তু তাঁকে এক বার প্রেম নিবেদন করে নাকি বিপাকেও পড়েছিলেন বিপরীতের মানুষটি। সেই প্রসঙ্গ খোলসা করতে না চাইলেও তনুশ্রী হেসে বললেন, ‘‘রাজি হইনি। প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছি, সেটাই তো সমস্যা। তার বেশি কিছু নয়।’’ তনুশ্রী নিজে কখনও কাউকে প্রেম নিবেদন করেননি। তবে জানালেন, মনের মধ্যে ইচ্ছেটা রয়েছে। অভিনেত্রীর কথায়, ‘‘মনের মতো যদি কোনও দিন কাউকে পাই, তা হলে নিশ্চয়ই তাকে প্রেম নিবেদন করব।’’

কেউ প্রেম থেকে সচেতন ভাবে দূরে, কেউ আবার মনের কথা জানানোর অপেক্ষায় দিন গুনছেন। না-বলা কথাও যে জীবনে প্রেম আনতে পারে, আবার ভালবাসার অর্থও ক্ষেত্রবিশেষে বদলে যেতে পারে। পরিস্থিতিও বদলে দিতে পারে প্রেমের সংজ্ঞা, চিরকালীন হয়ে উঠতে পারে ক্ষণিকের কিছু মুহূর্তও। তাই জীবনে প্রেম এসেছিল— এই ভাবনা থেকে প্রেমের অপেক্ষায় দিনযাপনও কখনও কখনও ভালবাসারই পথিকে রূপান্তরিত করে মানুষকে।

Propose day Tollywood Celebrities Tollywood
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy