Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Leena Gangopadhyay

Biplab-Leena: ধারাবাহিক নিয়ে লীনাকে কটূক্তি, গুলি করে মারার হুমকি বিপ্লবের, ক্ষোভ টেলিপাড়ায়

বিপ্লবের প্রশ্ন, ‘‘নিজের মা-মাসিকে খারাপ দেখানো হলে কেউ কি মেনে নেবেন? সেটা কেউ নিতে পারবেন না। তা হলে পর্দায় তাঁদের এ ভাবে দেখানো হচ্ছে কেন?’’

লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন  বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়।

লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন  বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০২২ ১৯:১৯
Share: Save:

সম্প্রতি কলকাতার এক সংবাদমাধ্যমে কাহিনী ও চিত্রনাট্যকার লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, লীনা নিজে নারী। সেই সঙ্গেই তিনি মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন। তার পরেও তাঁর সাম্প্রতিক সমস্ত ধারাবাহিকে নারীদের যথেষ্ট অবমাননা করা হচ্ছে। তাঁদের যে ভাবে তুলে ধরা হচ্ছে, প্রকারান্তরে তাঁরা অসম্মানিত হচ্ছেন। একইসঙ্গে অবক্ষয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে এই মুহূর্তে সমস্ত চ্যানেলে সম্প্রচারিত সমস্ত ধারাবাহিক। এই প্রেক্ষিতেই সংবাদমাধ্যমে তাঁর বক্তব্য, এই ভূমিকার জন্য লীনাকে গুলি করে মারা উচিত! বিপ্লবের এই বক্তব্যের ঝলক ফেসবুকে ভাগ করে নিয়েছেন জনপ্রিয় অভিনেতা ভরত কল। তিনি ট্যাগ করেছেন সহ-অভিনেতা রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায়কে। আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে ভরত প্রতিবাদও জানিয়েছেন বিপ্লবের বক্তব্য নিয়ে।

কিন্তু কী কারণে এতটা উত্তেজিত বাংলা ছবির দাপুটে খলনায়ক? কোন ঘটনার প্রেক্ষিতে এই বক্তব্য পেশ করেছেন তিনি? জানতে আনন্দবাজার অনলাইন যোগাযোগ করেছিল বর্ষীয়ান অভিনেতার সঙ্গে। বিপ্লবের যুক্তি, ‘‘একা লীনা নন, সমস্ত ধারাবাহিকের বিরুদ্ধে, চ্যানেলের বিরুদ্ধে আমার অভিযোগ। লীনার প্রতি বাড়তি অভিযোগ উনি নিজে নারী বলে। মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন হিসেবে নিজের চোখে নারীদের দুর্ভোগ দেখতে পাচ্ছেন। তার পরে তিনিই নারীদের এ ভাবে পর্দায় তুলে ধরছেন!’’ অভিনেতার আরও দাবি, ‘‘এক সময় একচেটিয়া খলনায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেছি। কিন্তু বড় পর্দায় খলনায়ক হিসেবে একটি মানুষকে খারাপ দেখানো হয়েছে। ধারাবাহিকে সবসুদ্ধ তেমন! ব্যক্তি হিসেবেও হয়তো আমি খারাপ। কিন্তু আমার থেকেও খারাপ কিছু দেখতে সত্যিই খুব বাজে লাগে।’’

বিপ্লবের দাবি, ধারাবাহিকের গল্পে কোনও সাযুজ্য নেই। প্রায় প্রতি ধারাবাহিকের গল্পই ঘুরেফিরে এক। শাশুড়ি-বউমার কূটকচালি। অথবা বউ থাকা সত্ত্বেও স্বামী দিব্যি তাঁর ‘রক্ষিতা’কে (মিস্ট্রেস) বাড়িতে এনে তুলছেন। পরিবারের সবাই সেটা মেনেও নিচ্ছেন। এক স্বামীর দুটো-তিনটে বিয়ে তো জলভাত! পাশাপাশি, ধারাবাহিকগুলো থামতেও জানে না! বছরের পর বছর ধরে চলতেই থাকে। অভিনেতার দাবি, এই কারণেই তিনি নিজে টিভি চালিয়ে ধারাবাহিক দেখেন না। কিন্তু তাঁর স্ত্রী দেখেন। এবং হাতে কাজ না থাকায় তিনিও মাঝেমধ্যে বসে পড়েন ছোট পর্দার সামনে। তখনই দেখতে পান, পরিবারের মা, মাসি, পিসি, কাকিমা— এঁরা যেন নিজেদের জায়গা থেকে নড়ে গিয়েছেন। এই প্রসঙ্গেই পর্দার খলনায়কের পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘নিজের মা-মাসিকে খারাপ দেখানো হলে কেউ মেনে নেবেন? সেটা কেউ নিতে পারবেন না। তা হলে পর্দায় তাঁদের এ ভাবে দেখানো হচ্ছে কেন? এঁরা সংসারের স্তম্ভ। এঁরা কখনওই খারাপ হতে পারেন না।’’

এই ধরনের ধারাবাহিকের চেনা গণ্ডির বাইরে উদাহরণ হিসেবে বিপ্লব উল্লেখ করেছেন ধারাবাহিক ‘প্রথমা কাদম্বিনী’র নাম। তাঁর মতে, এই ধরনের ধারাবাহিক দর্শক দেখতে চান। সমাজের পক্ষেও মঙ্গলজনক। এবং নির্দিষ্ট সময়ে ধারাবাহিকটি শেষ হয়েছে। ঠিক এ রকমই ছিল আগের প্রজন্মের ধারাবাহিকগুলোও। যেমন, ‘তেরো পার্বণ’, ‘গোরা’, ‘জননী’, ‘জন্মভূমি’। বিপ্লবের বক্তব্য, এই ধারাবাহিকগুলোয় নিটোল গল্প থাকত। দর্শকেরা দেখে তৃপ্তি পেতেন। এখনকার কোনও ধারাবাহিকে এই ধরনের গল্প দেখানো হয়? সপাটে তিনি বলেছেন, ‘‘আমি একটি চ্যানেলে একটি ধারাবাহিক পরিচালনার জন্য যোগাযোগ করেছিলাম। সেই চ্যানেল থেকে সোজাসুজি বলে দেওয়া হয়েছে, কোনও শিক্ষামূলক ধারাবাহিক দেখানো হবে না।’’ বিপ্লবের প্রশ্ন, বহুল উপার্জনের কারণে এ ভাবেই কি সমাজকে উচ্ছন্নে পাঠাবে সমস্ত ধারাবাহিক? কারণ, প্রতিটি বাড়ির সব বয়সের দর্শক এই ধারাবাহিক দেখেন। তাঁরা কী শিখছেন?

সম্প্রতি কেন্দ্র থেকেও ঘোষণা করা হয়েছিল, প্রয়োজনে আইনের সাহায্যে ছবি এবং ধারাবাহিকে সম্প্রচারিত খলনায়িকা চরিত্র নিষিদ্ধ করা হবে। সেই প্রসঙ্গ তুলতেই বিপ্লবের জবাব, ‘‘তা হলেই বুঝুন, ধারাবাহিকের মান কোথায় নেমেছে! আমি তো আর কেন্দ্রকে এই নিয়ে অভিযোগ জানাতে যাইনি।’’ কটাক্ষ করেন, তিনি থাকলে এই ধরনের অন্যায়ের প্রতিবাদ করবেন। তাই বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়কে কোনও ধারাবাহিকে অভিনয়ের জন্য ডাকা হয় না।

বর্ষীয়ান অভিনেতার গোটা বক্তব্যেই আপত্তি অভিনেতা ভরত কলের। তিনি অত্যন্ত ক্ষুব্ধ বিপ্লবের এই আচরণে। তাঁর কথায়, “বিপ্লববাবুর ভাল না-ই লাগতে পারে ধারাবাহিক। নিন্দেও করতেই পারেন। তা বলে উনি কি বলতে পারেন গুলি করে খুন করে দেওয়া উচিত লীনা গঙ্গোপাধ্যায়কে? আমি এত তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।” ভরতের আরও দাবি, লীনা তাঁর বড় দিদির মতো। তাঁর পরিবারের পাশে নানা সময়ে দাঁড়িয়ে পরিবারেরই এক জন হয়ে উঠেছেন। সেই লীনার গায়ে কোনও আঁচড় লাগলে সেটা মেনে নেবেন না বলেই দাবি ভরতের। তাই নিজের মতো করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন নেটমাধ্যমে।

আর যাঁকে ঘিরে এত কাণ্ড, কী বলছেন সেই লীনা গঙ্গোপাধ্যায়? জনপ্রিয় ধারাবাহিক লেখিকা তথা মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সনের দাবি, এ নিয়ে তাঁর কোনও বক্তব্যই নেই। তবে বিষয়টি টেলিপাড়ার অনেকেই ফোন করে তাঁকে জানিয়েছেন। অনুরোধ করেছেন উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Leena Gangopadhyay Biplab Chatterjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE