তারকাদের বিরুদ্ধে মাঝে মধ্যেই পদক্ষেপ করে থাকে বৃহন্মুম্বই পুরসভা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাঁরা বেআইনি নির্মাণ করছেন বা পুরনো ভবন সংস্কারের ক্ষেত্রে আইনকে বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছেন বলে অভিযোগ ওঠে। এই তালিকায় কঙ্গনা রনৌত থেকে অমিতাভ বচ্চন, মিঠুন চক্রবর্তী— বাদ নেই কেউই। এ বার শাহরুখ খানের পালা!
মুম্বইয়ে শাহরুখ খানের বিলাসবহুল বাংলো ‘মন্নত’-এ সংস্কার কাজ কয়েক মাস ধরেই চলছে। নিজেরা অন্যত্র উঠে গিয়ে বাংলো রক্ষণাবেক্ষণের কাজ শুরু করেছেন বলিউডের ‘বাদশাহ’। কিন্তু মেরামতির কাজ করতে গিয়েই নাকি শাহরুখ উপকূলীয় অঞ্চলে সংস্কারের নিয়ম লঙ্ঘন করে ফেলেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে এমনই অভিযোগ জমা পড়েছে বন দফতর এবং বৃহন্মুম্বই পুরসভার কাছে। যার জেরে শুক্রবার ব্যান্ডস্ট্যান্ড এলাকার দুই বিভাগের কর্মীরা যৌথ ভাবে মন্নত পরিদর্শনে যান। এ প্রসঙ্গে বনবিভাগের এক উচ্চপদস্থ কর্তা পরে সংবাদমাধ্যমকে জানান, বেআইনি সংস্কারের অভিযোগ পেয়েই দুই বিভাগ এক যোগে শাহরুখের বাংলোয় হানা দিয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে শীঘ্রই প্রতিবেদন তৈরি করে জমা দেবেন তাঁরা।
যদিও প্রযোজক-অভিনেতার আপ্ত সহায়ক বিষয়টিকে অস্বীকার করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, কোনও বেআইনি সংস্কার হচ্ছে না। নির্দেশিকা মেনেই যাবতীয় কাজ হচ্ছে।
পুরসভার পক্ষ থেকেও বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন পরিদর্শনে উপস্থিত উচ্চপদস্থ আধিকারিক। তাঁর দাবি, বন দফতরের নির্দেশ পেয়েই তাঁরা যৌথ পরিদর্শনে এসেছেন। এ ছাড়া, তাঁদের এই বিষয়ে আলাদা কোনও ভূমিকা নেই। মন্নত সংস্কারের কাজে নিযুক্ত কর্মীরা ইতিমধ্যেই উপস্থিত দুই বিভাগের কর্তাব্যক্তিদের জানিয়েছেন, তাঁদের কাজে বাংলো সংস্কার সংক্রান্ত যা যা নথি রয়েছে সবই তাঁরা সংশ্লিষ্ট দফতরে জমা দেবেন।
এ দিকে মন্নতে প্রশাসনীয় হানার খবর পেয়েই বলিউডের অন্দরে শুরু হয়েছে কানাঘুষো। এমনও শোনা যাচ্ছে, একদিন আগে প্রাক্তন আইপিএস অফিসার এবং আইনজীবী ওয়াই পি সিংহ অভিযোগ জানিয়েছিলেন, মন্নতের গঠনগত নকশা নাকি ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য ‘ভিলা ভিয়েনা’র নকশা দেখে বানানো। দুই বাংলোর নকশা হুবহু এক। প্রাক্তন আইপিএস অফিসার অভিযোগ জানানোর একদিন পরেই শাহরুখের বাংলোয় উপস্থিত বন এবং পুরসভার কর্মীরা!
আরও পড়ুন:
অভিযোগকারীর আরও দাবি, ২০০৫ সালে যখন শাহরুখ বাংলো নির্মাণ করেছিলেন তখন সেটি সাততলার বাসভবন ছিল। শাহরুখের বাড়িটি ছিল ‘ভিলা ভিয়েনা’র ঠিক পিছনেই। সেই সময় নগর-ভূমি সীমা আইন কার্যকর থাকায় ‘বাদশা’ খান বড় আবাসন তৈরি করতে পারেননি। এই আইনি বাধা অতিক্রমের জন্য, শাহরুখ এবং তাঁর স্ত্রী গৌরী খান নিজেদের নামে বম্বে পুরসভা থেকে ১২টি ছোট স্বাধীন ফ্ল্যাট তৈরির অনুমতি নিয়েছিলেন। সেই ১২টি ফ্ল্যাট পরে একত্রিত করে গড়ে ওঠে শাহরুখের প্রাসাদোপম বাংলো। তারকা দম্পতি পরে তার নাম রাখেন মন্নত। প্রাক্তন আইপিএস অফিসার এবং আইনজীবীর আরও অভিযোগ, “পুর কর্মকর্তাদের সাহায্য এবং যোগসাজশ ছাড়া এই বাংলো নির্মাণ কখনই সম্ভব হত না। নগর-ভূমি সীমা আইন কার্যকর না থাকায় বিষয়টি আরও সহজ হয়েছে।”
২০২১-এ অমিতাভ বচ্চনের বিরুদ্ধে বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ পাঠিয়েছিল বৃহন্মুম্বই পুরসভা। ‘শাহেনশা’র বিরুদ্ধে দফতরের অভিযোগ, মুম্বইয়ের গোরেগাঁও-এ ফিল্মসিটির কাছে বেশ কয়েকটি বিলাসবহুল বাংলো তৈরি হচ্ছে। অমিতাভও সেখানে একটি বাংলো কেনেন। ওই বাংলোগুলির নকশা নাকি পুরসভার নির্দেশ মেনে তৈরি হয়নি। যে কারণে, অমিতাভ-সহ যাঁরাই বাংলো কিনেছিলেন তাঁদের বাংলোর বেআইনি অংশ ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ জারি হয়। একই ভাবে এক মাস আগে বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ ওঠে আরও এক খ্যাতনামী তারকা মিঠুন চক্রবর্তীর বিরুদ্ধেও। ১০ মে জারি করা নোটিসে বৃহন্মুম্বই পুরসভা (বিএমসি) দাবি করেছে, মহারাষ্ট্রের মালাড মাধ এলাকার এরাঙ্গল গ্রামে তারকার যে বাড়িটি রয়েছে, সেখানে অবৈধ ভাবে সংস্কার করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে তারকার বাড়ির একতলার অংশ নিয়েও। মিঠুনও অবৈধ ভাবে ভবন সংস্কারের প্রসঙ্গ অস্বীকার করেছিলেন। তিনি আইনি ভাবে পুরো বিষয়টি সামলাচ্ছেন, জানিয়েছেন সংবাদমাধ্যমকে।