‘গঙ্গুবাঈ কাথিয়াওয়াড়ি’র ক্যামেরা সামলেছেন সুদীপ চট্টোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
শনিবার ২৮তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ‘মাস্টার ক্লাস’ শেষ করে সবে ভিআইপি লাউঞ্জে এসে বসেছেন। হাতে কফির কাপ। আধ ঘণ্টার মধ্যে হোটেল হয়ে এয়ারপোর্টে মুম্বইগামী বিমান ধরতে হবে। কারণ, তিনি কলকাতায় আসছেন বলে সঞ্জয় লীলা ভন্সালী ওয়েব সিরিজ় ‘হীরামাণ্ডি’র শুটিং দু’দিন বন্ধ রেখেছেন! তিনি সুদীপ চট্টোপাধ্যায়। ভন্সালীর নিজের ‘ঘর’-এর ডিওপি। ‘বাজিরাও মস্তানি’, ‘পদ্মাবত’ বা হালের ‘গঙ্গুবাঈ কাথিয়াওয়াড়ি’ ছবিতে যাঁর ক্যামেরা যে কোনও শিক্ষানবিশের কাছে ‘মাস্টার ক্লাস’-এর চেয়ে কম কিছু নয়।
৫ বছর পর কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে এলেন সুদীপ। বলছিলেন, ‘‘সে বার আমাকে হঠাৎ করেই মুম্বই ফিরে যেতে হয়েছিল। কারণ ‘পদ্মাবত’-এর জন্য পরিস্থিতি তখন খুবই সঙ্কটজনক হয়ে গিয়েছিল। বাড়ির বাইরে সারা ক্ষণ পুলিশ! এ বারে এসে দেখলাম কত কিছু বদলে গিয়েছে। উৎসবের ব্যবস্থাপনা আরও পেশাদার। আমার কলকাতার বন্ধুরাও আমাকে একই কথা বলছে।’’
ভন্সালীর ‘গঙ্গুবাঈ…’ আগামী বছর ‘বাফটা এবং অস্কারের দৌড়ে শামিল হতে চলেছে। সুদীপ কিন্তু বিষয়টা নিয়ে এখনই ততটা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে চাইছেন না। বললেন, ‘‘গর্বের বিষয় তো বটেই। কিন্তু ওই ছবিটা তো অতীত। সত্যি বলতে, এখন ‘হীরামাণ্ডি’ এবং পরের ছবিটা নিয়ে লড়াই চলছে। তাই আনন্দ করার মতো আমাদের হাতে সময় নেই।’’ এই ওয়েব সিরিজ়ে সোনাক্ষী সিন্হা, মণীষা কৈরালা, কিয়ারা আডবাণীর মতো একগুচ্ছ তারকা রয়েছেন। স্বাধীনতা-পূর্ব লাহোরের পতিতাপল্লি কাহিনির প্রেক্ষাপট। সেটের আবহাওয়া কী রকম? সুদীপের কথায়, ‘‘অসাধারণ সব অভিনেতা। তাই স্বাভাবিক ভাবেই ইউনিটের প্রত্যেকে কাজটা নিয়ে খুবই উত্তেজিত।’’
টলিপাড়ায় সুদীপের শেষ কাজ ছিল সৃজিত মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ‘চতুষ্কোণ’। মুম্বইতে একের পর এক মাস্টারপিস তৈরি করার পর বাংলার সঙ্গে এতটা দূরত্ব কেন? নিমেষে উত্তর এল, ‘‘আমার কাছে কোনও অফার আসেনি, তাই।’’ বলিউডের আর টলিপাড়ায় ছবি তৈরির বাজেটের মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। তাই কি সময়ের সঙ্গে টলিপাড়ার কাছে ‘দূরের গ্রহ’ হয়ে উঠেছেন সুদীপ? তাঁর সাফ উত্তর, ‘‘বড় বড় ছবি করায় হয়তো মানুষের ধারণা তৈরি হয়েছে যে, আমি প্রচুর পারিশ্রমিক নিই! এটা একদমই ঠিক নয়। বাংলা ছবি করতে হলে আমি সেই বাজেটে নিজেকে ফিট করতে রাজি।’’ এই প্রসঙ্গেই সুদীপ বললেন, ‘‘যে বয়সে ছবি করতে এসেছিলাম, তখন কাজের সঙ্গে প্রচুর উপার্জনের কোনও সম্পর্ক ছিল না। আজও নেই। আরে, একটা হিন্দি ছবি করে যে পারিশ্রমিক পাই, তার পর দু’-তিনটে বাংলা ছবি তো আমি বিনা পারিশ্রমিকেই করতে পারি। তার পরেও কেন অফার আসে না, জানি না!’’
বাংলায় যে নতুন ধরনের কাজ হচ্ছে সে বিষয়ে ওয়াকিবহাল সুদীপ। ‘মন্দার’ ও ‘বল্লভপুরের রূপকথা’ দেখে ফেলেছেন। এমনকি, অনেককে দেখিয়েওছেন। ক্যামেরার জাদুকরের কথায়, ‘‘মুম্বইতে টিকিট কেটে দেখেছি। আমি তো লোকজনকে ডেকে ডেকে বলি যে, তোমরা বাজেট নিয়ে মাথা ঘামাও। দেখো স্বল্প বাজেটে বাংলায় কী হচ্ছে। সত্যিই সৌমিক (হালদার) অসাধারণ কাজ করেছে।’’
বলিউডে কাজ করতে গেলে নতুনদের জন্য সুদীপের পরামর্শ, ‘‘আমি কলকাতার এক সরকারি অফিসারের ছেলে। আমিও তো কাউকে চিনতাম না। নিজের উপর শুধু বিশ্বাসটুকু ছিল।’’ এর পাশাপাশি নতুনদের জন্য জাতীয় পুরস্কারজয়ী ডিওপির দ্বিতীয় টিপ্স, ‘‘বই পড়তে হবে। আমাদের কাজ তো কল্পনাকে পর্দায় ফুটিয়ে তোলা। বই পড়লে সেই চিত্রকল্পের জগৎটা চোখের সামনে খুলে যায়। আমি পাগলের মতো বই পড়তে ভালবাসি।’’ মজার বিষয়, ব্যস্ততার মধ্যেও সিনেমা, ওয়েব সিরিজ় দেখার তুলনায় তিনি অনেক বেশি বই পড়েন বলেই জানালেন সুদীপ।
ভন্সালীর সঙ্গে সুদীপের দীর্ঘ দিনের সম্পর্ক। বলা যেতে পারে, তাঁরা খুব ভাল বন্ধু। সেটে আর সেটের বাইরে মানুষটার মধ্যে পার্থক্য কতটা? ‘চক দে ইন্ডিয়া’র ডিওপির কথায়, ‘‘১৯৪২: আ লাভ স্টোরি’ ছবিতে আমি যখন শিক্ষানবিশ হয়ে যোগ দিই, তখন ওই ছবিতে তিনি সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছিলেন। তাই বুঝতেই পারছেন, আমাদের সম্পর্কটা খুবই পুরনো এবং ব্যক্তিগত।’’ হয়তো তাই দু’দিনের জন্য কলকাতায় আসার ছুটি পেতে সুদীপকে বিশেষ কাঠখড় পোড়াতে হয়নি। হাসতে হাসতে সুদীপ বললেন, ‘‘কারণ কলকাতায় আসার সুযোগ পেলে আমি যে কতটা খুশি হই, সেটা উনি জানেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy