Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Entertainment News

‘সোহিনীর সঙ্গে প্রেমের পর স্যারকে বলেছিলাম, ওকে বিয়ে করতে চাই’

সপ্তর্ষি মৌলিক। অভিনেতা। নাটকের মঞ্চে অনায়াস গতি তাঁর। তবে টেলিভিশনে প্রথম কাজ ‘চোরে চোরে মাসতুতো ভাই’ টেলিকাস্ট হবে আগামী রবিবার। ব্যক্তিজীবনে সপ্তর্ষি অভিনেত্রী সোহিনী সেনগুপ্তর স্বামী। এক দিকে কেরিয়ার অন্য দিকে ব্যক্তিজীবন— আড্ডায় ছুঁয়ে গেল সব প্রসঙ্গই।সপ্তর্ষি মৌলিক। অভিনেতা। নাটকের মঞ্চে অনায়াস গতি তাঁর। তবে টেলিভিশনে প্রথম কাজ ‘চোরে চোরে মাসতুতো ভাই’ টেলিকাস্ট হবে আগামী রবিবার। ব্যক্তিজীবনে সপ্তর্ষি অভিনেত্রী সোহিনী সেনগুপ্তর স্বামী। এক দিকে কেরিয়ার অন্য দিকে ব্যক্তিজীবন— আড্ডায় ছুঁয়ে গেল সব প্রসঙ্গই।

সপ্তর্ষি এবং সোহিনী।

সপ্তর্ষি এবং সোহিনী।

স্বরলিপি ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০১৯ ১৩:২৮
Share: Save:

সপ্তর্ষি মানেই তো নাটকের মঞ্চ। টেলিভিশনে কাজ কি প্রথম?

হ্যাঁ। সিনেমা বা টেলিভিশনে এটা আমার প্রথম কাজ।

এই গল্পটাকেই ডেবিউয়ের জন্য বেছে নিলেন কেন?

এটার একটা সুন্দর গল্প আছে। ‘পাঞ্চজন্য’ বলে আমাদের একটা প্রোডাকশন আছে। সেটাতে আমি লিড করি। কৃষ্ণের চরিত্র। রাজদা সেটা দেখতে গিয়েছিল। দেখে ওর ভাল লাগে। গ্রিনরুমে গিয়ে বলেছিল, কাজ খুব ভাল হয়েছে। যোগাযোগ থাকবে আমাদের। তার পর রাজদা-শুভশ্রীর বিয়ে হয়। সেখানে আমরা যাই। সেখানেও দেখা হয়। কথা হয়। তার পর রাজদা বলে, কোনও কাজ হলে তোকে বলব। এক দিন ওর অফিসে গিয়েছিলাম। বিভিন্ন কথা বলতে বলতে এই প্রজেক্টটার কথা বলে। দেখ, এখানে একটা চরিত্র আছে। করতে পারিস কি না। সে ভাবেই কাজটা হয়েছে।

অর্থাত্ রাজ চক্রবর্তী বললেন বলে রাজি হলেন?

রাজদা বলেছে বলে নিশ্চয়ই রাজি হলাম। রাজদাই তো প্রথম সুযোগ দিল। তবে স্ক্রিপ্টও ভাল লেগেছিল। আর রাজদা আমার অভিনয় দেখেছে। সেটা বুঝেই একটা চরিত্র দিয়েছে। খুব এন্টারটেনিং কাজ ছিল। স্ক্রিপ্টটা পড়ে খুব মজা লেগেছিল। ভেতরে অনেক কিছু বলা রয়েছে। সিরিয়াস নোটে নয়। মজা করে বলা হয়েছে।

আরও পড়ুন, প্রেম বা বিয়ে করার জন্য কলকাতায় ছেলে পাওয়া মুশকিল: পায়েল

নাটকের মঞ্চ আর সিনেমার শুটিং তো একেবারেই আলাদা...

ঠিক। আসলে আমার মনে হয়েছিল, এক জন অভিনেতা হিসেবে বিভিন্ন জিনিস এক্সপ্লোর করা উচিত। ‘পাঞ্চজন্য’র পর আমি দুটো নাটক লিখেছি। ওটা একদম আলাদা ব্যাপার। আমি কবিতা লিখি। র‌্যাপ করি। তার সঙ্গে এটাও একটা চ্যালেঞ্জ। এখন তো শুধু ওই হিরো ইমেজটা নেই। বিভিন্ন রকম করতে পারাটা কাজ। রণবীর সিংহ যেমন ‘সিম্বা’ করছে। আবার ‘গাল্লি বয়’ও করছে। আমার মনে হয়েছিল, এটা করতে পারলে অ্যাজ অ্যান অ্যাক্টর আমার গ্রোথ হবে। কারণ এই ধরনের কাজ আগে করিনি কখনও।

এখানে তো আপনি একা প্রধান চরিত্রে নন। আরও এক অভিনেতা আছেন। দুই অভিনেত্রী রয়েছেন। মনে হয়নি এক্সপোজার কমে যাবে?

না! মনে হয়নি। সৌরভের সঙ্গে অসাধারণ বন্ডিং হয়েছে। প্রথম দেখা হওয়ার পর বলেছিলাম চল, ১০ মিনিট আড্ডা মারি। থিয়েটারে যেমন হয়, দু’বছর ধরে প্রচন্ড রিহার্সাল হল, এখানে তো সে সময়টা পাই না। একটা প্রজেক্টে অত সময় দিলে কাজ সার্কুলেট হবে না। আমাদের আড্ডা দিয়ে একটা বন্ধুত্ব হয়েছে। সেই কেমিস্ট্রিটা আশা করি দর্শকের দেখে ভাল লাগবে। অনেক কিছু ইম্প্রোভাইস করে করেছি আমরা। সেই ফ্রিডমটা আমাদের দেওয়া হয়েছিল।


‘চোরে চোরে মাসতুতো ভাই’-এর প্রধান চার অভিনেতা।

আপনার শুরুটা কেমন ছিল?

আমি থিয়েটারের সঙ্গে একেবারেই যুক্ত ছিলাম না। উত্তরপাড়ায় বাড়ি আমার। সেখানে স্কুলিং। তার পর সেন্ট পলসে ইকো স্ট্যাট ম্যাথ নিয়ে ভর্তি হয়েছিলাম। অত্যন্ত খারাপ রেজাল্ট করি। তখন পড়াশোনায় কোনও ইন্টারেস্ট ছিল না।

তা হলে?

বাংলা ব্যান্ড, লেখায় ইন্টারেস্ট ছিল।

তা হলে ইকো স্ট্যাট ম্যাথ নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন কেন, বাড়ির প্রেশার?

আমার বাবা অ্যাপ্লায়েড ম্যাথামেটিক্সের লোক। আর মা শান্তিনিকেতনের কলাভবন থেকে পাশ করেছে। ফলে দু’টোই ছিল। মা’র একটা বুটিক আছে। নিজে ডিজাইন করে। আমি ছোট থেকেই দেখেছি মা এমপ্লয়েড। বাবাকে দেখেছি সেন্ট্রাল গভর্নমেন্টের অডিট ডিপার্টমেন্টে সিনিয়র অডিটর। বাবা চেয়েছিল পড়াশোনা করি। খারাপ স্টুডেন্ট ছিলাম, সেটা নয়। অ্যাভারেজ বলব। সেখানে থেকে টুয়েলভ অবধি ঠিক ছিল। তার পর একটু ঘেঁটে গিয়েছিলাম। তবে কোনও পার্টিকুলার সাবজেক্ট পড়তে হবে, এমন চাপ ছিল না।

আরও পড়ুন, ‘সবাই দেখা হলে বলেন, খুব ভাল অভিনয় কর, কিন্তু কেউ ডাকেন না’

খারাপ রেজাল্টের প্রভাবও খারাপ হয়েছিল?

আসলে ওই সাবজেক্টে আমি কোনও ইন্টারেস্ট পেলাম না। প্রথম দু’টো বছর কোনও রকমে হয়ে গেল। থার্ড ইয়ারে ফেল করলাম। তার পর থেকেই মনে হল, এটা আমার জায়গা নয়। কিন্তু কী করব বুঝতে পারছি না। তার পর থেকে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছি। বাড়িতে বসে থেকেছি। আই ওয়াজ অ্যাডিকটেড ফর কাপল অফ ইয়ারস। সেটা খারাপ সময়। কিন্তু সেখান থেকে অনেক শিখেওছি। বার বার হেরে গিয়েও যে…।

নান্দীকারে জীবন শুরু করলেন কী ভাবে?

তখন ২৩-২৪ বছর বয়স। কাগজওয়ালাকে পুরনো কাগজ বিক্রি করতে গিয়ে দেখি নান্দীকারের একটা ওয়ার্কশপ আয়োজন করেছে, সেটা স্টার্ট হবে, তার বিজ্ঞাপন। মনে আছে, প্রথম যে দিন গেলাম অনেক ছেলেমেয়ে বসেছিল। আমার এক জন মানুষের সঙ্গে আই কনট্যাক্ট হয়। সেটা হচ্ছে স্যার। রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত। আই কনট্যাক্টটা প্রায় দু’মিনিট ধরে ছিল। আমার মনে হয় আমি আমার জায়গাটা পেয়ে গিয়েছি। এই লোকটার কাছে আমি রোগা, আমার বড় চুল, আমি কোনও দিন গাঁজা খেয়েছি, আমি ফেল করেছি— এগুলো কিছু যায় আসে না। চোখে চোখে একটা কমিউনিকেশন হয়েছিল। তার পর থেকে আমার মনে হয়েছিল এই জায়গাতে আমি ফার্স্ট হতে পারব। ২০১২ সালের ঘটনা।

আরও পড়ুন, ‘আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে রিজেক্ট করার সুযোগ অনেক বেশি’

রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত মহীরুহের মতো। ২০১২ থেকে তাঁকে দেখছেন। ইতিমধ্যেই পারিবারিক সম্পর্কও হয়েছে। কতটা পরিবর্তন লক্ষ্য করেছেন?

স্যার সব সময়েই খুব মডার্ন। স্যারের সঙ্গে সব বিষয়ে আলোচনা করা যায়। আমার যখন সোহিনীর সঙ্গে প্রেম হয়, তখনও আমি স্যারকে গিয়ে বলেছিলাম আপনার মেয়েকে আমি বিয়ে করতে চাই (হাসি)।

একটু তো ভয় ছিলই। আফটার অল রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত। তবুও বুকে বল নিয়ে বলেছিলাম (হাসি)।

তার পর?

স্যার পাশের ঘরে গিয়ে একটু হেসে আবার গম্ভীর মুখে আমার সামনে এসে বসেছিলেন। বলেছিলেন, পারবে? আমি বলেছিলাম, হ্যাঁ স্যার।


খারাপ সময় থেকে অনেক শিখেওছি, বললেন অভিনেতা।

সোহিনীর কথাও জানতে চাইব। বন্ধু, প্রেমিকা, স্ত্রী, মেন্টর— কোন ভূমিকাকে এগিয়ে রাখবেন?

দেখুন, ‘নান্দীকার’-এ আসার আগে কারও কাজ দেখিনি আমি। আউট অব দ্য ওয়ার্ল্ড বলতে পারেন। সেখান থেকে সে বছর ফেস্টিভ্যালে প্রথম ‘মাধবী’ দেখেছিলাম। আমার মনে হয়েছিল, অসাধারণ। তার পর থেকে ওর প্রতি একটা রেসপেক্ট তৈরি হয়। আমার মনে হয়, রেসপেক্ট ছাড়া কোনও সম্পর্ক বেশি দিন এগোতে পারে না। যখন কমিউনিকেট করি, আমার মনে হয়েছিল আমার বয়সী কেউ কথা বলছে। লং লস্ট ফ্রেন্ডের সঙ্গে কথা বলছি, মনে হয়েছিল। আমাদের ১৪ বছরের বয়সের ডিফারেন্স কোনও এফেক্ট করেনি। আমার ওর সঙ্গে কমিউনিকেট করে মনে হয়েছিল, এই কথাগুলোই বলতে চাইছিলাম। কেউ বুঝতে পারছিল না। সেই জায়গা থেকে প্রথম ও বন্ধু। অ্যাজ আ ডিরেক্টর কোন অ্যাক্টর কতটা কী পারতে পারে, সেটা নিয়ে ওর ভেতরে একটা আন্ডারস্ট্যান্ডিং আছে। ডিরেকশনের সময় ও আমার স্ত্রী নয়। বকে আমাকে। যদি ভুল করি, সকলের সামনে অত্যন্ত খারাপ ভাবে বলে। সেটা এনজয় করি। কারণ ওটা আমাকে একটা পুশ দেয়।

আরও পড়ুন, বিয়ের পরের জীবনটা এনজয় করছি, বলছেন শুভশ্রী

রুদ্রপ্রসাদ, স্বাতীলেখা, সোহিনী— এঁরা আপনার পরিবার। অভিনেতা হিসেবে এঁদের সঙ্গে লড়াই আছে?

সোহিনী, স্যার বা ম্যাম যখন অভিনয় করত আমার মনে হত আমাকেও করতে হবে। এটা অ্যাক্টরের সঙ্গে অ্যাক্টরের হেলদি কম্পিটিশন। আমাকে অ্যাচিভ করতে হবে। সেটা সব সময় হয় আমার। শুধু ওরা নয়। যে কেউ ভাল অভিনয় করলেই এটা মনে হয়।

এই পরিবারের সঙ্গে জড়িয়ে আপনার কতটা পরিবর্তন হয়েছে?

এখানে নিজের মতামতটা তীব্র ভাবে বলতে পারি। সেটার একটা কাউন্টার উত্তর পাই। সেটা আমাকে নতুন কিছু ভাবতে সাহায্য করে। ওরা আসলে কখনও কিছু চাপিয়ে দেয়নি আমার ওপর। আমি যেমন উইয়ার্ড জামাকাপড় পরি, স্যারের সামনে সানগ্লাস পরে ঘুরি— তাতে স্যার রাগ করেন না। আনন্দই পান।

(সেলেব্রিটি ইন্টারভিউ, সেলেব্রিটিদের লাভস্টোরি, তারকাদের বিয়ে, তারকাদের জন্মদিন থেকে স্টার কিডসদের খবর - সমস্ত সেলেব্রিটি গসিপ পড়তে চোখ রাখুন আমাদের বিনোদন বিভাগে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE