দাঁত মাজার আগে এক বার ভেবে দেখবেন, সারা রাত ব্রাশটি ঠিক কোনখানে ছিল। পাশেই কি কমোড বা প্যান? শৌচালয়ে খোলা পড়ে থাকা ব্রাশে কিন্তু খুব সহজেই রোগজীবাণু বাসা বাঁধতে পারে। আর সেই ব্রাশ দিয়েই আপনি রোজ রোজ মুখ পরিষ্কার করেন! তা হলে কি আদৌ, প্রকৃত অর্থে আপনার মুখগহ্বর পরিষ্কার হচ্ছে, না কি উল্টে শরীরের ভিতরে প্রবেশ করছে নানা ধরনের রোগজীবাণু? টুথব্রাশ কী দিয়ে জীবাণুমুক্ত করা উচিত?
কেন টয়লেটের কাছে টুথব্রাশ রাখা ঠিক নয়?
টয়লেট ফ্লাশ করার সময়, বর্জ্য পদার্থের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা বাতাসে মিশে যায়। তার সঙ্গে মিশে যায় মলের সঙ্গে বেরিয়ে আসা জীবাণুও। এই কণাগুলি বাতাসে ভেসে বেড়ায় এবং উন্মুক্ত উপরিস্থলের উপর পড়ে যায়। একাধিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ফ্লাশ করার ফলে অন্ত্রের ব্যাক্টেরিয়াগুলি জলীয় কণার ভর করে ভেসে বেড়ায়। এই কণাগুলি বাতাসে দীর্ঘ ক্ষণ ভেসে থাকে, যা আশপাশের বস্তুগুলিতে স্থির হয়ে বাসা বাঁধতে পারে। যদি আপনার ব্রাশ কমোড বা টয়লেটের কাছাকাছি থাকে, তা হলে সেই জীবাণুগুলি ব্রাশের উপর গিয়েই বসে, কারণ এই ধরনের কণা বেশ কয়েক ফুট উপরে উঠতে এবং বাইরে বেরোতে পারে। তার পরেও আপনি সেই নোংরা ব্রাশই ব্যবহার করেন, কারণ খালি চোখে সেই ময়লাগুলি ধরা পড়ে না। আর ব্রাশ থেকে মুখের ভিতরে চলে যায় জীবাণু। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ব্রাশে জীবাণু বাড়তে পারে, আর এতে মাড়ি বা দাঁতের সমস্যার ঝুঁকিও বাড়ে। পাশাপাশি, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত একাধিক সমস্যা তৈরি হতে পারে আপনার অজান্তেই। তাই রোগমুক্ত থাকতে টুথব্রাশ এমন জায়গায় রাখুন, যেখানে জীবাণু আক্রমণের ঝুঁকি কম।
টুথব্রাশ কোথায় রাখেন? ছবি: সংগৃহীত।
কী ভাবে জীবাণুমুক্ত করবেন ব্রাশ?
প্রতি দিন ব্রাশ বদলানো সম্ভব নয়, তাই ব্রাশকে পরিষ্কার এবং জীবাণুমুক্ত রাখার উপায় খুঁজতে হবে। অনেকেই অ্যান্টিসেপ্টিক মাউথওয়াশ বা নুন-জলের মিশ্রণ ব্যবহার করেন ব্রাশ জীবাণুমুক্ত করার জন্য। তবে তার থেকে বেশি কার্যকরী দু’টি উপায়ের কথা উল্লেখ করা হল।
হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড: কিছু গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ৩ শতাংশ হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডের দ্রবণে টুথব্রাশ ভিজিয়ে রাখলে, তাতে থাকা যে কোনও ব্যাক্টেরিয়া ধ্বংস হতে পারে।
ইউভি স্যানিটাইজ়ার- একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ব্রাশ জীবাণুমুক্ত করার জন্য অতিবেগনি স্যানিটাইজ়ার বেশ কার্যকরী। যদিও এই স্যানিটাইজ়ার দিয়ে ব্রাশ পরিষ্কার করার পর তা দাঁতের ক্ষতি করতে পারে।
ব্রাশ কী ভাবে রাখা নিরাপদ?
· ব্রাশ কখনওই টয়লেটের খুব কাছে রাখবেন না। সম্ভব হলে ১ মিটার বা তার বেশি দূরত্বে, শুকনো এবং মুক্ত হাওয়ায় রাখুন। একটি আলাদা ক্যাবিনেট বা শেল্ফে বন্ধ রাখলে তা-ও ভাল।
· টয়লেটের ফ্লাশ করার আগে সিটের ঢাকনা বন্ধ করুন। এতে ফ্লাশের সময়ে জীবাণু বাতাসে কম ছড়াবে।
· ব্রাশ ব্যবহারের পর ভাল করে ধুয়ে শুকিয়ে রাখুন। উপরিভাগ ভেজা থাকলে জীবাণু বৃদ্ধি পাবে বেশি।
· আলাদা একটি হোল্ডারে থাকলে ভাল। তবে সেটিতে যেন জল বেরোনোর ছিদ্র থাকে।
· প্রতি ৩–৪ মাস অন্তর ব্রাশ বদলে নিন। পুরনো, জীর্ণ ব্রাশে জীবাণু বেশি আটকে থাকে।