Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
Chamak Hassan

Chamok Hasan: ‘বাবা বেবি ও’-র সুর দিতে দিতেই আমি দ্বিতীয় বার বাবা হলাম: চমক হাসান

চমক হাসানের দাবি, উইন্ডোজ, নন্দিতাদি-শিবুদা কলকাতায় এসে কাজের ইচ্ছে জাগিয়ে দিয়েছেন।

 চমক হাসান

চমক হাসান

উপালি মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২১ ১৬:২৯
Share: Save:

গানে আছেন, গণিতেও! কী করে? জন্ম বাংলাদেশে। কর্ম ক্যালিফোর্নিয়ায়। সেখান থেকেই উইন্ডোজ প্রযোজনা সংস্থার নতুন ছবি ‘বাবা বেবি ও’-র দু'টি গানে সুর দিলেন জনপ্রিয় ইউটিউবার চমক হাসান। ঝুলিতে আর কী কী চমক আছে তাঁর? উপুড় করলেন আনন্দবাজার অনলাইনে

প্রশ্ন: গান, গণিতে সমান পরাদর্শী! গানেও বুঝি অঙ্ক থাকে?

চমক: আমার বাড়ি বাংলাদেশের কুষ্ঠিয়ায়। সেখানে বাড়ির কাছেই লালনের আখড়া। অন্য দিকে শিলাইদহ কুঠিবাড়ি। সেখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মিশে রয়েছেন। ছোট থেকে প্রায়ই যেতাম দুই জায়গায়। গানের সঙ্গে ভালবাসা সেখান থেকে। পাশাপাশি, অঙ্ক কষতেও খুব ভাল লাগত। পরে মনে হল, আমার এই ভাললাগা যদি সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিই তা হলে অনেকেরই হয়তো অঙ্কভীতি কাটবে। সেই জায়গা থেকেই গানের পাশাপাশি অঙ্ক নিয়েও আমার একাধিক বই বা ভিডিয়ো।

প্রশ্ন: জনপ্রিয় ইউটিউবার থেকে উইন্ডোজ প্রযোজনা সংস্থার ছবিতে সুরকার, চমক কতটা চমকে গিয়েছিলেন?

চমক: (হেসে ফেলে) সত্যিই চমকে গিয়েছিলাম। তারও আগে বলি, আমার ইউটিউবার হওয়া কিন্তু নিতান্তই মনের খিদে মেটাতে। গান, অঙ্ক নিয়ে ভিডিয়ো বানানো--- পুরোটাই নেশা। তাকে পেশা বানাব, অর্থ উপার্জন করব, কখনও ভাবিনি। সেই জায়গা থেকে একটি ছবির গান বানানোর দায়িত্ব পাওয়া বিশাল ব্যাপার। তার উপর কলকাতার প্রথম সারির প্রযোজনা সংস্থা উইন্ডোজের সঙ্গে কাজ। নন্দিতা রায়, শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় অতুলনীয়। একই ভাবে ভীষণ ভাল জিনিয়া সেন। শুনেছি, উনিই আমার কথা বলেছেন। ছবির কাজ করতে গিয়ে অনেক কিছু শিখলাম। আমার খামতি, শ্রোতারা কী চান, ছবির পরিচালকেরা কী চান-- এই কাজ করতে করতে বুঝতে পারলাম। কারণ, এত দিন নিজের চাহিদা বা ইচ্ছে মতো গান বেঁধেছি। ছবির গান একবারে তৈরি করে উঠতে পারিনি। তখন সেটা আমার কাছে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। অনেকটা জটিল অঙ্ক সমাধানের মতোই। বলতে পারেন, আমি সমৃদ্ধ হয়েছি।

প্রশ্ন: ভারতীয়রা কিন্তু বাংলাদেশের গান শোনেন। আপনি কলকাতার বাংলা গান বা ছবির গান শুনেছেন?

চমক: স্মৃতিতাড়িত করে দিলেন যে! নয়ের দশকের কথা। বড় হচ্ছি। কানে আসছে কবীর সুমন, নচিকেতা চক্রবর্তী, অঞ্জন দত্তের জীবনমুখী গান। সেই গান আজও কানে বাজে। সুর করার সময় নচিকেতা বা সুমনের সুরের বাইরে আজও বেরোতে পারি না। এখনকার গায়ক, সুরকারদের মধ্যে অনুপম রায়, অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের গান বেশ লাগে। অতি সম্প্রতি চমৎকার লেগেছে রণজয় ভট্টাচার্যের ‘প্রেমে পড়া বারণ’ গানটি।

‘এই মায়াবী চাঁদের রাতে’ গানের দৃশ্য

‘এই মায়াবী চাঁদের রাতে’ গানের দৃশ্য

প্রশ্ন: দু’দেশের গানে খুব পার্থক্য দেখলেন? ভারতের হয়ে গান বানাতে গিয়ে আপনার স্বকীয়তা ক্ষুণ্ণ হয়েছে?
চমক: একেবারেই না। আমার স্বকীয়তা সহজ ভাষায়, মজার গান লেখা। সহজ সুরে গান গাওয়া। আমি খুব গুরুগম্ভীর বা গভীর প্রেমের গান বাঁধতে পারি না। ‘বাবা বেবি ও’ ছবির প্রথম গান ‘এই মায়াবি চাঁদের রাতে’র কথা, সুরও তেমনই। পরের গানটি সম্ভবত জানুয়ারিতে মুক্তি পাবে। ছবির বাকি দু’টি গান করেছেন অমিত-ঈশান।

প্রশ্ন: যিশু সেনগুপ্তের ঠোঁটে আপনার গান। গান বাঁধার আগে ওঁর কোনও ছবি দেখেছেন?

চমক: সত্যি বলতে, কোনও ছবি দেখা হয়নি। তবে ইউটিউবে ওঁর নানা নানা ছবির বেশ কিছু ঝলক দেখেছিলাম। দেখে ওঁর কণ্ঠ, কথা বলার ভঙ্গি বোঝার চেষ্টা করেছি। কারণ, ওঁর জন্য গান বানানোর আগে ওঁকে আমায় বুঝে নিতে হয়েছিল।

প্রশ্ন: বরাবর নিজের মতো করে কাজ করেছেন। জুটি বেঁধে কাজ করে কেমন লাগল? একা পুরো দায়িত্ব পেলে বেশি স্বাধীনতা পেতেন?
চমক: জুটি বাঁধার কারণে আমার বড্ড উপকার হয়েছে। আমি তো লস অ্যাঞ্জেলস, ক্যালিফোর্নিয়ার বাসিন্দা। ফলে, কলকাতায় থাকেন এমন সুরকারের আমার বিশেষ প্রয়োজন ছিল। যিনি আমার তৈরি গানগুলো ঠিক মতো গুছিয়ে দেবেন। অ্যারেঞ্জ করবেন। অমিত-ঈশান সেই দিকে আমায় প্রচুর সাহায্য করেছেন। কলকাতার শিল্পীদের দিয়ে গাওয়ানোটাও সহজ হত না। যেটা ওঁরা থাকায় হয়েছে।

প্রশ্ন: আপনিও বাবা। আপনারও ‘বেবি’ আছে। প্রথম গানে সেই ‘বাবা বেবি’ জুটি বেঁধেছে...

চমক: (হাসি) হ্যাঁ, বড় মেয়ে বর্ণমালা গেয়েছে আমার সঙ্গে। আরও একটা মজার কথা বলি? আমার দ্বিতীয় গানটিও বাবা সংক্রান্ত। গানটি শেষ করার পর জানতে পারলাম, আমি দ্বিতীয় বারের জন্য বাবা হতে চলেছি! তার পরেই জন্ম নিল ছোট মেয়ে পরশমণি। ওর এখন বয়স ৬ মাস। ছবির ‘বাবা’র জন্য গান বানাতে বানাতে নিজেই বাবা হয়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতা বলে বোঝানোর নয়!

প্রশ্ন: রেকর্ডিং স্টুডিয়োয় উপস্থিত না থেকে সুরকারের দায়িত্ব পালন, মন ভরল?

চমক: আফশোস রয়ে গেল। প্রথম গানে আমার সঙ্গে গেয়েছেন ইক্ষিতা আর হেমলতা। ওঁদের কণ্ঠ নির্বাচন কলকাতা থেকে হয়েছে। রুদ্রনীল, অমিত-ঈশান করেছেন। ওঁদের দিয়ে গাওয়ানোও ওঁরাই করেছেন। আমি উপস্থিত থাকতে পারলে হয়তো আরও একটু অন্য রকম হতে পারত। নিজের চোখে, নিজের কানে সবটা দেখেশুনে নিতে পারতাম। অমিত-ঈশান কোনও ফাঁক রাখেননি। তবু বোঝেনই তো, নিজের সৃষ্টি সন্তানসম।

প্রশ্ন: এই কাজের পরে কলকাতায় কাজের আগ্রহ বাড়ল? আগামী দিনে শহরে এসে কাজ করবেন?

চমক: অবশ্যই। উইনডোজ, নন্দিতাদি-শিবুদা সেই ইচ্ছে ১০০ শতাংশ জাগিয়ে দিয়েছেন। আমার স্ত্রী ফিরোজা বহ্নি গানের কথা লিখতে খুবই সাহায্য করে। সেও আফশোস করেছে, ছবি মুক্তির সময়েও যদি যাওয়া যেত কলকাতায়। কিংবা বাকি দুই সঙ্গীত পরিচালকের সঙ্গে এক সঙ্গে বসে যদি কাজটা করা যেত! এই ফাঁকটা ভরাট হওয়ার নয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE