Advertisement
E-Paper

নতুন গিল্ড ছাড়ছেন, সরলেন মানহানির মামলা থেকেও! এই মানসিক চাপ আর নিতে পারছি না: মানসী

আনন্দবাজার ডট কমকে মানসী বলেছেন, “বয়স হয়েছে। এই মানসিক চাপ আর নিতে পারছি না। কাজ করতে হবে। তাই টানাপড়েন থেকে সরে গেলাম।”

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ মে ২০২৫ ১৭:৪৭
মানসী সিংহ কি ফেডারেশনের ভয়ে পিছিয়ে গেলেন?

মানসী সিংহ কি ফেডারেশনের ভয়ে পিছিয়ে গেলেন? গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

পরিচালক গিল্ড বনাম ফেডারেশনের কাজিয়া হাই কোর্টে বিচারাধীন। সোমবার বিচারপতি অমৃতা সিংহ আরও এক বার পরিচালকদের কাজে, স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ না করার নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি, রাজ্যের তথ্য-সংস্কৃতি দফতরের সচিবের উপর দায়িত্ব দিয়েছেন, তিনি প্রয়োজনে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে পারবেন। এই সংক্রান্ত কোনও সমস্যা হলে পরিচালকেরা তাঁর দ্বারস্থ হতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে আদালতে তাঁকে রিপোর্ট তৈরি করে জমা দিতে হবে। তার পরেও সমস্যা না মিটলে চাইলে প্রশাসনের দ্বারস্থ হতে পারবেন পরিচালকেরা। রাজ্যের উচ্চ আদালতের এই নির্দেশকে ইতিবাচক হিসাবেই দেখছেন পরিচালক সুব্রত সেন, সুদেষ্ণা রায়, বিদুলা ভট্টাচার্য-সহ অভিযোগকারী পরিচালকেরা।

মঙ্গলবার তার মধ্যেই নতুন খবর। পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, সৃজিত মুখোপাধ্যায়, রাহুল মুখোপাধ্যায়, শ্রীজিৎ রায়, রাজ চন্দের পর ফেডারেশন সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে আনা মানহানি মামলা থেকে নাম সরিয়ে নিলেন আরও এক পরিচালক, মানসী সিংহ। খবর, তিনি নতুন পরিচালক গিল্ড থেকেও নাকি নাম তুলে নিচ্ছেন। ফিরে যাচ্ছেন পুরনো পরিচালক গিল্ডে।

পরিচালক বন্ধুরা যখন দীর্ঘ দিন ধরে এই কাজিয়ার আইনি সমাধান খুঁজছেন, তখনই তাঁদের পাশ থেকে সরে যাচ্ছেন মানসী! কেন?

আনন্দবাজার ডট কম যোগাযোগ করে জানতে চেয়েছিল। মানসীর জবাব, ‘‘বয়স হয়েছে। এই মানসিক চাপ আর নিতে পারছি না। কাজ করতে হবে। তাই টানাপড়েন থেকে সরে গেলাম।’’ পাশাপাশি এ-ও জানান, স্বরূপ কোনও দিন তাঁর কাজে বাধা দেননি। খারাপ ব্যবহারও করেননি। তা হলে কেন তাঁর বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে শামিল হবেন? এই অনুভূতি থেকেই ‘৫ নং স্বপ্নময় লেন’-এর পরিচালকের উপলব্ধি, ‘‘সাময়িক উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। মাথা গরম করে ফেলেছি আমিও। ফলে, বিরোধিতায় যোগ দিয়েছিলাম। পরে ভেবে দেখলাম, আমি তো কোনও দিন ক্ষতির সম্মুখীন হইনি। তা হলে বিরোধিতায় আমি কেন!’’

প্রতিবাদী পরিচালকদের সকলেই যে এর আগে ফেডারেশনের কোপে পড়েছেন তেমন নয়। তার পরেও বারে বারে কোনও না কোনও পরিচালকের সঙ্গে ঘটতে থাকা অন্যায়ের বিরোধিতা করছেন... এ প্রসঙ্গ তুলতেই মানসীর পাল্টা যুক্তি, ‘‘পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, অনির্বাণ ভট্টাচার্যের মতো পরিচালকেরা অল্পবয়সি। ওঁদের যোঝার শক্তি রয়েছে। আমার আর নেই। আর হয়তো বেশি দিন কাজ করতেও পারব না। তাই কাজে মন দিতে চাই।’’

ফেডারেশন সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস গত বছরের শেষে পরিচালক এবং প্রযোজকদের উদ্দেশে সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছিলেন, তিনি শুনেছেন, টলিউডের ৬০ শতাংশ প্রযোজক-পরিচালক অভিনেত্রীদের যৌন হেনস্থা করেন। এই কথার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে ফেডারেশন সভাপতির বিরুদ্ধে মানহানির মামলা দায়ের করেন প্রযোজক-পরিচালকদের একটা বড় অংশ। এই প্রসঙ্গে মানসীর দাবি, তিনি প্রথমে শুনেছিলেন, স্বরূপ নাকি এ কথা বলেছেন। কিন্তু স্বরূপ তাঁকে বলেছেন, তিনি এ কথা শুনেছেন। সেটাই তিনি জানিয়েছেন। পরিচালকের প্রশ্ন, ‘‘সূত্রের খবর বলে সংবাদমাধ্যমে অনেক খবর প্রকাশিত হয়। সেটা যদি দোষের না হয়, তা হলে স্বরূপের বক্তব্যেও দোষ নেই। তিনি যা শুনেছেন সেটাই বলেছেন।’’ শুধুই মানহানির মামলা থেকে নয়, নতুন পরিচালক গিল্ড থেকেও তিনি নাম তুলে নিতে চলেছেন তিনি। ফিরতে চাইছেন পুরনো পরিচালক গিল্ডে। সে জন্য গিল্ডে আবেদনও করেছেন তিনি। তাঁর আবেদন গ্রাহ্য হলে তিনি নতুন গিল্ডের সদস্যপদ ছেড়ে দেবেন।

পরিচালকদের দীর্ঘ দিনের অভিযোগ, কাজ করতে না দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ফেডারেশন হাতে নয়, ভাতে মারছেন পরিচালকদের, যার আঁচ টেকনিশিয়ানদের গায়েও লাগছে। সেই ভয়েই কি মানসীর মতবদল? এমনটা মানতে রাজি নন পরিচালক। তাঁর সাফ জবাব, ‘‘কেউ কিচ্ছু করেনি আমার সঙ্গে। আমি নিজের ইচ্ছেয় এই পদক্ষেপ করছি। স্বরূপ বা ফেডারেশনের কেউ কোনও ভাবে এর সঙ্গে যুক্ত নন।’’

মানসীর এই বক্তব্য নিয়ে সুব্রত, সুদেষ্ণা, পরমব্রত, অনির্বাণের প্রতিক্রিয়া কী? প্রথম দুই পরিচালক যথাক্রমে নতুন পরিচালক গিল্ডের সভাপতি, সম্পাদক। দু’জনেই মানসীর এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, ‘‘আমরাও চাই না, কারও কাজ বন্ধ হোক। মানসী যেটা ভাল বুঝেছেন সেটাই করছেন।’’ একই ভাবে মানসীর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন অনির্বাণও। যে ভাবে পরিচালকেরা ‘রণে ভঙ্গ’ দিচ্ছেন তাতে ভবিষ্যতে অনির্বাণও কি গিল্ড বদলাবেন? স্বরূপ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে দায়ের করা মানহানি মামলা থেকে নাম তুলে নেবেন? এ প্রসঙ্গে অবশ্য তিনি মন্তব্য করতে চাননি। একই ভাবে মুখে কুলুপ পরমব্রতেরও।

টলিউডের এই ‘যুদ্ধ’ শেষ পর্যন্ত কোন দিকে মোড় নেয়, সেই দিকেই তাকিয়ে সব পক্ষ।

Manasi Sinha Subrata Sen Sudeshna Roy Anirban Bhattacharya
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy