Advertisement
E-Paper

কাশ্মীরিদের ভিতরে ঢুকে গিয়েছে, ওঁরা পৃথক! ভারতে বাস করলেও দেশ ওঁদের নয়: লীনা গঙ্গোপাধ্যায়

কলকাতা-সহ ভারতের অন্যত্র যাওয়ার ক্ষেত্রে ওঁরা বলেন, ‘‘ইন্ডিয়ায় যাব। ইন্ডিয়ায় যাওয়া হয়নি।’’ কত লোকের মুখে যে শুনেছি।

লীনা গঙ্গোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২৫ ১২:০৩
কাশ্মীরের জন্য মনকেমন লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের।

কাশ্মীরের জন্য মনকেমন লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের। ছবি: ফেসবুক।

কাজের কারণে এমনিতেই ভোর চারটের আগে ঘুমোই না। মঙ্গলবার পহেলগাঁওয়ের ঘটনা শোনার পর থেকে মন আরও অস্থির। রাতজাগা ক্লান্ত চোখ বুধবারের ভোর হতে দেখল। সব দেখতে দেখতে, শুনতে শুনতে এবং সারা বিশ্বে যা হচ্ছে সে সব মনে করে আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে, সামনে কী দিন আসছে! এ কোন পৃথিবী? ধর্মের কারণে মানুষকে মরে যেতে হবে! যাঁরা করেছেন তাঁরা কোন ধর্মের— এই বিষয়টিতে অবশ্য যাচ্ছিই না। কারণ, তাঁদের কোনও ধর্মই নেই। ধর্মান্ধ ছাড়া তো এটা করে না কেউ।

সন্ত্রাসবাদীদের আদৌ কি কোনও ধর্ম হয়? কোনও কালেই তাঁদের কোনও ধর্ম হয় না।

এই ঘটনা দু’বছর আগের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। তখনও খুব ভাল কাশ্মীর ছিল। এখনও তো খুবই ভাল কাশ্মীর ছিল। যাঁরা কিছু দিন আগে গিয়েছিলেন বা সদ্য গিয়েছেন, তাঁদের মনে কোথাও কি ভূস্বর্গ নিয়ে কোনও ভয় লুকিয়ে ছিল? তাঁরা কি ভাবতে পেরেছিলেন, কাশ্মীর এতটা খারাপ হয়েছে? তাঁদের মনে এ রকম কোনও ধারণা নেই। আমাদের মনেও তখন ছিল না।

আমাদের সময়েও কাশ্মীর খারাপ ছিল না। ঘটে যেতে পারত, ঘটেনি। ঘটনাচক্রে হয়তো ঘটেনি। এখন তো তাই মনে হচ্ছে। আপাতদৃষ্টিতে সবই সুন্দর, সবই ভাল। আসলে ভাল নয়। ভিতরে ভিতরে কোথাও একটা ফল্গুধারার মতো বয়েই যাচ্ছে। আমরা যখন ‘ঝনক’ হিন্দি ধারাবাহিকের জন্য শুটিং করতে গিয়েছিলাম তার কয়েক দিন আগে বাগদামে কিছু একটা ঘটেছিল। এ রকম সন্ত্রাসবাদ কাশ্মীরে বিচ্ছিন্ন ভাবে কিন্তু ঘটেই চলেছে। আগে হয়নি এটা তো নয়। এখন এ রকম একটা বীভৎস পরিস্থিতি— এটা নিশ্চয়ই বছর দুয়েক আগের কাশ্মীরে ছিল না।

বলতে বাধা নেই, কাশ্মীরিরা যথেষ্ট পেশাদার। ভীষণ স্মার্ট, আধুনিক। আমরা শুটিং করতে গিয়ে ওঁদের থেকে যথেষ্ট সহযোগিতা পেয়েছি। আমরাও পহেলগাঁও, গুলমার্গ— সর্বত্র শুটিং করেছি। আরও ভিতরে গিয়েছি। হয়তো শুটিং করতে পারিনি। কিন্তু রেকি করতে গিয়েছি তো। মঙ্গলবার রাতে সেই সমস্ত জায়গা দেখতে খুব খারাপ লাগছিল। মনে হচ্ছিল, ভাগ্যিস আমরা শুটিং করে এসেছিলাম। না হলে আর কী করতে পারতাম? খুব ভিতর থেকে উঠে আসছে কথাটা। ফলে, আগামী দিনে আবার শুটিং করতে যাব কি না, কিংবা গেলেও কবে— কিচ্ছু ভাবতে পারছি না।

কবে এই হানাহানি থামবে? জানি না। আদৌ কি থামবে? সেটাও বুঝতে পারছি না।

তবে কাজ করতে গিয়ে একটা জিনিস দেখেছি, ওখানকার মানুষদের মধ্যে একটা অনুভূতি কাজ করে। ভারতের মধ্যে বাস করেও ওঁরা যেন ভারতীয় নন। এই একটা অনুভূতি ওঁদের মধ্যে আছে। ওঁরা কাশ্মীরি, ভারতীয় নন! কলকাতা-সহ ভারতের অন্যত্র যাওয়ার ক্ষেত্রে ওঁরা বলেন, “ইন্ডিয়ায় যাব। ইন্ডিয়ায় যাওয়া হয়নি।” কত লোকের মুখে যে শুনেছি। ওঁদের ভিতরে ঢুকে গিয়েছে, ওঁরা পৃথক। এ দেশ ওঁদের নয়।

অনেকে জানতে চাইবেন এর পর, আমার ধারাবাহিক বা ছবিতে কাশ্মীর কখনও বিষয় হয়ে উঠবে?

আমার ভাবনায়, কাশ্মীরের সন্ত্রাসবাদ ছোট পর্দার বিষয় নয়। শুটিং করতে গিয়ে এমন অনেক মানুষের জীবনকথা জানি, যাঁরা ভুক্তভোগী। ছবিতেও এ বিষয় দেখাব না। কোনও দিন কাশ্মীর যদি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উদাহরণ হয়ে ওঠে, সে দিন ভূস্বর্গ আমার কাজের বিষয় হবে।

Leena Gangopadhyay Kashmir Attack
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy