সাংবাদিক জ়িনিয়া সেনকে বিয়ে করছি। নিমন্ত্রণপত্র বিলি হয়ে গিয়েছে। হঠাৎ মুম্বই থেকে এক প্রযোজক বন্ধুর ফোন। ফোন তুলতেই তিনি হায় হায় করে উঠলেন! তার পর হিন্দিতে যা বললেন বাংলায় তার তর্জমা, “বন্ধু, এ কী করলে! নিজের সর্বনাশ নিজেই ডেকে আনলে?” আমি অবাক হয়ে বললাম, “কেন!” বন্ধু তখনও আফসোস করে চলেছেন, “আমরা সাংবাদিক দেখলে পালাই। তুমি ঘরে এনে তুললে? এ বার সন্ন্যাস নিতে হবে।”
এক ফ্রেমে স্বামী-স্ত্রী। ছবি: সংগৃহীত।
আজ জ়িনিয়ার জন্মদিন। এই দিনের কথাগুলো মনে এল। আমাদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কিছু লিখতে না চাইলেও বলতে পারি, জ়িনিয়া আমার খুব ভাল বন্ধু, যার সঙ্গে অনেক কথা ভাগ করে নিতে পারি। খুব ভাল স্ত্রী। যে আমার অসুস্থ মা থেকে নিজের মা-বাবা, অফিস, সামাজিক সৌজন্য রক্ষা— সব দিক দশ হাতে সামলাচ্ছে। সাংবাদিকসত্তা ছেড়ে কাহিনি-চিত্রনাট্যকার। জ়িনিয়া তাতেও সফল। আমাদের প্রযোজনা সংস্থার ‘লাকি চার্ম’। অনেক নতুন কিছু করেছে ও। ওর লেখা প্রথম ছবি ‘ব্রহ্মা জানেন গোপন কম্মটি’ সফল। এই ছবি দিয়ে গোয়া চলচ্চিত্র উৎসবে আমরা প্রথম পা রাখার সুযোগ পেয়েছি। আমাদের প্রথম পুজোর ছবি ‘রক্তবীজ’-এর সাফল্য কিন্তু জ়িনিয়ার কারণেই। এ বারের পুজোর ছবিও সেই ধারা ধরে রাখবে। জ়িনিয়ার ভেতরের ভারসাম্য আমাদের দাম্পত্যকেও নিজের মতো করে বেড়ে উঠতে দিয়েছে।
সপরিবার ভ্রমণে শিবপ্রসাদ-জ়িনিয়া। ছবি: সংগৃহীত।
জ়িনিয়া ওর চাওয়া-পাওয়া নিয়ে স্বচ্ছ। আমি অভিনয় করতে গিয়ে পর্দায় নায়িকাকে চুমু খেতে বা সিঁদুর পরাতে পারব না। ওর আপত্তি আছে। জানিয়ে দিয়েছে আমায়। অথচ, ‘আমার বস্’ ছবিতে প্রেমের দৃশ্য ভাবতে গিয়ে জ়িনিয়াই বলেছিল শ্রাবন্তীর খোলা পিঠে কবিতা লিখতে। অবাক হয়েছিলাম। সঙ্গে বুঝেছিলাম, আমার স্ত্রী জ়িনিয়া নয়, একজন চিত্রনাট্যকার নিজেকে সরিয়ে ছবির জন্য এই খোলা পিঠে কবিতা লেখার দৃশ্য কল্পনা করছে।
আরও পড়ুন:
আমি আমার মতো করে জ়িনিয়াকে ভালবাসি। ওর জন্মদিনে বাজার গিয়েছি। আমি তো বাজার যাই-ই না। আজ গিয়েছি। মেনু ঠিক করেছি। ভাত, শুক্তো, মাছের মাথা দিয়ে ডাল, পাঁচ রকম ভাজা, ফিশফ্রাই, ডাব চিংড়ি, মাছের কালিয়া, চাটনি, পায়েস, মিষ্টি। উপহারও দিয়েছি অনেক ভেবেচিন্তে। কী? বলব না। রাতে সপরিবার আমরা রেস্তরাঁয় খেতে যাব। প্রতি বছর এই দিনে একটাই প্রার্থনা করি। প্রতি বছর যেন জ়িনিয়ার পাতে চুনো মাছ, লইট্যা মাছের পদ থাকে। আমার মা যেন নিজে ওকে পায়েস খাওয়াতে পারে।