Advertisement
E-Paper

ঋতুস্রাব নিয়ে বিজ্ঞাপন, আলোচনা কেন করতে হবে! কে বলেছে, পুরুষ জানে না? প্রশ্নে মমতাশঙ্কর

“সচেতনতা ছড়াতে নারীর কোন অঙ্গ থেকে ঋতুস্রাব হয় সেটাও কি বিজ্ঞাপনে দেখানো হবে?”

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০২৫ ১৮:৩২
মমতাশঙ্কর কী বলতে চেয়েছেন?

মমতাশঙ্কর কী বলতে চেয়েছেন? ছবি: সংগৃহীত।

মমতাশঙ্কর কি প্রাচীনপন্থী, রক্ষণশীল? নারী অগ্রগতির পরিপন্থী?

ফের নতুন করে কাঠগড়ায় সত্যজিৎ রায়ের পছন্দের অভিনেত্রী। সম্প্রতি, ছোট পর্দার একটি জনপ্রিয় নাচের অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘চণ্ডালিকা'-র আধুনিক উপস্থাপন নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে। সে বিষয়ে নিজের বক্তব্য জানিয়েছেন অভিনেত্রী-নৃত্যশিল্পী। তার পর সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি কিছু কথা জানিয়েছেন ঋতুস্রাব এবং সে সংক্রান্ত সচেতনতা প্রচার নিয়েও।

মমতার বক্তব্য, “স্যানিটারি ন্যাপকিনের বিজ্ঞাপনে লাল রং ঢেলে বোঝানোর কোনও প্রয়োজন আছে ঋতুস্রাব কী বা কেমন?” তিনি এ-ও জানিয়েছেন, নিজের ছেলেদের সঙ্গে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে তিনি পারবেন না।

ঋতুস্রাব নিয়ে এই ‘ট্যাবু’ যুগের পর যুগ ধরে চলে আসছে। যতই নারী-পুরুষের সমানাধিকার নিয়ে কথা হোক, এখনও বিশেষ দিনে ঋতুমতীরা পুজোর ঘরে বা মন্দিরে পা রাখতে পারেন না। প্রত্যন্ত গ্রামে রান্নাঘরেও ঢুকতে পারেন না তাঁরা। স্যানিটারি ন্যাপকিনের ব্যবহার পর্যন্ত জানেন না অনেকে! একুশ শতকেও নারীকে যখন তার ঋতুস্রাবের মতো শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়ার জন্য লড়তে হয়, সেখানে মমতাশঙ্করের এই বক্তব্য নতুন করে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।

তিনি সত্যজিৎ রায়ের একাধিক ছবির অভিনেত্রী। মৃণাল সেনের ‘মৃগয়া’ দিয়ে অভিনয় দুনিয়ায় পা রাখেন মমতাশঙ্কর। আধুনিকমনস্ক পরিচালকদের পছন্দের অভিনেত্রী হয়েও আদতে কি তিনি প্রাচীনপন্থী? প্রশ্ন উঠেছে বিনোদন দুনিয়ায়।

সঙ্গীতশিল্পী ইমন চক্রবর্তী যেমন সমাজমাধ্যমে একটি বার্তা লিখেছেন। তাঁর বক্তব্য, “ছোটবেলায় আমার বাবাই আমায় দোকানে গিয়ে কখনও স্যানিটারি ন্যাপকিন কিনতে দেননি। তাই আজও সেই অভ্যেস আমার নেই। আমার মা আমাকে বলেছিলেন, এগুলো খুব স্বাভাবিক ঘটনা। আরও বলেছিলেন, নারী-পুরুষ সমান সমান। কী জানি! এখন কিছু সাক্ষাৎকার দেখে মনে হচ্ছে মা হয়তো ভুল ছিলেন!”

সত্যিই কি ঋতুস্রাব নিয়ে কোনও ছুঁৎমার্গ রয়েছে মমতাশঙ্করের? নিজে নারী হয়ে নারীর এই বিশেষ শারীবৃত্তীয় ক্রিয়া নিয়ে সংস্কার আছে তাঁর মধ্যেও?

প্রশ্ন করেছিল আনন্দবাজার ডট কম। অভিনেত্রী-নৃত্যশিল্পী তীব্র আপত্তি জানিয়েছেন। তাঁর মতে, “আমি আমার মত জানিয়েছি। আমি কোনও দিন ছেলের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে পারব না। বিশেষ দিনগুলোয় কখনও ওদের বলতে পারিনি, আমায় স্যানিটারি ন্যাপকিন এনে দাও।” পাল্টা প্রশ্নও করেছেন তিনি, “নারীর এই বিশেষ দিনগুলোর কথা পুরুষও জানে। তা বলে ঢ্যাঁড়া পেটাতে হবে কেন? পুরুষের সঙ্গেই বা আলোচনা করতে হবে কেন! ওঁদেরও বিশেষ কিছু শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়া আছে। সেগুলো কি ওঁরা আমাদের সঙ্গে আলোচনা করেন?” তাঁর এও দাবি, প্রতি মাসের ওই বিশেষ দিনগুলোয় তিনি কোনও দিন পুজো বন্ধ করেননি। পরিবারের বাকি মহিলা সদস্যদের উপরেও পুজো না করার ফতোয়া জারি করেননি। অর্থাৎ, তিনি সংস্কারচ্ছন্ন প্রাচীনপন্থী নন।

এই প্রসঙ্গে তিনি বিজ্ঞাপনী ছবির কথা বলেছেন। প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়েরা এখনও ঋতুমতী হলে অনেক কিছু করতে পারেন না। নিজস্ব পরিচ্ছন্নতার ক্ষেত্রেও তাঁরা অস্বাস্থ্যকর পদ্ধতি অবলম্বন করেন। তাঁদের সচেতন করতে বিজ্ঞাপনী ছবির প্রয়োজন, মানেন তিনিও। পাল্টা যুক্তি দিয়ে বলেন, “তা বলে লাল রং ন্যাপকিনে ঢেলে বোঝাতে হবে? মেয়েরা কি গাধা? আমরা জানি না, রক্তের রং লাল! বা ন্যাপকিনে কী রঙের তরল পদার্থ নির্গত হচ্ছে? এ ভাবে তো মেয়েদের বোধবুদ্ধিতে ছোট করে দেওয়া হচ্ছে।” শালীনতা হারানোর শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি, “সচেতনতা ছড়াতে নারীর কোন অঙ্গ থেকে ঋতুস্রাব হয় এ বার সেটাও কি বিজ্ঞাপনে দেখানো হবে?”

মমতাশঙ্করের আরও দাবি, তিনি কথাপ্রসঙ্গে নিজের মতামত প্রকাশ করেছেন। যেমন আগেও করেছিলেন। কারও উপরে নিজের মত চাপিয়ে দেননি। প্রত্যেকের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে। সেই জায়গা থেকেই তিনি বক্তব্য জানিয়েছেন। তাঁর সাফ দাবি, আগামী দিনেও স্বাধীন মতপ্রকাশ থেকে বিরত থাকবেন না। তা সে যতই বিতর্কের জন্ম দিক।

Mamata Shankar Menstruation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy