Advertisement
E-Paper

বাণিজ্যিক ছবিতে আগ্রহী, কিন্তু অফার পেলে তো!

শিগগিরই ফিরছেন ছবি পরিচালনায়। ছবির ভাবনা, ইন্ডাস্ট্রির মানসিকতা, দর্শকদের সীমাবদ্ধতা নিয়ে অকপট ব্রাত্য বসুশিগগিরই ফিরছেন ছবি পরিচালনায়। ছবির ভাবনা, ইন্ডাস্ট্রির মানসিকতা, দর্শকদের সীমাবদ্ধতা নিয়ে অকপট ব্রাত্য বসু

স্বর্ণাভ দেব

শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:১৮
ব্রাত্য

ব্রাত্য

বাঙালি মননে বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ জায়গা জুড়ে রয়েছেন ব্রাত্য বসু। নাটক তাঁর জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হলেও চলচ্চিত্র ছাড়া সম্পূর্ণ নয় তাঁর শিল্পীজীবন। বিষয়টি উত্থাপন করতেই সাগ্রহ সাড়া দিয়েছিলেন ব্রাত্য। রাজনৈতিক কাজ ও অভিনয় জীবনের ব্যস্ততার মাঝে আনন্দ প্লাসের প্রতিবেদককে ডেকেছিলেন আহিরিটোলার এক বাড়িতে। সেখানেই চলছে ‘ঝরা পালক’-এর শ্যুিটং। জীবনানন্দ দাশের ভূমিকায় অভিনয় করছেন ব্রাত্য। জীবনানন্দের মতো প্রবল অন্তর্মুখী চরিত্রে অভিনয়ের জন্য কী ভাবে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন? ‘‘এই চরিত্রে অভিনয়ের জন্য যে প্রস্তুতি নিয়েছি, তেমনটা আগে নিইনি। একটা মানুষ তাঁর জীবন সাজাচ্ছেন শুধু লিখবেন বলে! সামাজিক প্রতিক্রিয়ার তোয়াক্কা করেননি। রবীন্দ্রনাথকে ‘ধূসর পান্ডুলিপি’ পাঠিয়ে লিখছেন, ‘বইটা আপনাকে উৎসর্গ করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু করলাম না।’ এর মধ্যেও যে সাবলাইম ঔদ্ধত্য রয়েছে, সেটাও কিন্তু ব্যতিক্রমী,’’ জানালেন তিনি।

শুরুর দিকে ‘হারবার্ট’, ‘কালবেলা’ থেকে সাম্প্রতিক কালের ‘অসমাপ্ত’, ‘বারান্দা’র মতো সিংহভাগ ছবিই ব্রাত্যর কেরিয়ারে অন্য ধারার। কিন্তু একজন ভার্সেটাইল অভিনেতার কেরিয়ার কি শুধুই এক ধরনের ছবির মধ্য দিয়ে পূর্ণতা পায়? ব্রাত্য মেনে নিলেন, তাঁর অভিনয়জীবন অসম্পূর্ণ। ‘‘কমার্শিয়াল বলতে ‘গ্যাংস্টার’ করেছি। ‘চ্যাম্প’-এর অফারও ফিরিয়েছিলাম ব্যস্ততার কারণে। আমি বাণিজ্যিক ছবি করতে আগ্রহী। কিন্তু অফার পেতে হবে তো!’’ তবে তা নিয়ে আফসোস করতে চান না তিনি।

আরও পড়ুন: সোহম-শুভশ্রীর ‘হনিমুন’

ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা নিয়েও উদ্বিগ্ন ব্রাত্য। সাম্প্রতিক কালে ব্যবসার নিরিখে টলিউডের হাল বেশ শোচনীয়। কয়েকটা ছবি বাদ দিলে অধিকাংশই মুখ থুবড়ে পড়েছে। জানালেন, ‘‘এই ইঙ্গিত অনেক দিন আগেই দিয়েছিলাম। আমরা বাজারটা ক্রমশ ছোট করে ফেলেছি। দেশভাগের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছিল বাংলা ও প়ঞ্জাবি ছবির উপরে। অবিভক্ত বাংলা থাকলে বাজারটা বাড়ত। ছবির নামে আমরা গ্রাম-শহর, সিঙ্গল স্ক্রিন-মাল্টিপ্লেক্স এমন সব বিভাজন করে ফেলেছি। এটা চলতে থাকলে একদিন হয়তো ফ্ল্যাটের বা কলোনির ছবিও তৈরি হবে! শুধু নির্মাতাদের দোষ দিলেই চলবে না। দর্শকরাও প্রস্তুত নয়। মুম্বইয়ে ‘দিলওয়ালে’র পাশাপাশি ‘মাসান’ বা ‘নিউটন’-এর মতো ছবির স্পেস রয়েছে। এখানে ‘সহজ পাঠের গপ্পো’র মতো ছবি তৈরি হচ্ছে, কিন্তু সেই স্পেসটার জন্য দর্শকের আরও প্রস্তুত হওয়া জরুরি। রাষ্ট্রের কাছে আমার আবেদন, সিরিয়াল পিছু পে করার ব্যবস্থা চালু হোক। আমেরিকার মতো এখানেও সিরিয়াল দেখার জন্য দিনে পাঁচশো টাকা ধার্য হলে বোঝা যাবে দর্শক কী চায়। সিরিয়ালের জন্য ভাল ছবি, সাহিত্য, থিয়েটার বিপন্ন হচ্ছে। লগ্নীকৃত টাকা ফেরত পেলে প্রযোজকরা ভাল ছবি করতে উৎসাহী হবেন।’’ উঠে এল স্যাটেলাইট রাইটসের প্রসঙ্গও। একটা সময়ে নির্মাতাদের কেউ কেউ ছবি হিট দেখানোর জন্য প্রেক্ষাগৃহ থেকে প্রাপ্ত অর্থের সঙ্গে স্যাটেলাইট রাইটসকেও জুড়ে দিতেন। এই ধারা নিয়েও বিরক্ত তিনি, ‘‘স্যাটেলাইট রাইটস যে একদিন বন্ধ হবে, সেটা জানতাম। কারণ চ্যানেল যে টাকা বিনিয়োগ করছে, সেটা যদি বাজার থেকে তুলতে না পারে, তা হলে আর্থিক মডেলটাই বিপন্ন হবে। অচিরেই দেখবেন, সিনেমার স্বত্ব কেনা বন্ধ হবে।’’ আরও বলছেন, ‘‘ যে টাকা লগ্নি করছেন, সেটা ফেরত পাচ্ছেন কি না এবং তার বিপণনের দিকে কতটা জোর দেওয়া হচ্ছে, তা নিয়েই প্রযোজকরা মেতে থাকেন। এর বাইরে দর্শক সমাগম যে কমছে, তা নিয়ে মাথা ঘামাতেই চান না। বিষয়টাকে এড়িয়ে যাওয়া বেশ কঠিন। ভাঁড়ারে টান পড়লেই তো ভাবতে হবে।’’

সমসাময়িক ছবির কনটেন্ট নিয়ে কিছু ক্ষেত্রে অভিযোগ থাকলেও কেবল মাত্র পুরনো প্রজন্মের শিল্পীদের কাজ নিয়ে দর্শকদের মুগ্ধতাকে কটাক্ষ করে ব্রাত্য বলেন, ‘‘প্রকৃত শিল্পীর জন্মদিন তাঁর মৃত্যুর পর থেকে। সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, ঋত্বিক ঘটকদেরও জীবদ্দশায় স্ট্রাগল করতে হয়েছে।’’ দর্শকদের এই মনোভাবে সমকালীন শিল্পীরা হতাশও হতে পারেন, মানছেন তাও। তবে ব্রাত্য মনে করেন, এর জন্য দায়ী ‘কলোনিয়াল লিগ্যাসি’। তাঁর মতে, ‘‘হিন্দি প্রধান ভাষার জায়গা দখল করায় বলিউড অত্যধিক গুরুত্ব পায়। অথচ দিলীপকুমারের চেয়ে উত্তমকুমার বা অমিতাভ বচ্চনের চেয়ে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় কোনও অংশে কম যান না। দক্ষিণে বলিউডের এই আগ্রাসনকে প্রতিরোধ করতে নায়কদের ১৬ ফুট কাটআউট লাগানো হয়, যা আসলে দক্ষিণী ভাষাকেই ১৬ ফুট উচ্চতায় তুলে দিয়েছে। এখানে তেমনটা হলে লোকে হাসাহাসি করবে। এখানে মানসিকতাই নেতিবাচক হয়ে দাঁড়িয়েছে।’’

ব্রাত্য নিজেও পরিচালক হিসেবে তিনটি ছবি করেছেন। সাত বছর আগে শেষ তাঁকে ক্যামেরার পিছনে দেখা গিয়েছে ‘তারা’ ছবিতে। তার পরে আর ছবি পরিচালনা করলেন না কেন? ‘‘সংসদীয় রাজনীতিতে আসার পরে সময় পাইনি। তবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, বেশি দিন থিয়েটার করব না। স্থায়ী মঞ্চ না পেলে এ ভাবে ঘুরে ঘুরে থিয়েটার আর ভাল লাগছে না। মনে রাখবেন, যোদ্ধারও ক্লান্ত হওয়ার অধিকার রয়েছে। শিগগিরই পরিচালক হিসেবে সিনেমায় ফিরব,’’ জানালেন ব্রাত্য। তবে রাজনীতিকে সৃজনশীলতার অন্তরায় মনে করেন না। ‘‘শিল্প শেখায়, কী বলা উচিত। কিন্তু রাজনীতি শেখায়, কী বলা উচিত নয়,’’ বলছেন ব্রাত্য।

সাক্ষাৎকার শেষ হতেই প্রস্তুতি নিলেন শ্যুটিংয়ের। সঙ্গে স্পষ্ট হল, নাটক তাঁর জীবনের একটা অংশ মাত্র। কারণ, চলচ্চিত্রও যে অঙ্গাঙ্গি ভাবে জুড়ে রয়েছে ব্রাত্যর জীবনে। পরিচালনায় ফেরার ঘোষণা যেন তারই ইঙ্গিত দেয়।

Celebrity Interview Bratya Basu ব্রাত্য বসু Tollywood Celebrity
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy