Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Interview

সামনে ভোট, মুখ্যমন্ত্রী মমতার সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে মুখ খুললেন জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়

‘‘আমি কোনও ‘কপি’ শিল্পীকে কেন নেব? অরিজিৎকে দিয়ে গান গাওয়াতে হলে, ওঁকেই নেব।’’ জানালেন জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়

জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র

জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র

সুমন রায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০২১ ১৮:১৯
Share: Save:

চলতি মাসেই মুক্তি পাচ্ছে ‘তুমি আসবে বলে’। সাধারণ এক ছেলের প্রেম টিকিয়ে রাখার লড়াইয়ের গল্প। ছবির সুর জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের। যে সঙ্গীত পরিচালক বাংলা গানকে ডান্সফ্লোরে নিয়ে এসেছিলেন, সাধারণ জীবনের গল্পে সুর দিতে কী কী মাথায় রাখলেন তিনি? লকডাউন থেকে রাজনীতি, আনন্দবাজার ডিজিটালের সামনে অকপট তিনি।

প্রশ্ন: ‘তুমি আসবে বলে’ ছবির সুর দেওয়ার সময় নিজেকে কতটা ভাঙতে হল?

ছবির গল্পের সঙ্গে, তার চিত্রনাট্যের সঙ্গে বদলে যায় গান আর সুরের ধরন। সেটাই তো এক জন সঙ্গীত পরিচালকের কাছে চ্যালেঞ্জ। সেটা উপভোগ করেছি ‘তুমি আসবে বলে’র সুর দেওয়ার সময়। জীবনের গান, সাধারণ প্রেমিক-প্রেমিকার গানকে কী ভাবে শ্রোতাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়, কী ভাবে সেই গানকে শ্রুতিমধুর করে তোলা যায়, সেটা মাথায় রাখতে হয়েছে। বাবা বলতেন, গানের বাছবিচার না করতে। বিজ্ঞাপনের জিংগল থেকে সিনেমার গান— সবেতেই সুর দিয়েছি। প্রতিটা কাজই আলাদা আলাদা করে উপভোগ করেছি। তবে ‘তুমি আসবে বলে’র সুর দেওয়ার সময় সব চেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল লকডাউন।

প্রশ্ন: কেন?

সামনে এক জন গায়ক বা গায়িকা থাকলে, তাকে বোঝানোটা সুবিধাজনক। কিন্তু লকডাউনের কারণে পুরোটাই করতে হয়েছে ফোনে। এ প্রসঙ্গে প্রথমেই বলব, ‘কী করে ভুলে থাকব তোকে’র রেকর্ডিংয়ের কথা। জুবিন নটইয়াল গানটা রেকর্ড করেছেন। উনি ভাল বাংলা জানেন না। গানের শব্দের মধ্যে যে আবেগ থাকে, সেটা জুবিনকে ফোনেই বোঝাতে হয়েছে। জুবিনও দারুণ কাজ করেছেন। কিন্তু এই ভাবে বোঝানোটা আমার কাছে একেবারে নতুন। প্রথমে অস্বস্তি হলেও, পরে সেটাই উপভোগ করতে শুরু করলাম। রূপম ইসলাম আর শোভন গঙ্গোপাধ্যায়কে দিয়েও গান রেকর্ড করিয়েছি। একই ভাবে কাজ করতে হয়েছে। রূপম ফোনে রেকর্ড করে পাঠাতেন। তার পর আমরা আলোচনা করে নিতাম।

প্রশ্ন: লকডাউনে শিল্পীদের বিরাট ক্ষতি হয়েছে। আপনি কী ভাবে সামলালেন?

লকডাউনে লাইভ কনসার্ট পুরো বন্ধ। কাজও কমে গিয়েছিল। ভাবলাম, ছোটবেলার অভ্যাস ফিরিয়ে আনি। প্রচুর বই পড়লাম। আমার স্ত্রী চন্দ্রাণী নিজে শিক্ষিকা। প্রচুর উৎসাহ দিল পড়াশোনায়। আর অন্তর্দর্শন শুরু করলাম। এক জায়গায় বসে সুর করতে পারি না। সেটায় বাধা পড়েছিল। কিন্তু পরে বুঝলাম, এটার সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে। তবে লকডাউনের সময় বহু শিল্পীই নিজের বাড়িতে স্টুডিয়ো বানিয়ে ফেলেছেন। এটা একটা ভাল দিক। ভবিষ্যতে এ ভাবেও হয়তো কাজ হবে। আমি নিজেই যেমন এখন ভার্চুয়ালি একটা গোটা ছবির সুর করে দিতে পারব।

প্রশ্ন: অনেকেই তো অনলাইন কনসার্ট করছেন। আপনি?

না, আমার ভার্চুয়াল শো একদম ভাল লাগে না। এই পর্যায়ে একটাই করেছি। আমফানের ত্রাণের জন্য। আরও বহু শিল্পী ছিলেন। কনসার্ট মানেই আমার কাছে বিরাট প্রেক্ষাগৃহ, সামনে অগুন্তি দর্শক। না হলে ভাল লাগে না।

প্রশ্ন: কোভিডে সিনেমা কমে গিয়েছে। শিল্পীরা ব্যক্তিগত অ্যালবাম করছেন। তা হলে কি সোলো অ্যালবামের দিন ফিরে এল?

গান তো শুধু সিনেমায় সীমাবদ্ধ থাকার কথা নয়। এখন ইন্টারনেটের দৌলতে কারও প্রতিভাই চাপা থাকে না। অনেকেই ইউটিউবে গান গেয়ে জনপ্রিয় হচ্ছেন। পুরনো জনপ্রিয় গানের দারুণ কভার গাইছেন। এই সব শিল্পীর সঙ্গে আমার কাজ করার ইচ্ছেও আছে। আর চাইব, শ্রোতারাও যেন সিনেমার গানের পাশাপাশি শিল্পীদের নিজেদের অ্যালবামের গানও শোনেন।

‘তুমি আসবে বলে’ ছবির দৃশ্য

প্রশ্ন: আর আপনার সোলো অ্যালবাম?

অনেক গান এমন থাকে, যা হয়তো কোনও শিল্পীকে বুঝিয়ে উঠতে পারিনি। তেমন গান এখন রেকর্ড করার ইচ্ছে তো আছে।

প্রশ্ন: সিনেমায় বা ওয়েবসিরিজে গানের পরিমাণ কমে গিয়ে আবহসঙ্গীতের গুরুত্ব বাড়ছে। কী ভাবছেন নতুন ধরনটা নিয়ে?

গান ছাড়া ভারতে সিনেমা হয় না। রাজ কপূর, সুভাষ ঘাই থেকে সঞ্জয় লীলা ভন্সালী— লেজেন্ডরা সকলেই গানে গুরুত্ব দিয়েছেন। তাই সিনেমার গান হারিয়ে যাবে না। আমার ক্ষেত্রেও এমন বহু বার হয়েছে, যখন কেউ এসে আমার সুর দেওয়া কোনও একটা গানের কথা বলেছেন, কিন্তু ছবির নামটা হয়তো সে ভাবে তাঁর মনেও নেই। ভাল গান সব সময় মনে থেকে যায়। তাই ছবির নির্মাতাদের অনুরোধ করব, গানের উপর জোর দিতে।

প্রশ্ন: এখন অরিজিৎ সিংহের অনুকরণ করে অনেক পুরুষ শিল্পীই গান গাইছেন। এই নকলনবিশি কি ক্ষতি করছে?

অবশ্যই। উদ্বুদ্ধ হওয়া ভাল। নকল করা খুব খারাপ। শ্রোতারাও খুব বুদ্ধিমান। নকল করলে ওঁরাও ধরতে পারেন। আর এক জন সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে বলতে পারি, আমি কোনও ‘কপি’ শিল্পীকে কেন নেব? অরিজিৎকে দিয়ে গান গাওয়াতে হলে, ওঁকেই নেব। ‘তুমি আসবে বলে’র টাইটেল ট্র্যাকটা শোভন গঙ্গোপাধ্যায়কে দিয়ে গাইয়েছি। উনি নিজের মতো করে গান। গলায় একটা সারল্য আছে। সেটাই শুনতে ভাল লাগে। এটা তো নকল করে আসে না। নিজস্ব বিষয়। আন্তরিক বিষয়।

প্রশ্ন: বলিউডে এখন পঞ্জাবি গানের খুব রমরমা। নতুন ধরনটা কেমন লাগছে?

প্রচুর পঞ্জাবি গানই খুব ভাল। কিছু ভাংরাও দারুণ। তবে মাঝে এই ঘরানার গানের জনপ্রিয়তা খুব বেড়ে গিয়েছিল। এখন একটু কমেছে। এখন আবার মেলোডি ফিরছে আস্তে আস্তে।

প্রশ্ন: সামনেই বিধানসভা ভোট। অনেকেই জানেন আপনার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠতার কথা। রাজননীতিতে আসা নিয়ে কোনও পরিকল্পনা আছে নাকি?

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে চিনি না। ওঁকে চিনি এক জন শিল্পী হিসেবে। উনি খুব সুন্দর লেখা লিখেছিলেন। সেই কথায় আমি সুরও দিয়েছি। কিন্তু ওঁর সঙ্গে কোনও দিন রাজনীতি নিয়ে কোনও কথা হয়নি। সে তো বাবুল সুপ্রিয়রও সঙ্গেও কাজ করেছি। তাতে কী! কোনও দলাদলিতে আমি নেই। সবাইকেই শ্রদ্ধা করি। আর ভবিষ্যতে রাজনীতিতে আসার কোনও পরিকল্পনাও আমার নেই।

আরও পড়ুন: সন্তানের কাছে মা-বাবা না থাকলে সে ছন্নছাড়া হয়ে যায়, মনে করেন হবু-মা মধুবনী

আরও পড়ুন: ইন্ডাস্ট্রিতে প্রবেশ সুস্মিতা কন্যার, অভিনয়ে আসার আগে মা কি বলেছিলেন তাঁকে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Interview Jeet Ganguly Mamata Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE