Advertisement
E-Paper

সেটে জয় গোস্বামী, তাঁর ‘ঘাসফুল’, ক্যামেরার সামনে দেবশঙ্কর-বাসবদত্তা! সৌজন্যে শৈবাল

পাশাপাশি দুই কবি। একজন বাস্তব, অন্য জন পর্দার। তাঁদের সেতুবন্ধ বাস্তব এবং পর্দার ‘ঘাসফুল’। সাক্ষী আনন্দবাজার অনলাইন।

এক ফ্রেমে অভিনেতা দেবশঙ্কর হালদার, কবি জয় গোস্বামী।

এক ফ্রেমে অভিনেতা দেবশঙ্কর হালদার, কবি জয় গোস্বামী। ছবি: বিশ্বনাথ আচার্য।

উপালি মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৮:৫৬
Share
Save

উত্তর কলকাতার বিডন স্ট্রিট। বিকেল সাড়ে তিনটে। ছাতুবাবু-লাটুবাবুর বাড়ির উল্টো দিকের তস্য গলি। তার ভিতরে লাল মার্বেলের মেঝেয় মোড়া ঘর। চিলতে উঠোন তাকে ঘিরে। বাড়িটির দোতলা-তিনতলাও রয়েছে। যাবতীয় ভিড় একতলার ওই ছোট্ট বসার ঘরটিতেই। কেন এত ভিড় সেখানে? ওখানে কবি জয় গোস্বামী বসে। তিনি ক্যামেরার মুখোমুখি। কবি নাকি অভিনয় করছেন! পর্দায় তাঁর সঙ্গী দেবশঙ্কর হালদার। শৈবাল মিত্রের পরিচালনায় তাঁরই লেখা বড় গল্প ‘ঘাসফুলের কবি’ নিয়ে নির্মীয়মাণ ছবি ‘ঘাসফুল’-এ।

খবর মিলতেই আনন্দবাজার অনলাইন হাজির সেখানে। জয় অভিনয় করছেন? সাক্ষাতের পর প্রথম প্রশ্ন ছিল এটাই। “ভারী অভিনয় করছি! কবি জয় গোস্বামী একটি দৃশ্যে কবিতা পড়বেন। সঙ্গী তাঁর পর্দার কবিবন্ধু ‘সোমেশ্বর বসু’। এই চরিত্রে দেবশঙ্কর হালদার। দুই কবির পাশাপাশি বসে কবিতাপাঠের দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করছেন শৈবাল”, বললেন কবি। দুই কবিই সেজেছেন সাদা পাঞ্জাবিতে। জয় গোস্বামীর কথা শুনে তত ক্ষণে গালে টোল ফেলে হাসছেন অভিনেতা দেবশঙ্কর।

‘ঘাসফুল’ ছবিতে সৌমিলি বিশ্বাস, বাসবদত্তা চট্টোপাধ্যায়।

‘ঘাসফুল’ ছবিতে সৌমিলি বিশ্বাস, বাসবদত্তা চট্টোপাধ্যায়। ছবি: বিশ্বনাথ আচার্য।

তার কিছু ক্ষণ আগেই নাকি জোর ঝগড়া পর্দার কবি আর কবিপত্নী সেঁজুতি মুখোপাধ্যায়ের মধ্যে। পরনে ছাইরঙের জমিনে সাদা ফুলছাপের ছাপা শাড়ি। হাতখোঁপায় লম্বা চুলের গোছা আটকানো, কপালে বড় টিপ। এই সাজেই সেঁজুতি দেবশঙ্করের পর্দার পত্নী। ক্যামেরার সামনে একপ্রস্ত কপট ঝগড়ার পর শট শেষ। রবিবার বিকেলে তাঁর নাটক মঞ্চস্থ হবে। সেঁজুতি তাই শুটিং সেট ছেড়ে মঞ্চের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন।

কবি আর তাঁর লেখার মহিলা অনুরাগীর গল্প নিয়ে ছবি ‘ঘাসফুল’। জয় গোস্বামীর কথায়, “আমি তাঁর নাম দিয়েছি ‘ঘাসফুল’। তিনি সত্যিই আছেন। এখনও তাঁর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ আছে।” দেবশঙ্করও জনপ্রিয় অভিনেতা। নিশ্চয়ই আপনার জীবনে অজস্র ‘ঘাসফুল’ সময় বিশেষে ফুটেছে? প্রশ্ন শুনে দরাজ হাসি খেলল অভিনেতার মুখে। বললেন, “আছে তো বটেই। তবে তাঁদের নাম নিতে চাই না। নিলেও আপনারা চিনবেন না। তাঁরা গোলাপ বা পদ্ম নন, আক্ষরিক অর্থেই ‘ঘাসফুল’। এঁরা আমাদের জীবনে নীরবে থেকে যান।”

বাস্তবে যদিও এমনটা ঘটেনি। ‘ঘাসফুল’-এর ডাকে তাঁর কাছে ছুটে গিয়েছিলেন কবি জয়!

চরিত্র মিয়ে গভীর আলোচনায় দেবশঙ্কর হালদার, পরিচালক শৈবাল মিত্র।

চরিত্র মিয়ে গভীর আলোচনায় দেবশঙ্কর হালদার, পরিচালক শৈবাল মিত্র। ছবি: বিশ্বনাথ আচার্য।

সেই শুরু। ২৩ বছর ধরে সেই রয়াসন অটুট। সত্যিকারের ‘ঘাসফুল’ দরকারে-অদরকারে কবিকে সামলে দেন, আজও! এই চরিত্রে বাসবদত্তা চট্টোপাধ্যায়। এ দিন তিনি জিন্‌স, ক্যাজ়ুয়াল টপ, খোলা চুলে অনায়াস। মুখোমুখি হতেই বাসবদত্তা উত্তেজিত, “ভাবুন, এক অনুরাগীর ডাকে সাড়া দিতে কবি জয় গোস্বামী দৌড়োচ্ছেন তাঁর কাছে!”

সত্যিই যদি এমন কিছু আপনার জীবনে ঘটত? আপনি যদি এ রকমই কোনও খ্যাতনামীর ‘ঘাসফুল’ হতেন?

বাসবদত্তার গালে বুঝি লালচে ছোপ! অস্ফুটে বলে উঠলেন, “আর বলবেন না! শুনেই গায়ে কাঁটা দিচ্ছে।” পর্দার ‘ঘাসফুল’-এর দিদি ‘দিঘি’। এই চরিত্রে সৌমিলি বিশ্বাস। এ ছাড়াও আছেন, অর্ক দেব, নিমাই ঘোষ, অসীম রায়চৌধুরী। কেন এই গল্প বাছলেন পরিচালক? শৈবালের কথায়, “এক একটা গল্প থাকে, যা পড়ার পর মনে হয়, ছবি বানাতে পারলে বেশ হয়। জয়দার এই মিষ্টি প্রেমের গল্পও সে রকমই।” বছর দুয়েক আগেই তিনি পর্দায় ‘ঘাসফুল’ ফোটাবেন ভেবেছিলেন। তখনই ঠিক করেছিলেন, বাসবদত্তা, দেবশঙ্কর তাঁর ছবিতে থাকবেন। শৈবাল যুক্তি দিয়েছেন, “এক মুখ দেখতে দেখতে দর্শক ক্লান্ত। তাঁদের কাছে অন্য রকম কিছু তুলে ধরার বাসনা থেকেই এই ছবি। তা ছাড়া, আমি তথাকথিত তারকা অভিনেতাদের নিয়ে কাজ করে অভ্যস্ত নই। বরং মঞ্চাভিনেতাদের সঙ্গে কাজে বেশি স্বচ্ছন্দ। তাই আমার ছবিতে দেবশঙ্কর।” ইতিমধ্যেই ছবির শুটিং চলছে নিউ টাউন, বিডন স্ট্রিট মিলিয়ে কলকাতা জুড়ে।

পর্দার কবি দেবশঙ্কর হালদার, কবিপত্নী  সেঁজুতি মুখোপাধ্যায়।

পর্দার কবি দেবশঙ্কর হালদার, কবিপত্নী সেঁজুতি মুখোপাধ্যায়। ছবি: বিশ্বনাথ আচার্য।

বিকেলের আলো ক্রমশ কমছে। ছোট্ট ঘরে আলো-আঁধারির খেলা। শৈবাল প্রাকৃতিক আলো ধরবেন বলে বাড়তি কোনও আলো নেননি তখনও। সবুজরঙা জানলার গরাদ চুঁইয়ে শেষ বিকেলের পড়ন্ত রোদ মেঝেয় এসে পড়েছে। যার প্রতিফলনে পর্দার কবির চোখেমুখে আলোর এক অদ্ভুত খেলা। বেরিয়ে আসার সময় আসল চমক! গোলাপি সালোয়ার-কামিজ। কাঁধ ছোঁয়া খোলা চুলে সাদামাঠা চেহারার এক মধ্যবয়স্কা জোড়হাতে এগিয়ে এলেন...

“নমস্কার, আমি শর্মিষ্ঠা। কবি জয় গোস্বামীর সত্যিকারের ‘ঘাসফুল’! ২৩ বছর ধরে কবিসঙ্গ। তবু মোহ টুটিল না।” কবি এসেছেন শুটিংয়ে। শর্মিষ্ঠা সেই দুর্লভ মুহূর্তের সাক্ষী হতে সেটে। ইনিই সেই! যাঁর এক ডাকে সাড়া দিয়ে ছুটে গিয়েছিলেন কবি! কারণ, শর্মিষ্ঠা কোনও দিন কিচ্ছু চাননি কবির থেকে। কেবল কবির সান্নিধ্য আর তাঁর লেখা ছাড়া... বিহ্বল দৃষ্টিতে তাঁকে দেখতে দেখতেই চোখ গেল পাশের দিকে। বাসবদত্তাও একই ভাবে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে তাঁর দিকে।

‘ঘাসফুল’-এর শুটিংয়ে বাসবদত্তা চট্টোপাধ্যায়।

‘ঘাসফুল’-এর শুটিংয়ে বাসবদত্তা চট্টোপাধ্যায়। ছবি: বিশ্বনাথ আচার্য।

রবিবারের অলস বিকেলকে সাক্ষী রেখে সেতুবন্ধ তৈরি হল কবির পর্দা আর বাস্তব ‘ঘাসফুল’-এর মধ্যে। দূরে দাঁড়িয়ে তৃপ্তির হাসি হাসছেন পরিচালক শৈবাল।

Debshankar Halder Saibal Mitra Soumili Biswas Basabdutta Chatterjee

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}