Advertisement
E-Paper

মায়া ধরাতে পারল কই!

গল্প গড়ায় প্রথমে দুই আলাদা ধারায়। আবার মোহনায় এসে মেলেও, যখন এনা আর ইরা মায়াবশত তাদের পড়শি মায়াদিদির মলিন জীবনে রং লাগাতে ভুয়ো প্রেমিকের নামে চিঠি পাঠাতে থাকে।

দেবশঙ্কর মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০১৭ ০০:০০

ডিয়ার মায়া

পরিচালনা: সুনয়না ভাটনগর

অভিনয়: মনীষা, মাদিহা, শ্রেয়া

৫/১০

শিওর সেঞ্চুরিটা মাঠে ফেলে ব্যাটসম্যানকে প্যাভিলিয়নে ফিরতে দেখলে যেমন লাগে, ‘ডিয়ার মায়া’ দেখে অনেকটা তেমনই হল!

ফার্স্ট হাফের বহু দূর পর্যন্ত মনে হচ্ছিল, যেন আন্তন চেকভের কাহিনির মতো কতকগুলো ক্লাইম্যাক্সকে খাপে খাপ জুড়তে দেখছি। আবার আলবেয়র কামুর অন্তচারী গল্পগুলোর শাখা বেয়ে উঠতে উঠতে যেমন অন্ধকারাচ্ছন্ন মুহূর্তগুলো তাপ ছড়ায়, ঠিক তেমনই আঁচ পাচ্ছি।

এক দিকে মায়ার নিস্তরঙ্গ হারানো যৌবনের দমবন্ধ করা কোলাজ, অন্য দিকে সাইন কার্ভের মতো নিখুঁত তরঙ্গে ভাসা উচ্ছ্বল কিশোর-কিশোরীর খাট্টা-মিঠা চলাফেরা। এই দুই মেরুর অদ্ভুত যোগাযোগেই হঠাৎ হঠাৎ ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে যাচ্ছে গল্পের বাঁক।

পাহাড়িয়া সিমলার ছোট্ট জনপদে দুর্গসদৃশ রহস্যময় বাড়ি। সেখানেই বাস বিগতযৌবনা মায়া (মনীষা কৈরালা), তার পরিচারিকা, পোষ্য দুই বৃহদাকার গ্রেট ডেন সারমেয়, আর অসংখ্য খাঁচাবন্দি পাখির।

মায়া কুড়ি বছর ঘরবন্দি। জীবন সম্পর্কে বীতস্পৃহ। শৈশবে পিতৃহারা। মা পরিত্যক্তা। সম্পত্তিলোভী চাচার অবিচারের শিকার। বিবাহ-বঞ্চিতা। চলাফেরায় সে কখনও বিদেহী আত্মার মতো। কখনও অপ্রকৃতিস্থ মনোরোগী যেমন। কালো পোশাক। পেটের আড়ালে গোঁজা চাকু। ঢোকা গাল। চোখের কোণে কালি। মাথায় ঘোমটা। শূন্য দৃষ্টি। ঘরের নিভু নিভু আলোয় মাটিতে বসে মায়া পুতুল বানায়। কালো কালো পোশাকের মাটির পুতুল। অন্য দিকে কনভেন্টে পড়া দুই কিশোরী এনা (মাদিহা ইমাম), ইরা (শ্রেয়া চৌধুরী)। তাদের বন্ধুবান্ধব। বাবা-মা।

এনা-ইরাদের জীবনে লুকিয়ে রাখা ট্যাটু আছে, পাহাড়ি পথের সাইকেল আছে। প্রেম, বন্ধুত্ব, ফ্লার্ট আছে। চড়া রসের গল্প, ম্যামের শাসন, বাড়ির সোহাগ-বকুনি
সব আছে।

গল্প গড়ায় প্রথমে দুই আলাদা ধারায়। আবার মোহনায় এসে মেলেও, যখন এনা আর ইরা মায়াবশত তাদের পড়শি মায়াদিদির মলিন জীবনে রং লাগাতে ভুয়ো প্রেমিকের নামে চিঠি পাঠাতে থাকে।

অস্বচ্ছ কাচের আড়ালে ঢিমে হলুদ আলোয় প্রথম দেখা মায়া ফসিল হয়ে যেতে যেতেও কেমন জাদুবলে প্রাণ পেতে থাকে, এই চিঠিগুলো পড়ে। তার ধূলিমলিন দেওয়াল, সার সার ছবি টাঙানো আধিভৌতিক ঘরের এক কোণে ডাঁই করে রাখা কালো কালো পুতুলগুলোর গায়েও তখন রঙের পোঁচ ওঠে। প্রেমের অদৃশ্য কুহকিনী ডাকে মায়া ধীরে ধীরে জাগতে থাকে। সে রঙিন হয়। ঘর ছেড়ে বেরোয়। ক্রমে তার ভীরু চাউনির ভার সরে যায়।

এনা-ইরাও পড়শি দিদির এমন মায়াবী বদলে উৎসাহ পেয়ে উপর্যুপরি চিঠি পাঠাতেই থাকে। শেষে অতি উৎসাহী ইরা দুটি কাণ্ড করে বসে। পরিণতি? ঘরবাড়ি আসবাব বেচে মায়ার দিল্লি পাড়ি দেওয়া। ইরা-এনার বন্ধুত্ব বিচ্ছেদ। মেয়েকে ‘বেপথু’ হয়ে যাওয়া থেকে আগলাতে এনাকে তার বাবা-মা’র সিমলাছাড়া করে দিল্লিরই বোর্ডিং স্কুলে পাঠিয়ে দেওয়া।

ছায়াঘেরা, রহস্যাবৃত মায়ার জীবনে যত আলো পড়তে থাকল, ততই যেন সরে সরে যেতে থাকে কাহিনির মায়াময়তা।

একটু বাদেই মনে হয়, পরিচালক সুনয়না ভাটনগর তাঁর প্রথম ছবিকে নিয়ে ‘হ্যাপি এন্ডিং’-এর গড় খেলায় নামলেন। যে কারণে আরও একটা ‘লাঞ্চবক্স’তুল্য ছবির ভ্রূণ অনেক স্বপ্ন দেখিয়েও অপমৃত্যুর দিকে চলে গেল।

হারিয়ে গেল ক্যামেরার ন্যূনতম ম্যাজিক, সংলাপে ঝরতে থাকা মুক্তোদানা, অভিনয়ের সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম ব্রাশস্ট্রোক। ঢুকে পড়ল হঠাৎ-প্রেম, আচমকা মেলোড্রামা, উৎপটাং নাইটক্লাব। বহুল প্রচারিত সেই সাবানের জিঙ্গলটা মনে পড়ছিল, ‘সোনা সোনা নতুন....।’ সব সোনা, জীবন থেকে তামা, পেতল লা-পতা! ফলে যা হয়। মনীষা তো বটেই, মাদিহা-শ্রেয়ারও তুখড় অভিনয় ক্রমেই মাঠে মারা যেতে লাগল। একমাত্র হালকা চামরের আরাম দিয়ে টুক করে পালিয়ে গেল ‘হাউ ডু আই সে গুডবাই’ গানটা (সংগীত পরিচালক অনুপম রায়)।

পরিচালক-কাহিনিকার আগেভাগেই কি ঠিক করে রেখে ছিলেন ভাঙা জীবনে ঘুরে দাঁড়ানোর কাহিনি ফাঁদবেন? আর নীতিবাক্যটি অনেকটা ঈশপের গল্পের মতো আন্ডারলাইন করে দেবেন শেষে, ‘অলওয়েজ ইয়েস টু লাইফ’!

ছবি দেখে অন্তত তেমনই মনে হল। ফলে পায়ে পায়ে অনাবশ্যক ডবল দাঁড়ির ভিড়। পাহাড়ের ধসে আটকানো যানের মতোই শ্লথ হল গল্পের গতি। পড়ে রইল জ্ঞানস্য জ্ঞান, তস্য জ্ঞান। শেষমেশ বরং মায়া হয় পরিচালকের প্রতি, ছবিতে সেই মায়া ধরা পড়ল কই!

Film review Dear Maya Movie Reviews
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy