১
সৃজিত মুখোপাধ্যায়
ধারাবাহিকতা: সৃজিত মুখোপাধ্যায় মানেই বক্স অফিস সাফল্য, দারুণ গান, চটকদার সংলাপ, ক্লাইম্যাক্সে টুইস্ট। কেউ কেউ তাঁকে ‘প্যাকেজিং এক্সপার্ট’ও বলে থাকেন। কিন্তু তাতে তাঁর বা দর্শকের কিছু আসে যায় না। কমার্শিয়াল ছবিতে কী চাই সেটা ভাল বোঝেন। তার সঙ্গে যোগ হয় বুদ্ধিমত্তা। ইন্ডাস্ট্রিতে সব পরিচালকের বেঞ্চমার্ক এই মুহূর্তে তিনি, শেষ ছবির বিপর্যয়ের পরেও।
সাম্প্রতিক ফর্ম: এ বছরে সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের একটি ছবি মুক্তি পেয়েছে। ‘নির্বাক’। সেই ‘নির্বাক’ দেখে অনেকে নির্বাক হয়ে গিয়েছেন যে, সৃজিতের বক্স অফিস সফল মনন কী করে এই ছবি বানাল। তবে বাণিজ্যিক সাফল্যের পাশাপাশি গত বছর ‘চতুষ্কোণ’য়ের জন্য তাঁর আলমারির লকারে এসে পড়েছে স্বর্ণকমল।
প্রযোজকদের ভিড়: সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের বাড়ির সামনে প্রয়োজকদের ভিড় প্রথম ছবির পর থেকেই। কিন্তু সে দিকে তিনি নাক উঁচু। নতুন বা একেবারে অনামী ব্যানারে ছবি বানান না। ‘নির্বাক’ তাঁর সবচেয়ে বড় ফ্লপ। এখন দেখার ‘রাজকাহিনি’ কেমন চলে! না হলে ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলার মতো পরিচালক এসে গিয়েছেন।
তারাদের কাঙ্ক্ষিত গ্রহ: নায়িকা থেকে নায়ক — সৃজিতের ছবির জন্য ডেট অ্যাডজাস্ট করতে সবাই তৈরি। মাঝেমধ্যে ‘ব্যক্তিগত’ ভাল লাগার বশে কাস্টিং করেন কিন্তু অধিকাংশ সময়ই তাঁর কাস্টিং হয় পারফেক্ট। নায়ক-নায়িকার পুরনো ইমেজ ভেঙে নতুন ইমেজ বানাতেও সবার উপরে তিনি। যেমন, ‘অটোগ্রাফ’য়ে প্রসেনজিৎ, ‘চতুষ্কোণ’য়ে চিরঞ্জিত। এ বছর বলা হচ্ছে ঋতুপর্ণা তাঁর কেরিয়ারের মোড় ঘোরানো চরিত্র করেছেন ‘রাজকাহিনি’ ছবিতে।
বিবিধ: আপাতত অসুস্থ। তবু তাঁর পা স্বাভাবিক অবস্থায় আসার জন্য সবাই ধৈর্য ধরতে রাজি। শ্যুটিং ফ্লোরে সৃজিত কবে ফিরবেন সেটা বাংলার আর্বান সিনেমা জগতের নিয়ত জিজ্ঞাসা। একটাই সমস্যা তাঁর— সৃজিত নিছক বক্স অফিসে খুশি নন। চান কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো তাঁর ছবিও ফেস্টিভ্যালসিদ্ধ হোক।
২
শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়-নন্দিতা রায়
ধারাবাহিকতা: ‘ইচ্ছে’ থেকে যে যাত্রা শুরু, তাতে ধারাবাহিকতার স্ট্রাইক রেটে সৃজিত মুখোপাধ্যায়কেও পিছনে ফেলে দিতে পারেন এই জুটি। ‘বেলাশেষে’ বছরের প্রথম ছ’মাসের সবচেয়ে বড় হিট। তাঁদের প্রায় সব ছবিই একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ ব্যবসা করে। সমালোচকরা বলেন টিভি সিরিয়ালের মোড়কে ছবি বানান তাঁরা কিন্তু দর্শক সেটাই পছন্দ করছে।
সাম্প্রতিক ফর্ম: ব্যাপক ফর্মে ব্যাটিং করছেন। অবাঙালি দর্শক নিয়মিত ‘বেলাশেষে’ দেখছে এবং অনেকে চোখের জল মুছতে মুছতে হল থেকে বেরোচ্ছে। অষ্টম সপ্তাহেও হাসতে হাসতে হাউসফুল। ‘ভূতের ভবিষ্যত’য়ের পর আর কোনও বাংলা ছবি এতটা অবাঙালি আগ্রহ পায়নি। ‘বেলাশেষে’ ইতিমধ্যেই তিন কোটি টাকা কামিয়েছে বক্স অফিসে। স্যাটেলাইট রাইটসও কোটি টাকার বেশি দামে বিক্রি হবে বলেই ধারণা।
প্রযোজকদের ভিড়: প্রযোজকরা ঠিক এই মুহূর্তে ব্ল্যাঙ্ক চেক নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন এঁদের পরের ছবি প্রযোজনা করতে। সমস্যা হল, এই জুড়ি প্রযোজক হিসেবে অতনু রায় চৌধুরীর বাইরে যেতে চান না।
তারাদের কাঙ্ক্ষিত গ্রহ: একটা সময় পুরুষ অভিনেতাদের ধারণা ছিল নিজে অভিনেতা বলে তাঁদের অথরব্যাকড রোল দেন না শিবপ্রসাদ। কিন্তু ‘বেলাশেষে’র সাফল্যের পর সবাই এখন তাঁর সঙ্গে কাজ করতে উদগ্রীব। অর্থনীতির ভাষায়: বায়ার্স মার্কেট থেকে শিবপ্রসাদ এখন সেলার্স মার্কেটে।
বিবিধ: এই মুহূর্তে নিঃসন্দেহে টোস্ট অব দ্য সিজন। মধ্যবিত্ত নাগরিক জীবনের সমস্যাগুলোকে খুব ভাল আইডেন্টিফাই করেন তাঁরা। একটাই শঙ্কা— এর বাইরের বড় আকাশে ঝুঁকি নিয়ে ছবি হিট করাতে পারবেন?
৩
কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়
ধারাবাহিকতা: ‘আরেকটি প্রেমের গল্প’ বক্স অফিসে ভাল চললেও ইন্ডাস্ট্রির মতে ‘শব্দ’ থেকেই কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু। তারপর ‘C/O স্যর’, ‘অপুর পাঁচালি’, ‘খাদ’— সব ক’টা ছবিই কলকাতার শহুরে মাল্টিপ্লেক্স দর্শকের পছন্দ হয়েছিল। এ বছরের শুরুতে ‘ছোটদের ছবি’ একেবারেই বক্স অফিস সাফল্য না পেলেও জাতীয় পুরস্কার থেকে নানা বিদেশি ফেস্টিভ্যালে সমাদৃত হয়েছে। রিমেক বা অনুপ্রাণিত হয়ে ছবি বানান না। তাঁর সব গল্পই মৌলিক।
সাম্প্রতিক ফর্ম: দর্শক টানার ব্যাপারে সাম্প্রতিক ফর্মে উন্নতির প্রচুর অবকাশ রয়েছে। তবে এই সময়ে বাঙালি পরিচালকদের মধ্যে গোয়ার ইফি-তে শ্রেষ্ঠ পরিচালকের পুরস্কার কি জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার সেরা বাজি কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়। ‘বাস্তুশাপ’ শেষ করে দেবের সঙ্গে পরের ছবির প্ল্যানিং করছেন।
প্রযোজকদের ভিড়: প্রযোজকদের প্রচুর ফোন পান কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়। রানা সরকার থেকে শ্যামসুন্দর দে ও কৌস্তুভ রায় থেকে নীলরতন দত্ত— তাঁর সঙ্গে ছবি করতে আগ্রহী সবাই। প্রোডিউসর ফ্রেন্ডলি ডিরেক্টর, বাজেট নিয়েও ফ্লেক্সিবল। সঙ্গে বড় পুরস্কার পাওয়ার সম্ভবনা। এই ফ্যাক্টরগুলোর জন্যই কৌশিকের এত ডিম্যান্ড।
তারাদের কাঙ্ক্ষিত গ্রহ: ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁর সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী সব অভিনেতা-অভিনেত্রী। সেটা কিছুটা পুরস্কারপ্রাপ্ত ছবির অংশীদার হওয়ার জন্য, কিছুটা ভাল অভিনয় শেখার জন্য। পরের ছবি দেবকে নিয়ে করলে এই প্রথম কোনও সুপারস্টারের সঙ্গে কাজ করবেন তিনি। ঋতুপর্ণ ঘোষের পর নায়িকাদের অন্যতম প্রিয় পরিচালক। সেটা রোলের জন্য তো বটেই, আর কারও কারও মতে গভীর রাতের এসএমএসে বিরক্ত করবেন না সেটার জন্যও।
বিবিধ: কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রধান সমস্যা, তিনি গড়পড়তা দর্শক আনুকূল্য পেতে চান। চান সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের মতো তাঁর ছবিও বক্স অফিসে দারুণ সফল হোক।
৪
অরিন্দম শীল
ধারাবাহিকতা: এ বছরের শুরুতে ফেলুদা, ব্যোমকেশের মতো প্রতিষ্ঠিত গোয়েন্দাদের ভিড়ে, কোথা থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসেন তিনি আর শবর দাশগুপ্তকে দিয়ে ছবি সুপারহিট করিয়ে গোটা ইন্ডাস্ট্রিকে চমকে দেন অরিন্দম শীল।
অরিন্দমের প্রথম ছবি ‘আবর্ত’ অনেকেরই ভাল লেগেছিল কিন্তু বক্স অফিসে তেমন সফল হয়নি। অথচ ‘এবার শবর’ নিঃসন্দেহে বছরের অন্যতম বড় হিট।
সাম্প্রতিক ফর্ম: তুরীয় মেজাজে রয়েছেন অরিন্দম শীল। পরের ‘ব্যোমকেশ’য়ের পরিচালক তিনি। কিন্তু আনন্দplus রেটিংয়ের প্রথম পাঁচে একমাত্র তিনিই নিজের স্ক্রিপ্ট নিজে লেখেন না। পরে এটাই না তাঁর সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হয়ে দাঁড়ায়, আশঙ্কা ইন্ডাস্ট্রির।
প্রযোজকদের ভিড়: অরিন্দম শীলের সঙ্গে কাজ করতে ইচ্ছুক সব বড় প্রযোজক। কম বাজেটে ছবি বানান। নিজে এক্সিকিউটিভ প্রোডিউসর বলে কোথায় খরচ কমাতে হয় জানেন।
তারাদের কাঙ্ক্ষিত গ্রহ: অরিন্দম শীল মানেই হয় সাদা নয় কালো। কিছু কিছু অভিনেতা-অভিনেত্রীর প্রাণের বন্ধু। বেশির ভাগের
আবার চরম শত্রু। কিন্তু ফিল্ম
ইন্ডাস্ট্রি সে সবের ধার ধারে না, এখানে বিচার হয় পরিচালকের শেষ ছবি। ‘এবার শবর’ যেহেতু সুপার হিট, অধুনা বেশির ভাগ অভিনেতা-অভিনেত্রী তাঁর সঙ্গে কাজ করতে প্রবল আগ্রহী।
বিবিধ: অহেতুক খরচ করেন না। দুর্দান্ত প্রোডাকশন ডিজাইন। দেড় কোটি টাকার ছবিও মনে হয় চার কোটি টাকার। সঙ্গে রয়েছে ব্যবসা-বাণিজ্য মহলে অবাধ বিচরণ। তাই অরিন্দম শীলের কখনও ফান্ড বা লোকেশনের অভাব হয় না। রাজনৈতিক কারণে কাস্টিং করেন ঠিকই, কিন্তু তাতে কার কী!
৫
অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়
ধারাবাহিকতা: আজ অবধি একটাই ছবি বানিয়েছেন, যেটা সুপারহিট। ‘ওপেন টি বায়োস্কোপ’ বছরের অন্যতম সেরা ছবি। সঙ্গে বক্স অফিস সাফল্য। টলি পৃথিবীতে আবির্ভাবেই চমক।
সাম্প্রতিক ফর্ম: পরের ছবির প্ল্যানিং চলছে। প্রথম ছবি হিটের কনফিডেন্স তো রয়েইছে। শোনা যাচ্ছে পরের ছবির কাস্টিংয়েও চমক। এই মুহূর্তে ইন ফর্ম ব্যাটসম্যান।
প্রযোজকদের ভিড়: আনন্দplus-এর সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন তাঁর পরের ছবির প্রযোজকও সুজিত সরকার। তাই প্রযোজকরা এখনও ভিড় করেননি। কিন্তু মাঝেমধ্যেই ফোন আসছে প্রোডিউসরদের, তৃতীয় ছবির জন্য। চাহিদার এটাই সেরা নমুনা।
তারাদের কাঙ্ক্ষিত গ্রহ: অভিনেতা-অভিনেত্রীরা অবশ্যই তাঁর সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। ‘ওপেন টি’তে রজতাভ-সুদীপ্তাকে দিয়ে যে অভিনয় করিয়েছেন, তাতে মুগ্ধ ইন্ডাস্ট্রি।
বিবিধ: অমায়িক ব্যবহার। সবজান্তা ভাব নেই। মাটিতে পা রেখে চলেন, অযথা আঁতলামি করেন না। ছিদ্রান্বেষীরা বলছে, প্রথম ছবিটা বিগিনার্স লাক-এর জন্য। দ্বিতীয় ছবির ভাগ্য অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ।
ছবি: কৌশিক সরকার ও সুব্রত কুমার মণ্ডল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy