অর্ণ মুখোপাধ্যায় মঞ্চে দাপিয়ে অভিনয় করেন। পর্দাতেও তিনি অনায়াস। পরিচালনায় হাতেখড়ি ‘অথৈ’ ছবি দিয়ে। তিনি ব্যর্থ প্রেমিক বা ব্যর্থ ক্রিকেটার— এই তথ্য ক’জন জানেন? যাঁরা জানেন তাঁদের নয়, যাঁরা জানেন না তাঁদের জন্য খবর, অর্ণের দ্বিতীয় ছবির বিষয় তাঁর জীবন। তাঁর ক্রিকেট জীবনের ব্যর্থতা ধরা দিতে চলেছে তাঁর দ্বিতীয় ছবি ‘পুবের জানালা’য়। আনন্দবাজার ডট কমের কাছে এ কথা স্বীকার করেছেন তিনি! প্রযোজনায় ক্যামেলিয়া প্রোডাকশনস।
ভোরের প্রথম আলো পুবের জানলা দিয়েই ছড়িয়ে পড়ে, যা ব্যর্থতা ভুলে নতুন ভাবে জেগে ওঠার বার্তা দেয়। শৈলশহরে এমন জানালা কোথায়? ওখানে এই রোদ এই বৃষ্টি! তেমনই পরিবেশে উত্তরবঙ্গের এক ‘ভার্জিন স্পট’-এ গৌরব চক্রবর্তী, প্রিয়াঙ্কা সরকার আরও কয়েক জনকে নিয়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন পরিচালক-অভিনেতা অর্ণ মুখোপাধ্যায়। তাঁর দ্বিতীয় ছবির শুটিং করতে। অর্ণের প্রথম ছবি শেক্সপিয়রের জনপ্রিয় নাটক ‘ওথেলো’ অবলম্বনে তৈরি। এ বার তিনি নাটকের ছত্রছায়া থেকে বেরিয়ে এসেছেন।

টিম নিয়ে শৈলশহরে পরিচালক-অভিনেতা অর্ণ মুখোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।
কী ভাবে ছবিতে জায়গা করে নিল পরিচালকের জীবন? ছবির নায়ক-নায়িকা আবেল আর আনন্দী। প্রথম জন ব্যর্থ ক্রিকেটার। দ্বিতীয় জন ব্যর্থ লেখিকা। খেলার দুনিয়ায় প্রথম জনের যথেষ্ট সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু নিজেকে কী করে মেলে ধরতে হয় সেই খেলা তার জানা নেই। তাই সে খেলার দুনিয়াকে বিদায় জানিয়ে শিক্ষকতা করছে! আর কলম যার অস্ত্র হওয়ার কথা, বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই তুখোড় ছাত্রী কী করছে? ব্যর্থতার গ্লানি ঢাকতে সে নিজের চারপাশে এত বড় দেওয়াল তুলে দিয়েছে যে তাকে ডিঙিয়ে আনন্দীকে জানার সাধ্য কারও নেই। তাই পূর্ব পরিচয় থাকলেও আবেল জানে না আনন্দী কী করে। যদিও উভয়েই কাকতালীয় ভাবে উত্তরবঙ্গে।
দীর্ঘ ১৫ বছর পরে তাদের এই সাক্ষাৎ কি দূরত্ব মুছে ভালবাসার নতুন আলোয় ভরিয়ে দেবে?
“তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। বড় পর্দায় দেখতে হবে এই ছবি”, ছবির পোস্ট প্রোডাকশনের কাজে ব্যস্ত পরিচালকের সহাস্য উক্তি। ছবিতে আনন্দী-আবেলের ভূমিকায় গৌরব চক্রবর্তী, প্রিয়াঙ্কা সরকার। ছবির কাহিনিকারও অর্ণ। চিত্রনাট্য লিখেছেন সুমিত দেব। অভিনয়ের লোভটাও ছেড়ে দেওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি। তাই একটি ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে দেখা যাবে অর্ণকেও।
অর্ণের প্রথম পরিচালনায় তারকার হাট। সোহিনী সেনগুপ্ত, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, দিতিপ্রিয়া রায়, কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায়, অর্পণ ঘোষাল, মিমি দত্ত, কৌশিক চক্রবর্তী ছিলেন। এই ছবিতে অভিনেতার বাহুল্য নেই! গল্পে প্রেম থাকলেও প্রতিহিংসা নেই! অর্ণ কি তা হলে শুধুই প্রেমে বিশ্বাসী? প্রশ্ন শুনে হেসে ফেলেছেন অভিনেতা। বলেছেন, “প্রেমে অবশ্যই বিশ্বাস আছে। তার মানেই আমার একাধিক প্রেম এমনও নয় কিন্তু।” হয়তো বাস্তবে ব্যর্থ ক্রিকেটার নন কিংবা ব্যর্থ প্রেমিকও নন... কথা ফুরনোর আগেই থামিয়ে দিয়েছেন তিনি। “কে বলেছে আমি ক্রিকেট জানি না? হ্যাঁ, আমি ব্যর্থ ক্রিকেটার। ব্যর্থ প্রেমিক কি না সেটা বলে দিলে মজা চলে যাবে।” একটু থেমে যোগ করেছেন, “জীবন থেকেই তো ছবি উঠে আসে।”

অর্ণের ছায়া গৌরব? ছবি: সংগৃহীত।
পর্দায় অর্ণের ব্যর্থ ক্রিকেটারের সত্তায় গৌরব। ব্যর্থ প্রেমিকের ভূমিকায় কি পরিচালক নিজে? তিনিই কি প্রিয়াঙ্কার পর্দার অতীত?
প্রশ্ন রাখতেই সতর্ক অর্ণ। ব্যস্ত গলায় জানালেন, আপাতত এ টুকুই। ক’টা দিন তাঁর পছন্দের দুই অভিনেতাকে নিয়ে মজা করে শুটিং করেছেন। তাঁর শুটিংয়ে প্রকৃতিও বড় ভূমিকা পালন করেছে। ক্যামেরার সামনে মেঘ ভেসে এসে জীবন্ত চরিত্র হয়ে ধরা দিয়েছে। তাঁর গল্পের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রোদ উঠেছে শৈলশহরে! নেমেছে বৃষ্টি। “আপাতত এই গল্পই না হয় জানলেন পাঠক। বাকিটা প্রেক্ষাগৃহে এসে দেখে যাবেন।”