Advertisement
E-Paper

নিকোলের ছবি কলকাতায় শ্যুটিং

সত্যি ঘটনার ভিত্তিতে তৈরি হচ্ছে হলিউড ফিল্ম। যেখানে কলকাতা থেকে দত্তক নেওয়া এক যুবকের ভূমিকায় অভিনয় করছেন দেব পটেল। লিখছেন প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত।সত্যি ঘটনার ভিত্তিতে তৈরি হচ্ছে হলিউড ফিল্ম। যেখানে কলকাতা থেকে দত্তক নেওয়া এক যুবকের ভূমিকায় অভিনয় করছেন দেব পটেল। লিখছেন প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত।

শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:০০

গল্প হলেও সত্যি।

হ্যাঁ, এটা হতে পারত সিনেমাটার নাম। যে ছবিতে অভিনয় করছেন হলিউড অভিনেত্রী নিকোল কিডম্যান। সঙ্গে থাকছেন ‘স্ল্যামডগ মিলিয়নেয়ার’ খ্যাত দেব পটেল। যিনি ছবিটির জন্য শ্যুটিং করতে আসবেন খোদ কলকাতায়। কারণ ছবির গল্প কলকাতায় আশ্রিত এক বাচ্চার জীবনকে কেন্দ্র করে। আন্তর্জাতিক ছবিতে কাজ ছাড়াও, দেব এ নাগাদ তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের কিছু ঘটনার জন্যও শিরোনামে থেকেছেন। খবরে এসেছে তাঁর ছ’বছরের পার্টনার ফ্রিডা পিন্টোর সঙ্গে কিছু দিন আগেই ছাড়াছাড়ি হয়ে গিয়েছে।

নিকোল, দেব অভিনীত হলিউড ছবির নাম ‘লায়ন’। যার চিত্রনাট্য অনুপ্রাণিত হয়েছে ‘আ লং ওয়ে হোম’ বইটা থেকে। লেখক সারু ব্রিরলে। সারু নিজের জীবনের ঘটনাকে কেন্দ্র করেই লিখেছেন এই গল্পটি। ছবির পরিচালক গার্থ ডেভিস। এর আগে জেন ক্যাম্পিয়নের সঙ্গে পরিচালনা করেছিলেন গোল্ডেন গ্লোব বিজয়ী মিনি সিরিজ ‘টপ অব দ্য লেক’। ২০০৮য়ে তিনি কান-এ গোল্ডেন লায়ন জেতেন এবং দু’বছর পর ডিরেক্টর্স গিল্ড অব আমেরিকা-র সেরা কমার্শিয়াল ডিরেক্টরের নমিনেশন পান। ‘লায়ন’য়ের চিত্রগ্রাহক হলেন গ্রেক ফ্রেজার। যিনি এর আগে অস্কার বিজয়ী ‘জিরো ডার্ক থার্টি’র সিনেমাটোগ্রাফির জন্য বিখ্যাত। ছবির মূল প্রযোজক ইয়ান ক্যানিং। যিনি এর আগে অস্কার বিজয়ী ছবি ‘দ্য কিংস স্পিচ’ প্রযোজনা করেছেন।

কিন্তু কে এই সারু?

২০১২তে তাঁর জীবনের এক ঘটনাকে নিয়ে চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছিল সারা দুনিয়ায়। যখন বয়স পাঁচ কী ছয় তখন মধ্যপ্রদেশের এক গ্রাম থেকে হারিয়ে যান তিনি। খান্ডোয়া গ্রামের ছেলে সারু। তাঁর দাদা গুড্ডু তাঁকে নিয়ে এসেছিলেন স্টেশনে। প্রায় রোজই ট্রেনের কামরায় পড়ে থাকা খুচরো পয়সা খুঁজে রোজগার করতেন দু’ভাই। এ রকমই এক দিনে পয়সা কুড়নোর ক্লান্তির পর চোখে ঘুম নেমে আসে। তন্দ্রা থেকে উঠে দেখেন দাদা নেই। সামনে একটা ট্রেনের কামরা। উঠে পড়েন সেখানে। ভাবেন হয়তো দাদা সেই ট্রেনেই উঠেছেন। কিন্তু ট্রেনে উঠেও দাদাকে খুঁজে পান না। ট্রেন ছেড়ে দেয়। প্রায় এক হাজার মাইল পেরিয়ে সারু চলে আসেন কলকাতায়।

অচেনা শহরে পথে পথে ঘোরার শেষে একদিন ঠাঁই হয় ইন্ডিয়ান সোসাইটি ফর স্পনসরশিপ অ্যান্ড অ্যাডপশনে। কিছু দিন পরে সেখান থেকেই তাঁকে দত্তক নেন তাসমানিয়া নিবাসী এক অস্ট্রেলীয় দম্পতি। নাম সু আর জন ব্রিরলে।

তবে সারুর জীবনের চমক এখানেই শেষ হয় না। তাসমানিয়াতে গিয়ে পড়াশোনা করে বিজনেস ম্যানেজমেন্টের ডিগ্রি লাভ করেন। দত্তক পরিবারের ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্মে যোগ দেন। কিন্তু সারুর মন পড়ে থাকে ভারতে। মাঝে মধ্যে ভাবতে থাকেন কী ভাবে যোগাযোগ করবেন জন্মদাত্রী মায়ের সঙ্গে। স্মৃতিতে ফিরে ফিরে আসে তাঁর ফেলে আসা গ্রাম, সেখানকার রাস্তা, নদী আর ঝরনা। আবছা এই সব ছবি দিয়ে স্মৃতি রোমন্থন চলে ঠিকই কিন্তু তা দিয়ে তো ফেলে আসা একটা গ্রামকে খুঁজে পাওয়া সহজ কথা নয়। হিসেব করে দেখেন যে, ছোটবেলায় ট্রেনে প্রায় চোদ্দো ঘণ্টা লেগেছিল তাঁর গ্রাম থেকে কলকাতায় পৌঁছতে। যদি ট্রেনটি ৫০ কিমি/ঘণ্টা বেগে ছুটে থাকে তা হলে এটা আন্দাজ করা যায় যে গ্রামটা কলকাতা থেকে এক হাজার মাইল দূরে।

এই এক হাজার মাইল দূরত্বটা কোন দিকে সেটা বোঝার জন্য সারু আশ্রয় নেন গুগল আর্থের। পরীক্ষানিরীক্ষা করে দেখেন যে তাঁর স্মৃতির প্রতিচ্ছবিগুলোর সঙ্গে মধ্যপ্রদেশের গণেশতলাই বলে একটা গ্রামের মিল আছে। কিন্তু গ্রামে গিয়ে দেখেন যে সেখানে প্রায় কেউই নেই। মনে মনে ভয় হয় তা হলে কি সব্বাই মারা গিয়েছেন? বেশ কিছুক্ষণ পরে একজন গ্রামবাসী এসে সারুর কথা শুনে তাঁর জন্মদাত্রী ফতেমার সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন।

এই সব টুকরো ঘটনাকে নিয়ে সারু লিখে ফেলেন তাঁর আত্মজীবনী। সেটাই ‘লায়ন’ ছবির চিত্রনাট্যের মূল অনুপ্রেরণা। ছবিতে সারুর অস্ট্রেলীয় মায়ের চরিত্রে থাকছেন নিকোল। তবে ‘মুলা রুঁজ’ আর ‘দ্য আওয়ার্স’ খ্যাত নিকোল কলকাতায় শ্যুটিং করবেন কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কেউ বলছেন যে অভিনেত্রী কলকাতায় আসছেন শ্যুটিং করতে। কিন্তু প্রোডাকশনের তরফ থেকে সেটা স্বীকার করা হচ্ছে না। সেটা শুনে আবার কেউ বলছেন এ সবের কারণ এত বড় হলিউড অভিনেত্রীর কলকাতায় আসার খবর কখনওই প্রচার করতে চান না কেউই। আবার কেউ বলছেন এ ছবির জন্য নিকোলের যে ক’টা শটস রয়েছে, সেগুলো সবই ক্লোজ আপ হিসেবে নেওয়া হবে। তার জন্য তাঁকে কলকাতা আসতে হবে না।


দুই মায়ের সঙ্গে সারু

প্রথমে শোনা গিয়েছিল হিউ জ্যাকসন অভিনয় করবেন সারুর অস্ট্রেলিয় বাবার ভূমিকায়। কিন্তু পরে শোনা যায় সে খবর ঠিক নয়। ইতিমধ্যেই কলকাতায় ছবির জন্য রেকি করতে এসেছেন ছবির পরিচালক। শোনা যাচ্ছে বাগবাজার এলাকার বিভিন্ন জায়গায় লোকেশন দেখে গিয়েছেন তাঁরা।

এ দিকে আইএসএসএ-ই অ্যাডপশন ইন-চার্জ সৌমিতা মেধোরা বললেন, “সারু আমাদের ঠাকুরপুকুরের নবজীবন হোমে থেকেছে। সেটা ১৯৮৩ নাগাদ। কিন্তু ওখানে এখন আমাদের একটা ক্রেশ রয়েছে। কথা হয়েছে রাজপুরে আমাদের যে হোমটা রয়েছে, সেখানে শ্যুটিং হবে। এর আগে অবশ্য সারুর জীবন নিয়ে একটা তথ্যচিত্র তৈরি হয়েছিল। ওটা আমাদের রাজপুরের হোমেই শ্যুট হয়েছে।”

তবে ছবির লোকেশন এখনও চূড়ান্ত করা হয়নি। কলকাতা ছাড়াও ছবির শ্যুটিং হবে ইনদওর, খাণ্ডোয়া আর দেওয়াস-য়ে। ইন্ডিয়া টেক ওয়ান-এর কর্ণধার প্রবেশ সাহনি, যিনি ভারতে এ ছবির শ্যুটিং করার বন্দোবস্ত করেছেন, জানাচ্ছেন, “ছবির লোকেশন ঠিক করা হচ্ছে। জানুয়ারির প্রথম দিকে সব ফাইনালাইজ হয়ে যাবে। দেবের সঙ্গে আমরা ‘স্লামডগ মিলিয়নেয়ার’য়েও কাজ করেছি। ও কলকাতায় শ্যুটিং করতে আসছে। কলকাতা শ্যুটিংয়ে বেশ গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে থাকছেন নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি ও তন্নিষ্ঠা চট্টোপাধ্যায়।” তবে নওয়াজ বা তন্নিষ্ঠা, ছবি সম্পর্কে কেউ-ই কোনও কথাই বলতে চাননি।

শোনা যাচ্ছে, এ ছবির শ্যুটিংয়ের আগে রিহার্সাল করতে কলকাতায় আসতে পারেন ভারতীয় অভিনেতারা। পরিচালক নিজে আপাতত কলকাতায়। ‘লায়ন’য়ের প্রি-প্রোডাকশনের কাজে ব্যস্ত। কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে, ক্রিসমাসের সময় তিনি হয়তো মেলবোর্নে ফিরে যাবেন কিছু দিনের জন্য। তার পর আবার ফিরে আসবেন কলকাতাতেই।

দেব, নওয়াজ ছাড়াও ছবিতে রয়েছেন দীপ্তি নাভাল। অভিনয় করছেন সরোজ সুদ-এর ভূমিকায়। যিনি ইন্ডিয়ান সোসাইটি অব স্পনশরশিপ অ্যান্ড অ্যাডপশন-এর ফাউন্ডার-সেক্রেটারি। সারু ও সু মিলে কলকাতায় এসে সরোজের সঙ্গে দেখাও করে গিয়েছেন। সু ঘুরে দেখেছেন সরোজের নবজীবন হোম-টিও। ৮২ বছর বয়সি সরোজ বলছেন, “মাই লেট হাজব্যান্ড ওয়াজ অ্যান অ্যাডপ্টেড চাইল্ড। ওকে দেখেই আমি এই কাজ করার অনুপ্রেরণা পাই। বোধহয় ৬ বছর বয়সে সারু আমাদের এখানে এসেছিল। তিন মাস মতো ছিল আমাদের কাছে,” জানান সরোজ। পুরনো স্মৃতি ঘেঁটে বলেন, “সারুর ভাষা শুনে আমাদের মনে হয়েছিল যে ও বুঝি ওড়িশা থেকে এসেছে। তাই আমরা ওর ছবি নিয়ে ওড়িয়া কাগজে ছাপিয়েছিলাম। যদি ওর বাবা-মা’র সন্ধান পাওয়া যায়। কিন্তু তাতে কিছু হয়নি। শেষে সারুকে ‘লস্ট চাইল্ড’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তখন ওকে আমাদের অ্যাডপশন প্রোগ্রামে নেওয়া হয়। সারু গট সাচ আ লাভলি হোম ইন অস্ট্রেলিয়া।”

আজ সরোজ দারুণ খুশি। সারুর জীবন নিয়ে হলিউড ছবি তৈরি হচ্ছে শুনে তিনি আপ্লুত। এখন অপেক্ষা শুধুমাত্র বছর পেরনোর। তার পরই তোড়জোড় শুরু হবে কলকাতায় শ্যুটিং পর্বের।

ananda plus priyanka dasgupta nicole kidman hollywood movie kolkata dev patel
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy