Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ কী বন্ধনে জড়ালে গো বন্ধু...

বিক্রম-ঐন্দ্রিলার রসায়ন কেমন? তাঁদের ছবি তোলার মাঝেই দু’তিনটি কুকুরছানা এসে ঘিরে ধরল। এদের নিয়েই ‘ফাগুন বউ’-এর এক্সটেন্ডেড পরিবার। কুকুরছানাদের আদর করেই দায় সারেন না অভিনেতারা। ভ্যাক্সিনেশনের দায়িত্বও স্বেচ্ছায় কাঁধে তুলে নিয়েছেন।

বিক্রম-ঐন্দ্রিলা। ছবি: সুপ্রতিম চট্টোপাধ্যায়

বিক্রম-ঐন্দ্রিলা। ছবি: সুপ্রতিম চট্টোপাধ্যায়

নবনীতা দত্ত
শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৯ ০০:০১
Share: Save:

টিনের দরজা ঠেলে পা রাখলাম ‘ফাগুন বউ’-এর সেটের অন্দরমহলে। ছিমছাম সাজানো বাড়ির অন্দর শুনশান। শুটিং নেই নাকি? খবর পাওয়া গেল, শুটিং আছে শুধু বিক্রম চট্টোপাধ্যায় আর ঐন্দ্রিলা সেনের। কিছু ক্ষণের মধ্যেই এসে পড়লেন বিক্রম। চোখ-মুখ ঈষৎ ফোলা। হাত বাড়িয়ে অভিবাদন জানাতেই বুঝতে পারলাম, অভিনেতার জ্বর, শরীরটা ভাল নেই। সেই কারণেই তাঁর একটু দেরিও হয়ে গিয়েছে। আগেভাগেই বলে রাখলেন। কারণটা বুঝতে পারলাম ঐন্দ্রিলার আবির্ভাবে। ঐন্দ্রিলা ঢুকতে বিক্রম ওঁর দিকে তাকাতেই চোখ পাকিয়ে তিনি বললেন, ‘‘আমার জন্য কিন্তু মোটেও দেরি হয়নি।’’ বিক্রম তখন মিটিমিটি হাসছেন।

তাঁদের ছবি তোলার মাঝেই দু’তিনটি কুকুরছানা এসে ঘিরে ধরল। এদের নিয়েই ‘ফাগুন বউ’-এর এক্সটেন্ডেড পরিবার। কুকুরছানাদের আদর করেই দায় সারেন না অভিনেতারা। ভ্যাক্সিনেশনের দায়িত্বও স্বেচ্ছায় কাঁধে তুলে নিয়েছেন। ‘‘আমরা ওদের খাবারটাবার কিনে দিই। কিন্তু সেটের দাদারা খুব হেল্পফুল। আমাদের ছুটিছাটায় ওরাই নিয়মমাফিক ওদের খাইয়ে দেয়,’’ বললেন বিক্রম।

এ তো গেল বাহির মহল। আর সেটের ভিতরে কী চলে? খানিকটা ভেবে নিলেন বিক্রম, ‘‘সেটা আমারও প্রশ্ন। ঐন্দ্রিলা একাই দায়িত্ব নিয়ে জমিয়ে রাখে। আমাদের এত জ্বালায় যে, ওকে দেখলেই সকলে পালিয়ে যায়। জোক্‌স অ্যাপার্ট, এটা একটা বিরাট পরিবার। একসঙ্গে খুব এনজয় করি। বিদীপ্তাদি আর ঐন্দ্রিলা একসঙ্গে থাকলে কেউ আর ম্যানেজ করতে পারে না। ওরা যা পাগলামি করে, তাতে সেটের বাকিদের ছুটি দিয়ে দিলেই হয়। তবে যে দিন শুধু ওর আর আমার শুট পড়ে, সে দিন একটু কষ্ট হয়। টানা সাত-আট ঘণ্টা এই মহিলাকে সহ্য করা...’’ কথা শেষ হওয়ার আগেই ঐন্দ্রিলা চোখ পাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন, ‘‘ও! আমি তো এখন মহিলা হয়ে গিয়েছি।’’

প্রায় ন’বছর পরে একসঙ্গে এই ধারাবাহিকে কাজ করছেন বিক্রম-ঐন্দ্রিলা। হাসি-ঠাট্টা-খুনসুটি তো লেগেই থাকে। আর ঐন্দ্রিলার কী বক্তব্য তাঁর পুরনো এই বন্ধু সম্পর্কে? হেসে বললেন, ‘‘আমি তো ওকে ভালবাসি। সামনে বিয়ে করছি না আমরা? আসলে আমরা খুব ভাল বন্ধু। অঙ্কুশও জানে সেটা।’’ বিক্রম পাশ থেকে ফোড়ন কাটলেন, ‘‘অঙ্কুশ ফান্ড করলে আমরা বাহামাজ়ে ডেস্টিনেশন ওয়েডিং করব।’’

ঐন্দ্রিলা এ বার থামিয়ে দিলেন বিক্রমকে, ‘‘মজাটা এই পর্যন্তই ঠিক আছে। আমরা ন’বছর ধরে বন্ধু। আর এই কথাটাই আবার বলব যে, আমি বন্ধু বলেই সম্পর্কটা এত দিন টিকে গেল। প্রেমিকা হলে কবেই শেষ হয়ে যেত। ওর কাউকেই মনে ধরে না। ওর জন্য মেয়ে খুঁজে পাগল হয়ে গেলাম। এ বার কুমোরটুলিতে অর্ডার দিতে হবে। ধরেই নিয়েছি, ওর বিয়ে-টিয়ে হবে না। আগামী দশ বছরে আমার বিয়ে-বাচ্চা সব হয়ে যাবে। আমার বাচ্চাদের ওকে দিয়ে দেব। ও মানুষ করে দেবে। আর আমি শুটিং করব।’’

বিক্রম অবশ্য ঠান্ডা মাথায় ওঁর বক্তব্য শুনলেন। আর তাঁর যে বিয়ের খুব একটা তাড়া নেই, তা-ও জানিয়ে দিলেন। কিন্তু সেখানেই ঐন্দ্রিলার অভিযোগ শেষ নয়। সামনেই ঐন্দ্রিলার জন্মদিন। সুতরাং সেই নিয়েও রয়েছে তাঁর অনেক ‘দাবি’। উপহার চাই-ই চাই তাঁর। ‘‘তোর যখন এত দাবি, তখন ক’দিন পরেই জন্মাতে পারতিস। ওর জন্মদিন কবে জানেন? ৩১ মার্চ। সকলে তখন টাকার হিসেবে ব্যস্ত, ওর জন্য নাকি উপহার কিনতে হবে, সারপ্রাইজ় পার্টি প্ল্যান করতে হবে তখন। অমন কোনও পাগল নেই রে...’’ ঐন্দ্রিলা দমার পাত্রী নন, ‘‘তাও তো ৩১ মার্চ জন্মেছি। পয়লা এপ্রিল হলে তো কেউ বিশ্বাসই করত না। প্রত্যেক বার জন্মদিনে এদের এত খাওয়াই, একটা গিফ্‌ট পর্যন্ত দেয় না!’’

বিক্রম আরও উত্তেজিত হয়ে উঠলেন। মাঝেমাঝেই তিনি গিফ্‌ট দেন। সুতরাং ঐন্দ্রিলার কথা মানতে তিনি নারাজ। তবে গিফ্‌টের উদাহরণ পাওয়া গেল ঐন্দ্রিলার কাছে, ‘‘ও একটা তুলো দিলেও আমি কেঁদে ফেলব। জন্মদিনে এক বার টেডি বিয়ার দিয়েছিল। বিক্রম দিয়েছে বলে খুব আগলে রাখতাম। আমার বিছানার পাশেই রেখেছিলাম। ওমা! ক’দিন বাদে দেখি আমার সারা গা-হাত-পা চুলকোচ্ছে। সেটা ভর্তি ছারপোকা!’’

‘তোর বাড়িতে ছারপোকা, তোর বিছানায় ছারপোকা। এক টেডি বিয়ারের গল্প আর কত বছর ধরে শোনাবি? তার পরে যে পারফিউম, টি-শার্ট দিয়েছি, সেগুলো...’’

‘‘ওসব আমি জানি না। এ বার আমার ভাল গিফ্‌ট চাই-ই চাই। না হলে খাওয়াব না।’’

‘‘তোর অদ্ভুত সব দাবি তো মানতে পারব না। গিফ্‌টে হনিমুন স্পনসর করতে বললে, কী করে করব। আমি কোটিপতি হয়ে গেলেও পারব না।’’

‘‘তোমার যা টাকা, তুমি পারবে। তোমার সঙ্গে কাস্ট না করলে আমি আরও বেশি টাকা পেতাম...’’

বুঝতে পারলুম, ঝগড়াঝাঁটি, তর্কবিতর্ক চলবে... খুনসুটি আর প্রেম ধরা থাকে যে বন্ধুত্বে, তাতে দাবির মতোই ঝগড়াও অন্তহীন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Television Oindrila Sen Bikram Chatterjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE