Advertisement
E-Paper

Sandhya Mukhopadhyay Death: হাসপাতালে গানে গানেই কেটেছিল শেষ কয়েক ঘণ্টা

তাঁর ইচ্ছে, টিভিতে গান শুনবেন। কিন্তু আইসিইউয়ে তা কী ভাবে সম্ভব, সেই ভাবনার মাঝেই নার্সের কাছে গান শোনানোর আবদার করেন সন্ধ্যা।

শান্তনু ঘোষ

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৭:৩০
এই আইসিইউ-তেই শেষ কয়েক দিন ছিলেন শিল্পী।

এই আইসিইউ-তেই শেষ কয়েক দিন ছিলেন শিল্পী। নিজস্ব চিত্র।

‘‘তুমি গান জানো? শোনাতে পারবে আমায়?’’

হাসপাতালে তাঁকে দেখাশোনা করা এক নার্সকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন ‘গীতশ্রী’ সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। মঙ্গলবার বিকেলে। তার আগে আইসিইউয়ের নার্সেরা তাঁকে বার বার অনুরোধ করেছেন, ‘ম্যাডাম, চোখ বুজে একটু বিশ্রাম নিন’। কিন্তু নারাজ ‘গীতশ্রী’। তাঁর ইচ্ছে, টিভিতে গান শুনবেন। কিন্তু আইসিইউয়ে তা কী ভাবে সম্ভব, সেই ভাবনার মাঝেই নার্সের কাছে গান শোনানোর আবদার করেন সন্ধ্যা।

‘গানে মোর কোন ইন্দ্রধনু’র সুরে বাঙালিকে আজও আবিষ্ট করে রেখেছে যাঁর গলা, তাঁর আবদারে না করতে পারেননি রবীন্দ্রসঙ্গীতে তালিম নেওয়া তনুশ্রী সামন্ত। গেয়ে ওঠেন, ‘তোমার অসীমে প্রাণ মন লয়ে’, ‘দাঁড়িয়ে আছ তুমি আমার গানের ওপারে’। তার পরেও বিশ্রাম নিতে নারাজ সন্ধ্যা। গান না শুনলে যে তিনি বিশ্রাম নিতে পারছেন না! অগত্যা আইসিইউয়ের নার্সিং ইন-চার্জ ঝুমা বিশ্বাস নিজের মোবাইলে চালালেন শিল্পীর পছন্দের গান। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় অ্যাপোলো হাসপাতালের আইসিইউয়ে ‘গীতশ্রী’র ১০৪ নম্বর শয্যা তখন ভেসে যাচ্ছে সুরের মূর্ছনায়।

এক সময়ে শুরু হল ‘এই শহর থেকে আরও অনেক দূরে চলো কোথাও চলে যাই...’। চোখ বন্ধ করেই শুনছেন সন্ধ্যা। আচমকা মনিটরে চোখ গেল চিকিৎসক-নার্সদের। হৃদ্‌স্পন্দন নামতে শুরু করেছে— ৭২ থেকে মুহূর্তের মধ্যে ২১। ‘ম্যাডাম ম্যাডাম’ ডাকেও আর সাড়া দিচ্ছেন না। সিপিআর, ভেন্টিলেশন দেওয়া হলেও চোখ আর খুললেন না সন্ধ্যা।

২৭ জানুয়ারি কোভিড নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন সন্ধ্যা। করোনামুক্ত হয়ে ২ ফেব্রুয়ারি থেকে হাসপাতালের ৩৫৫ নম্বর মহারাজা সুইট ছিল তাঁর ঠিকানা। বুধবার সেখানে বসে ঝুমা বললেন, ‘‘মাত্র এক মিনিট ৫৮ সেকেন্ড গানটা শুনতে শুনতেই শহর ছেড়ে পাড়ি দিলেন। জীবনে ভুলব না এই স্মৃতি।’’ গত কয়েক দিনের কথা বলতে গিয়ে চোখের কোণ ভিজে আসছে নার্সিং ডিরেক্টর লক্ষ্মী ভট্টাচার্য, নার্সিং সুপার প্রেমলতা বিশওয়াল, ফ্লোর ইন-চার্জ দীপ্তি বন্দ্যোপাধ্যায়ের। প্রত্যেকেই বলছেন, ‘‘গলার মতো ওঁর ব্যবহারও ছিল মিষ্টি। কখনও বিরক্তি ছিল না।’’

কিছু পছন্দ না হলে হাসিমুখেই তা জানাতেন সন্ধ্যা। যেমন, তাঁর চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা ক্রিটিক্যাল কেয়ারের চিকিৎসক সুরেশ রামাসুব্বনকে বলেছিলেন— ‘‘কর্নাটকের গান নয়, আমার পছন্দ তো রবীন্দ্রসঙ্গীত’। ওই চিকিৎসকের কথায়, ‘‘আমার মা গানের শিক্ষিকা, সঙ্গীত ঘরানায় বড় হয়েছি। ওঁকে সেটা বলেছিলাম। কর্নাটকের শিল্পী ও গান নিয়ে আলোচনা করতেন।’’

কখনও কষ্টের কথা বলেননি ‘গীতশ্রী’। ব্যতিক্রম এক বারই। মঙ্গলবার সকালে রক্তচাপ বাড়াতে ওষুধ দেওয়ার জন্য গলার পাশে চ্যানেল (সেন্ট্রাল লাইন) করার সময়ে বলেন, ‘‘আর পারছি না। এ বার ছেড়ে দিন।’’ সুরেশের কথায়, ‘‘শোনার পরেই মনটা কেমন হয়ে গিয়েছিল!’’

শেষের দিনগুলো কেমন কেটেছিল ‘গীতশ্রী’র? নার্সেরা জানাচ্ছেন, তাঁর দুপুরের মেনুতে থাকত গলা ভাত ও মাছের পাতলা ঝোল। প্রতিদিন দুপুরে টিভিতে তাঁর সিরিয়াল দেখা চাই-ই। তার পরে কিছু ক্ষণ বিশ্রাম। সন্ধ্যা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ফের সিরিয়াল। দীপ্তি জানাচ্ছেন, গত ১১ ফেব্রুয়ারি ঊরুর অস্ত্রোপচারের আগের দিন মেয়ে-জামাইয়ের কাছে বাড়ি ফিরতে চেয়েছিলেন। অস্ত্রোপচারের পরে মাঝেমধ্যে পা ঝুলিয়েও বসতেন। শীতাতপ যন্ত্র নয়, বরং হাল্কা করে পাখা চালাতেই বলতেন নার্সদের। মঙ্গলবার সকালে প্রায় দু’ঘণ্টা তাঁর কাছে ছিলেন লক্ষ্মী। বললেন, ‘‘খিদে পেয়েছে বলছিলেন। বলেছিলাম, পেটের সিটি স্ক্যান হয়ে গেলেই খেতে দেওয়া হবে। স্ক্যানের পরে আইসিইউয়ে গিয়ে পছন্দের সুজি, ছানাও খেয়েছিলেন।’’

তার পরেই গান শোনানোর আবদার করেন তনুশ্রীর কাছে। কেন গান গাওয়া ছেড়েছেন ওই তরুণী, তা-ও জানতে চান। তনুশ্রীর কথায়, ‘‘রাতে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলে ঘুমিয়ে পড়তেন। কিন্তু এ দিন গান না শুনে চোখ বন্ধই করছিলেন না।’’

আর শেষ সময়ে? ঝুমা বলেন, ‘‘মোবাইলে গান চালানোর আগে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, নিজের গান শুনবেন কি না। আপত্তি করেছিলেন। মান্না দে-র নাম বলতেই উদগ্রীব হয়ে শুনতে চাইলেন। ওঁর গাওয়া একাধিক গান চালিয়ে দিয়ে মাথায় হাত বোলাচ্ছিলাম। চোখেমুখে তখন এক অদ্ভুত শান্তি। তার পরেই সব শেষ।’’

পছন্দের ক্রিম-পারফিউমে সাজিয়ে ‘গীতশ্রী’কে শেষ বারের মতো বিদায় জানিয়েছেন অ্যাপোলোর সকলে। তবে মন মানছে না। চিকিৎসক, নার্স থেকে খাবার বণ্টনের ইন-চার্জ রানা চৌধুরী, সকলেই যেন বলতে চাইছেন— ‘কিছু ক্ষণ আরও না হয় রহিতে কাছে...’।

Sandhya Mukhopadhyay Death Singer
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy