“মেঘের ’পরে মেঘ জমেছে, আঁধার করে আসে। আমায় কেন বসিয়ে রাখ একা দ্বারের পাশে।”—জ্যৈষ্ঠের শেষ। আষাঢ়ের শুরু। আর আষাঢ় বললেই মনে ভিড় করে প্রেম, বিরহ, বর্ষা, ভালবাসা আরও কত কী! বর্তমানে এই ইট, কাঠ, পাথরের ভিড়ে আর কি এই অনুভূতিগুলো উঁকি দেয় কারও মনে? বৃষ্টি কি পুরনো স্মৃতি উস্কে দেয়! নাকি ব্যস্ত জীবনে আর এ সব নিয়ে ভাবারই অবকাশ নেই? শীতের বিকেল যেমন অনেকটা মন খারাপ বয়ে নিয়ে আসে। তেমনই বর্ষা মনকে মনে বেঁধে রাখতে পারে না।
তবে অভিনেত্রী গার্গী রায়চৌধুরীর কাছে আষাঢ়স্য প্রথম দিবস বা বর্ষার শুরু মানে আদ্যোপান্ত বাস্তবতা। বৃষ্টির জন্য কাজের ক্ষতি হচ্ছে, এটাই তাঁর বার বার মনে হয়। অভিনেত্রী বললেন, “আমার কাছে রোমান্টিসিজ়ম মানে আষাঢ়স্য প্রথম দিবস নয়। আমার কাছে রোমান্টিসিজ়ম মানে এক কাপ চা নিয়ে ভাল কোনও বই পড়া, কিংবা ভাল সিনেমা দেখা। খুব কেজো মানুষ আমি। বৃষ্টির দিনে কাজের ক্ষতি হয় তাই রোমান্স আসে না। মেঘের 'পরে মেঘ জমেছে, আঁধার করে আসে। গানটা গাইতে ভাল লাগে, কিন্তু এটা বলার ইচ্ছা হয় না। আসলে আষাঢ়ের পয়লা দিবসে কালিদাসের ‘মেঘদূত’ নিয়ে ভাবার মতো বিলাসিতা আমার নেই।”
কিন্তু কাজ, ব্যস্ততার মাঝে অনুভূতিকে একে বারে দূরে সরিয়ে রাখা কি সম্ভব? প্রতি ঋতু এক এক ধরনের অনুভূতি তো বয়ে নিয়ে আসে। অভিনেতা সৌরভ চক্রবর্তী, সোহিনী সেনগুপ্ত সেই পার্থক্য এখনও উপলব্ধি করতে পারেন। কাজের চাপে এখন সে ভাবে উপভোগ হয়তো করে উঠতে পারেন না। সৌরভ বললেন, “এগুলো তো আদিম অকৃত্রিম অনুভূতি। আসলে আমরা ক্রমশ ব্যস্ত হয়ে পড়েছি নিজেদের প্রতিষ্ঠা করার মারপ্যাঁচে। প্রত্যেকে নিজেদের মতো করে। দিনে ২৪ ঘণ্টা রয়েছে। কিন্তু আমাদের ব্যস্ততা বহুমুখী হয়ে গিয়েছে। তাই ছোট ছোট জিনিস চিনেও চিনতে পারি না। এই যে বৃষ্টি পড়া, আষাঢ় এসে পড়া— এই বর্ষাকালের যে আলাদা অনুভূতি, বাহ্যিক ভাবে ফিকে হয়ে গেলেও মন কিন্তু অন্য কথা বলে। এখনও রাস্তার কোথাও জল জমে থাকলে ছোটবেলার কথা মনে পড়ে।”
আষাঢ়ের পয়লায় অবশ্য সোহিনীর সারা দিন শুধু মা স্বাতীলেখা সেনগুপ্তকে ঘিরে। বর্ষার শুরুতে মাকে হারিয়েছিলেন তিনি। এ দিন শুধুই মাকে উদ্যাপন তাঁর। সোহিনী বললেন, “সারা দিন শুধু মাকে নিয়েই আছি। ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে আমার এখনও অনুভূতি হয়। মন খারাপ, মন ভাল —সব কিছু হয়।” বর্ষা এলে রাস্তাঘাটে হাঁটার সমস্যা বেশি করে মনে পড়ে তাঁর। কিন্তু এ সময় রথযাত্রা, বৃক্ষরোপণ উৎসবের অনেক স্মৃতি উঁকি দেয় সোহিনীর মনে।