Advertisement
০৬ মে ২০২৪
নতুন ছবি মুক্তির আগে কাজের জগতের টানাপড়েন নিয়ে কথা বললেন শকুন্তলা বড়ুয়া
Shakuntala Barua

Shakuntala Barua: ‘কাজ নেই, বসে আছি, এটা যন্ত্রণাদায়ক’

দেবের সঙ্গে আগেও কাজ করেছি। তবে এ বার অনেকটা সময় কাটিয়েছি। দেব চমৎকার ছেলে। দার্জিলিঙে শুটিং হয়েছিল।

শকুন্তলা বড়ুয়া

শকুন্তলা বড়ুয়া

নবনীতা দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০২১ ০৬:০১
Share: Save:

কপালে একটা বড় টিপ, খোঁপায় ফুল, ঠোঁটে লিপস্টিক... চিরন্তন সাজে সামনে শকুন্তলা বড়ুয়া।

প্র: আপনার সাজটা একই আছে!

উ: আধুনিক সাজগোজ আমার ভাল লাগে না। আমি আমার মতো সাজি।

প্র: সামনে তো ‘টনিক’-এর মুক্তি। দেবের সঙ্গে কাজ করে কেমন লাগল?

উ: দেবের সঙ্গে আগেও কাজ করেছি। তবে এ বার অনেকটা সময় কাটিয়েছি। দেব চমৎকার ছেলে। দার্জিলিঙে শুটিং হয়েছিল। খুব ভাল হোটেলে ছিলাম। কিন্তু পাহাড়ি রাস্তায় হাঁটাচলায় খুব কষ্ট হত আমার। তাই ওরা হুইলচেয়ারের ব্যবস্থা করে দিয়েছিল আমার জন্য। আর যে হোটেলে ছিলাম, সেখানে আমার ঘরটা ছিল পাহাড়ের অনেকটা উপরে। খুব কষ্ট হত উঠতে। এক দিন দেবকে বললাম, ‘সব ভাল, কিন্তু ঘরটা এত উপরে, আমার উঠতে খুব কষ্ট হয়।’ সঙ্গে-সঙ্গে দেব কথা বলে অন্য ঘরের ব্যবস্থা করে দিয়েছিল।

প্র: ছবিতে আপনার চরিত্রটা কেমন?

উ: আমার চরিত্রের নাম উমা সেন। এই ছবিতে আলাদা করে অভিনয় করতে হয়নি। আমি যেমন, ঠিক তেমনই আমার চরিত্র।

প্র: নতুন পরিচালক অভিজিৎ সেনের কাজ কেমন লাগল?

উ: আমি তো অনেক বড় বড় পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছি। তাঁদের কাজে যে ডিটেলিং ছিল, ওর কাজেও সেই ডিটেলিং। শট পছন্দ না হওয়া পর্যন্ত ও ছাড়ত না। তাতে একটা শট করতে ওর দু’দিন লেগে গেলেও, তাই করবে।

প্র: এত দিন ইন্ডাস্ট্রিতে রয়েছেন, কোনও পরিবর্তন অনুভব করেন?

উ: জীবনে সব কিছুই পরিবর্তনশীল। তবে আমি প্রাচীনপন্থী, আধুনিকতা মেনে নিতে কষ্ট হয়। প্রতি পদক্ষেপে মনে হয়, এ রকম ভাবে কেন বলছে, এ ভাবে কেন করছে? কিন্তু মানিয়ে নিতে হয়। তার মধ্যেই নিজস্বতা বজায় রাখি। আজ পর্যন্ত আমায় কেউ স্লিভলেস পরতে দেখেননি। সাজগোজেও পুরনোপন্থী আমি। লেস-নেট খুব ভাল লাগে। এখনকার ফ্যাশনে হয়তো তার চল নেই।

প্র: কিন্তু টিভিতে ইদানীং আপনাকে দেখা যায় না কেন?

উ: এটা ধারাবাহিকের পরিচালক-প্রযোজকদের জিজ্ঞেস করা উচিত। শেষ সিরিয়াল করেছি ‘ক্ষীরের পুতুল’। তার পরে আর প্রস্তাব পাইনি। অনেকে বলেছিলেন কাজের কথা, কিন্তু কোনও ডাক আসেনি। বসে থাকতে-থাকতে নিজেই এক নামী প্রযোজককে ফোন করে বলি যে, ‘আমার জন্য কোনও চরিত্র থাকলে জানিয়ো।’ এর আগে জীবনে কাউকে কখনও বলিনি কাজের জন্য। আমার খাওয়া-পরার অভাব হবে না। কিন্তু কাজের মানুষ কাজ ছাড়া বসে থাকতে পারি না। অসুস্থ, কাজ করতে পারছি না, সেটা অন্য কথা। কিন্তু সুস্থ মানুষ, কাজ নেই, বসে আছি। সেটা যন্ত্রণাদায়ক।

প্র: সেই প্রযোজকের তরফে কোনও উত্তর পাননি?

উ: সে বলেছিল, তার প্রযোজনা সংস্থা থেকে যোগাযোগ করা হবে। কিন্তু সেই ফোন আর আসেনি। আর এক প্রযোজনা সংস্থা থেকে ডাক এসেছিল। লুক টেস্ট হওয়ার কথা ছিল। আমার শুধু একটাই চাহিদা ছিল আলাদা মেকআপ রুমের। আসলে বয়স হয়েছে তো। একটা রুম পেলে রিল্যাক্স করা যায়। সমবয়সি কারও সঙ্গে রুম শেয়ার করতেও দ্বিধা নেই। কিন্তু ছোট ছোট ছেলেমেয়ের মাঝে বসে থাকতে পারব না। তারা ফোনে কথা বলবে আর আমি সামনে বসে থাকব। তা কি হয়? কিন্তু পরে আর সেই ডাক এল না। সিরিয়ালটা শুরু হলে দেখলাম অন্য একজনকে কাস্ট করা হয়েছে। পরে সেই ধারাবাহিকের হিন্দি ভার্শনে অভিনয়ের জন্য ডাক আসে আমার মেয়ে পিলুর (রাজসী বিদ্যার্থী) কাছে। ও তখন তাপসী পান্নুর ‘উয়ো লড়কি হ্যায় কহাঁ’র প্রস্তাব পেয়ে যাওয়ায় ‘না’ করে দেয়।

প্র: আপনার মেয়ে তো মুম্বইয়ে থাকে?

উ: হ্যাঁ। ও সিনেমা, থিয়েটার সবই করে মুম্বইয়ে। তবে ওকে গানের জন্যই সকলে বেশি চেনে।

প্র: আপনিও তো গান গাইতেন!

উ: আমি গানই গাইতাম। আমার মা দীপ্তি ভট্টাচার্য গানের জগতের মানুষ। বাঁশরি লাহিড়ী, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়... সব এক ব্যাচ। মা ঠুমরি গাইতেন। বেগম আখতারের ছাত্রী ছিলেন। সারা দিন বাড়িতে গানের রেওয়াজ চলত। যামিনী নাথ গঙ্গোপাধ্যায়, নুটু মুখোপাধ্যায়, দীপালি নাগ এঁদের সকলকেই আমি বাড়িতে দেখেছি। বাবা আবার রবীন্দ্রসঙ্গীতের ভক্ত। বাবার পছন্দের শিল্পী ছিলেন সুচিত্রা মিত্র। পরে গীতবিতানে ভর্তি হই। সেখান থেকে ফার্স্ট ক্লাস সেকেন্ড, গীতভারতী হলাম। দশ-বারো বছর সুচিত্রা মিত্রের কাছেই ছিলাম। দিদির কাছে থাকাকালীনই আমার প্রথম রেকর্ড বেরোল ‘হৃদয় আমার প্রকাশ হল’। তখন রবীন্দ্রভারতী থেকে সকলের রেকর্ড বেরোত না।

প্র: এখনও গানের চর্চা করেন?

উ: এখন গাইতে পারি না। মাঝে যাত্রা শুরু করেছিলাম। চিৎকার করে-করে গলাটা নষ্ট হয়ে গেল। তবে রোজ গান শুনি। আমার অনেক ছাত্রছাত্রী আছে। গান শেখাই বহু দিন ধরে। লরেটো হাউসেও গান শিখিয়েছি।

প্র: আর অবসরে কী করেন?

উ: আগে ছবি আঁকতাম। এখন কবিতা লিখি। রান্না করতেও ভালবাসি। আমার জামাই আশিস (বিদ্যার্থী) ভীষণ ভালবাসে আমার রান্না। তখন ‘টোয়েন্টি ফোর’-এর শুটিং করছে ও। আমাকে একদিন বলল মাছ রেঁধে দিতে। সেই মাছ প্যাক করে আমাকেও সঙ্গে নিয়ে গেল সেটে। অনিল কপূর সেই মাছ খেয়ে বলেছিলেন, ‘পৃথিবীর নানা প্রান্তে গিয়েছি, কিন্তু এত সুস্বাদু মাছ খাইনি।’ ‘দহন’-এর সেটেও ইয়াখনি পোলাও রান্না করে খাইয়েছিলাম।

প্র: কলকাতায় কি একাই থাকেন?

উ: বোন থাকে কাছে। মুম্বই থেকেই মেয়ে বাজারদোকান, ব্যাঙ্কের কাজ করে দেয়। ওর আমাকে নিয়ে খুব চিন্তা। ক’দিন আগে মেসেজ করেছে, ‘‘মা আই ওয়ান্ট ইউ টু লিভ সো দ্যাট আই ডোন্ট ফিল অ্যালোন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Shakuntala Barua dev Tollywood
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE