‘ধূমকেতু’ নিয়ে রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষায় গোটা টলিউড! পুজোর দিন গোনায় অভ্যস্ত বাঙালি কি দেব-শুভশ্রীর প্রত্যাবর্তনের দিনও গুনছে এ মুহূর্তে?
এ দিকে, চড়া দামে বিকোচ্ছে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের এই ছবির ট্রেলারের ‘পাস’। ছবিমুক্তির সেই ‘পাস’ নিয়ে কালোবাজারি শুরু হয়েছে বলেও শোনা যাচ্ছে। দেব আর শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়ের অনুরাগীদের অপেক্ষা বুঝি এত দিনে সার্থক! কারণ, তাঁরা ন’বছর ধৈর্য ধরে ছিলেন, এই ছবির মুক্তির জন্য।
বাস্তবে না হোক, অন্তত পর্দায় মিলন হোক তাঁদের প্রিয় জুটির! এটাই কামনা তাঁদের। ন’বছর ধরে প্রযোজক রানা সরকার এবং ছবির নায়ক দেবকে প্রত্যেক দিন একটি প্রশ্নই শুধিয়েছেন সকলে, প্রত্যাবর্তন হবে কত দিনে?
পুরীর মন্দিরে ‘ধূমকেতু’র মহরতের শট। ছবি: সংগৃহীত।
সেই দেব-শুভশ্রী, পর্দার রসায়ন যাঁদের ‘প্রেমের কাহিনি’ লিখেছিল। সৌজন্যে রাজ চক্রবর্তী! ২০০৯ সাল। রাজের পরিচালনায় মুক্তি পেয়েছিল জুটির প্রথম ব্লকবাস্টার ‘চ্যালেঞ্জ’। বাংলা ছবি নতুন জুটি উপহার পেয়েছিল। অনুরাগীদের উন্মাদনায় ভেসে গিয়েছিলেন ছবির নায়ক-নায়িকা। ভাললাগা তখন থেকেই কি শুরু? রাজ বুঝেছিলেন, যে জুটির তিনি জন্ম দিলেন সেই জুটি লম্বা রেসের ঘোড়া। তাই লোহা গরম থাকতে থাকতেই ওই বছর জুটির দ্বিতীয় ছবিমুক্তি ‘পরাণ যায় জ্বলিয়া রে’। বক্স অফিসের নিরিখে যেটি ‘অল টাইম ব্লকবাস্টার’।
বিদেশের মাটিতে রোমান্টিক দৃশ্যে, গানে অভিনয় করতে গিয়েই নাকি উদ্দাম প্রেম। টলিউডে কান পাতলেই শোনা যায়, সেই শুটিংয়ের সাক্ষী যাঁরা, তাঁরা আজও ভুলতে পারেননি সেই সব দিন। সেই সব মুহূর্ত। ছবির প্রত্যেকটি গান, প্রত্যেকটি দৃশ্য দর্শক তা়রিয়ে তারিয়ে উপভোগ করেছেন। বার বার দেখেছেন, দু’জনের ভালবাসার সাক্ষী থাকবেন বলে। পর্দা জুড়ে বেজেছে ‘স্বপ্ননীল, দু’চোখে প্রতি দিন সাজিয়ে তোমাকে...’। কখনও ভুট্টার ক্ষেতে, কখনও বাইকে বসে ‘উড়েছেন’ নায়ক-নায়িকা। ভরা প্রেক্ষাগৃহে সিটির পর সিটি, হাততালির পর হাততালি। প্রেম করতে শিখেছে বাঙালীর এক প্রজন্ম তঁদের দেখে।
দেখতে দেখতে দেব-শুভশ্রীর প্রেম যেন টলিউডের ‘খোলা খাতা’।
টলিউড বলে, এই ছবির হাত ধরেই নাকি প্রেমের পথে যাত্রা তাঁদের, যা যত্নে গড়ে দিয়েছিলেন স্বয়ং পরিচালক রাজ!
অন্তরঙ্গ দৃশ্যে দেব-শুভশ্রী।
তিন বছরের বিরতি। ফের স্বমহিমায় পর্দায় এই জুটি। ২০১১, ২০১২-য় পর পর মুক্তি পেয়েছিল যথাক্রমে ‘রোমিও’, ‘খোকাবাবু’। দেব-শুভশ্রীর তখন একে অন্যের অদর্শনে ‘পরাণ যায় জ্বলিয়া রে’ দশা। শোনা গিয়েছিল, নায়িকার বাড়িও নাকি মেয়ের এই সম্পর্কে মান্যতা দিয়েছিল। দেব-শুভশ্রীর বিয়ে হবে, এমন গুঞ্জনে টলিউডের বাতাস মুখরিত।
তখনও অধীর অপেক্ষা জুটির অনুরাগীদের, ‘মিলন হবে কত দিনে’!
কিন্তু রুপোলি পর্দা আর বাস্তব কি এক হয়! হঠাৎ টলিপাড়া সচকিত, এক দীর্ঘাঙ্গী, সোনার বরণ কন্যে নাকি দেবের মন জুড়ে! ইচ্ছে, তিনিই দেবের ‘দেবী’ হবেন। নায়কও নাকি এই মডেল-কন্যের প্রতি আসক্ত।
দেখতে দেখতে গুঞ্জন ডালপালা ছড়িয়ে মহীরুহ! পল্লবিত হয়ে তা পৌঁছে গেল শুভশ্রীর কানে। ভাঙনের সেটাই নাকি শুরু। ২০১৩-য় মুক্তি পেল জুটির তৎকালীন শেষ ছবি ‘খোকা ৪২০’। অনুরাগীরা হই হই করে প্রেক্ষাগৃহে দেখতে ছুটলেন, ভাঙা মন নিয়ে দেব-শুভশ্রী পর্দায় কেমন রোমান্স করলেন? আরও একটা ‘সিলসিলা’ শুরু হতে না হতেই শেষ। জুটির আর কোনও ছবি নেই।
কিন্তু, ‘শেষ হইয়াও হইল না শেষ’!
বাস্তবে এই সাজে দেব-শুভশ্রীকে দেখতে চেয়েছিলেন অনুরাগীরা।
ফের তাঁদের নিয়ে ছবি ভাবলেন পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর ছোট ছবি ‘উল্কা’র পূর্ণাঙ্গ ছবি ‘ধূমকেতু’তে। তখন দু’জনের মানসিক পরিস্থিতি কেমন? শোনা যায়, যেখানে শুভশ্রী তার ধারেপাশেও যেতেন না দেব। একই পদক্ষেপ শুভশ্রীরও। এমন অবস্থায় চিত্রনাট্য লেখার পর পরিচালক কৌশিক প্রযোজক রানা সরকারকে জানিয়েছিলেন, নায়কের চরিত্রটা যে দেব ছাড়া কেউ ফোটাতে পারবেন না! নায়ককে শোনানো হল গল্প। তিনি এক কথায় রাজি। কিন্তু নায়িকা? পরিচালক-প্রযোজক মিলে বাছলেন শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়, প্রিয়াঙ্কা সরকারকে। তবু পরিচালক কিছুতেই তৃপ্তি পান না! অনেক ভাবনা, অনেক আলোচনার পর ঠিক হল, নায়িকা শুভশ্রীই হবেন। সমস্ত দ্বিধা সরিয়ে পরিচালক-প্রযোজক গেলেন তাঁর কাছে। গল্প শুনে এক কথায় রাজি নায়িকাও!
২০১৫-য় ক্যামেরাবন্দি হল দেব-শুভশ্রীর ‘অনস্ক্রিন রোমান্স’। যেমন হয়েছিল, জয়া ভাদুড়ি-অমিতাভ বচ্চন-রেখার ‘সিলসিলা’, কিংবা রণবীর কপূর-দীপিকা পাড়ুকোনের ‘তামাশা’ বা শাহিদ আর করিনা কপূরের ‘জব উই মেট’। দেব-শুভশ্রীর পর্দার প্রেমের সাক্ষী, নৈনিতালের পাহাড়ি আঁকবাঁক, বরফ ঢাকা প্রকৃতি, লেকের জল...।
আর সেই দীর্ঘাঙ্গী, সোনার বরণ মডেল কন্যে? সেই কন্যে রুক্মিণী মৈত্র (তখনও তিনি অভিনয়ে আসেননি) তখন দেবের ‘পরাণ’ জুড়ে। তখনকার একাধিক সাক্ষাৎকারে প্রযোজক জানিয়েছিলেন, নৈনিতালে বরফ কেটে শুটিং চলেছে। গা ঘামিয়ে শুটিং করেছেন প্রত্যেকে। দেবের সঙ্গে তাঁর ‘দেবী’ও উপস্থিত। তাঁর উপলক্ষ, ছুটি কাটানো!
প্রেম যেখানে অতীত, প্রেমিক-প্রেমিকা যখন ‘প্রাক্তন’, তখন যতই পেশাদার হোন, পর্দার আদৌ রসায়ন জমে?
শুটিংয়ের অবসরে দেব-শুভশ্রী। ছবি: সংগৃহীত।
আনন্দবাজার ডট কম জানতে চেয়েছিল প্রযোজক রানার কাছে। তাঁর কথায়, “চোখের সামনে দেখেছি, ক্যামেরার সামনে ওঁরা ব্যক্তিগত সব কিছু ভুলে যেতেন। চিত্রনাট্যে, নিজেদের অভিনীত চরিত্রে ডুব দিতেন। ক্যামেরা সেই মুহূর্ত ধরে রেখেছে। ১৪ অগস্ট পর্দায় সেই রোমান্স আবার আগের মতো ঝলমলিয়ে উঠবে।” পরিচালক ‘কাট’ বললেই দু’জনে দু’মুখো? “একেবারেই না”, বলেছেন তিনি। দৃশ্য নিয়ে আলোচনা করতেন। পাশাপাশি বসে কফিও খেয়েছেন কখনও। ক্যামেরার সামনে তুমুল রোমান্স করেছেন। আর অনেকটা সময় খরচ করেছেন পরিচালকের কাছে সিনেমার খুঁটিনাটি বুঝতে। একসঙ্গে!
ছবির শুটিং শেষ হয়েছে। দু’জনার দু’টি পথ বেঁকে গেছে দু’টি দিকে... আবার। শুভশ্রী ফিরেছেন নিজের মতো করে। দেবকে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছেন রুক্মিণী।
ন’বছরের দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আরও একবার বড় পর্দায় ‘প্রেম’ করবেন তাঁরা। দর্শকদের উন্মাদনার পারদ আকাশ ছুঁই ছুঁই। অনুরাগীদের আগাম প্রত্যাশা, আগামী দিনে সিনেমার প্রয়োজনে ফের মিলবেন দেব-শুভশ্রী। নায়িকা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তাঁরা পেশাদার। ভাল চিত্রনাট্য, চরিত্র পেলে আবার একসঙ্গে কাজ করবেন। রাজ জানিয়েছেন, তিনিও ছবিমুক্তির প্রতীক্ষায়। রুক্মিণীর কথায়, “আমি জানি, দেব নিজে কতখানি প্রতীক্ষায় ছিল। এ বছর ওর দুর্গাপুজো অগস্ট থেকে শুরু হয়ে যাচ্ছে।”
শুটিংয়ের অবসরে দেব-শুভশ্রী। ছবি: সংগৃহীত।
সম্প্রতি, দেব একান্ত সাক্ষাৎকারে এক বৈদ্যুতিন মাধ্যমকে বলেছেন, “এই জন্মে না শুভশ্রী তার নাম থেকে দেবকে সরাতে পারবে, না আমি আমার নাম থেকে শুভশ্রীকে সরাতে পারব। অনস্ক্রিন জুটি হিসেবে।” খুব শিগগিরই মুক্তি পাবে ছবির তৃতীয় গান ‘হবে না দেখা?’ এই আকুতি যেন শোনা যাচ্ছে টলিউডের আনাচে কানাচেও। বাস্তবে না হোক, পর্দায় অন্তত প্রতি বারের মতো অন্ত্যমিল হোক জুটির।