গত ১৫ দিন ধরে চর্চায় মমতাশঙ্কর। সৌজন্যে, তাঁর সাম্প্রতিক কিছু বক্তব্য। অতিসম্প্রতি এক প্রথম সারির বাংলা চ্যানেলে নাচের প্রতিযোগিতা থেকে শুরু করে ঋতুস্রাব, ধর্ষণ, শিশুর দেখভাল প্রসঙ্গে নানা মত প্রকাশ করেন নৃত্যশিল্পী-অভিনেত্রী।
বিতর্কের জন্ম সেখান থেকেই। কথাপ্রসঙ্গে মমতাশঙ্কর বলেন, “স্যানিটারি ন্যাপকিনের বিজ্ঞাপনে লাল রং ঢেলে বোঝানোর কোনও প্রয়োজন আছে ঋতুস্রাব কী বা কেমন?” তিনি এ-ও জানিয়েছেন, নিজের ছেলেদের সঙ্গে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে তিনি পারবেন না।
ঋতুস্রাব নিয়ে এই ‘ট্যাবু’ যুগের পর যুগ ধরে চলে আসছে। যতই নারী-পুরুষের সমানাধিকার নিয়ে কথা হোক, এখনও বিশেষ দিনে ঋতুমতীরা পুজোর ঘরে বা মন্দিরে পা রাখতে পারেন না। প্রত্যন্ত গ্রামে রান্নাঘরেও ঢুকতে পারেন না তাঁরা। স্যানিটারি ন্যাপকিনের ব্যবহার পর্যন্ত জানেন না অনেকে! একুশ শতকেও নারীকে যখন তার ঋতুস্রাবের মতো শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়ার জন্য লড়তে হয়, সেখানে মমতাশঙ্করের এই বক্তব্য নতুন করে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। এর জেরে সমাজমাধ্যমে বর্ষীয়ান অভিনেত্রীকে তীব্র কটাক্ষ করেন গায়িকা ইমন চক্রবর্তী।
শনিবার থেকে সেই চর্চায় যোগ দিয়েছেন মমতাশঙ্করের ভাইঝি শ্রীনন্দাশঙ্কর। শনি এবং রবি, পর পর দু’টি পোস্ট তিনি সমাজমাধ্যমে করেছেন। সেখানে তিনি মমতাশঙ্করের নাম করেননি একবারও। কিন্তু নেটাগরিকের বুঝতে অসুবিধা হয়নি নিশানা কোন দিকে।
শঙ্কর পারিবারের ঐতিহ্য মেনে শ্রীনন্দাও নৃত্যশিল্পী হিসাবে তুলে ধরেছেন নিজেকে। পাশাপাশি, পিসি মমতাশঙ্কর বা মা তনুশ্রীশঙ্করের মতো অভিনয়ও করেন। তিনি তাঁর প্রথম পোস্টে পারিবারিক ঐতিহ্যের কথা উল্লেখ করে লিখেছেন, “বংশগৌরব আর প্রতিভা একজন মানুষকে চেনায় না— তার চিন্তা আর বিশ্বাসই আসল।” তিনি এই প্রজন্মের প্রতিনিধি। আধুনিক সমাজ দেখে তাঁর উপলব্ধি, এখন আর সেই দিন নেই, যখন মানুষ একজন অভিনেতাকে তার অভিনীত ‘চরিত্র’ হিসাবে বিচার করত। তারকাদের রাগ-অভিমান এখন পুরনো হয়ে গিয়েছে। আজকের দিনে মানুষ হিসাবে কে কেমন, সেটাই আসল। তাই তিনি মনে করেন, অনেক তারকাই সময়ের সঙ্গে চলতে শেখেননি! তাই তাঁরা বিরক্ত আর তিক্ত হয়ে পড়েন।
আরও পড়ুন:
শ্রীনন্দার এই বক্তব্য ভাইরাল। ইতিমধ্যেই তাঁকে যাঁরা অনুসরণ করেন তাঁরা সমর্থন জানিয়েছেন। মমতাশঙ্করের ভাইঝি কিন্তু এখানেই থামেননি। বর্ষীয়ান অভিনেত্রী তাঁর দেওয়া সাক্ষাৎকারে ধর্ষণ, ছোটদের ভাল-খারাপ স্পর্শ শেখানো বিষয়েও তাঁর মতপ্রকাশ করেছেন। যেখানে তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, কোনও নারী যদি অতিরিক্ত খোলামেলা পোশাক পরেন তা হলে তাঁকে দেখে কোনও বিকৃতকামের লালসা জাগতেই পারে। সে ওই লোভ চরিতার্থ করতে পারে অন্য নারীর উপরে। তাই প্রত্যেক মেয়েরই উচিত পোশাকে শালীনতা বজায় রাখা। একই ভাবে মমতাশঙ্কর মনে করেন, ছোটদের ‘গুড টাচ’, ‘ব্যাড টাচ’ শেখানোর প্রয়োজন নেই। তাঁরা কিন্তু ছোটবেলায় এ রকম কিছুই শেখেননি। বদলে বাড়ির বড়দের, বিশেষ করে শিশুর মা-বাবাকে সজাগ থাকার পরামর্শ দেন।
পিসির এই বক্তব্যও নিয়েও পাল্টা বাক্যবাণ ছুড়েছেন ভাইঝি। রবিবার শ্রীনন্দা লেখেন, “যাঁরা সব কিছুতেই মহিলাদের দোষ দেন বা ধর্ষকের মানসিকতার প্রতি সহানুভূতি দেখান, তাঁদের সম্মান আমার দরকার নেই।” শিশুদের ভাল এবং খারাপ স্পর্শ না শেখানো প্রসঙ্গে তাঁর আফসোস, “যদি ছোটবেলায় এ সব আমরা জানতাম, তা হলে অনেক খারাপ ছোঁয়া আমরা এড়াতে পারতাম।”
শ্রীনন্দার দ্বিতীয় বক্তব্যে সাফ, তিনি কার বক্তব্যের বিরোধিতা করছেন! যদিও এই নিয়ে তিনি বা মমতাশঙ্কর বা তাঁর পক্ষে কেউই মুখ খোলেননি। তবে আলোচনা শুরু হয়েছে দু’পক্ষের পরিচিতদের মধ্যে। সেখান থেকেই প্রশ্ন উঠেছে, শঙ্কর পরিবারের অন্তর্কলহ কি প্রকাশ্যে! নাম না করে কড়া জবাবে নিজের পিসি মমতাশঙ্করকেই কি বিঁধলেন শ্রীনন্দা?