বাংলা থেকে মুম্বইয়ে চুটিয়ে কাজ করছেন, এমন লোকজনের সংখ্যা কম নয়। তবে গায়ক-গায়িকা এ ক্ষেত্রে হাতেগোনা। এই মুহূর্তে গোটা দেশ জুড়ে বক্স অফিসে ঝড় তুলেছে ‘কান্তারা: চ্যাপটার ১’। ঋষভ শেট্টী অভিনীত এটি তাঁর ২০২৩-এর ছবি ‘কান্তারা’র প্রিক্যুয়েল। দু’টি ছবিতেই গান গেয়েছেন কলকাতার শতদ্রু কবীর। প্রিক্যুয়েল, অর্থাৎ ‘কান্তারা: চ্যাপটার ১’ ছবিতে ‘পুলিয়ে’ গানটি গেয়েছেন শতদ্রু। আর ‘কান্তারা’তে যে ‘লে লে লেগা’ গানটি গেয়েছিলেন। ‘লে লে লেগা’ গানটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল শ্রোতাদের মধ্যে। এই গানটি শতদ্রুর কণ্ঠে এক বার শুনেই সবুজ সঙ্কেত দেন ঋষভ। সম্পূর্ণ অচেনা ভাষায় গান গাওয়ার এই সুযোগ কী ভাবে এল বাঙালি ছেলের কাছে, আনন্দবাজার ডট কম-কে জানালেন গায়ক।
গানের তালিম ছোটবেলা থেকেই। প্রথমে মায়ের কাছে গানের শিক্ষা। তার পর বিভিন্ন গুরুর কাছে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত চর্চা। যদিও কর্নাটকি তালের শিক্ষা নেন সোমনাথ রায়ের কাছে। শতদ্রুর জীবনে এই শিক্ষক তাঁর অনুপ্রেরণার জায়গা। তিনিই মুম্বইয়ে গিয়ে গানের জগতে চেষ্টা করতে উৎসাহিত করেন শতদ্রুকে। দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করেছেন। তবে সে ভাবে বড় কোনও সুযোগ মেলেনি।
শতদ্রুর কথায়, ‘‘আসলে এখানে সব থেকে বড় অপরাধ হচ্ছে কাজ চাওয়া। কাজের জন্য ফোন করেছি সুরকারকে, অথচ ফোন তোলেননি এমন দিনও হয়েছে। কিন্তু মুম্বইয়ে এর ঠিক উল্টো ব্যবহার পেয়েছি। তাই পাঁচশোরও বেশি বিজ্ঞাপনে জিংগল গেয়েছি। বরুণ ধওয়ান থেকে অনেক বড় তারকার কণ্ঠে গেয়েছি। যদিও এখানে অনেকে কটাক্ষ করে বলেছিলেন, কলকাতায় কিছু পারল না, মুম্বই গিয়ে কি পারবে!’’
আরও পড়ুন:
‘কান্তারা’ ছবিতে সুযোগ আসে একটি বিজ্ঞাপনের গানের দৌলতে। এই ছবির সঙ্গীত পরিচালক অজনীশ লোকনাথ যোগাযোগ করেন। শতদ্রুর কথায়, ‘‘আসলে অনেকটা চড়াই-উতরাইয়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। মুম্বই ইন্ডাস্ট্রিতে আমাকে সাহায্য করেন শৌভিক চক্রবর্তী এবং দক্ষিণী ছবিতে ঢুকতে সাহায্য করেছিলেন ভিনসেট কেডি। ‘পুলিয়ে’ গানটা রেকর্ডিংয়ের সময়েই আমাকে উৎসাহিত করেছেন। এই গানটা গাওয়াটা খুব সোজা ছিল না। কারণ তুলু ভাষায় কিছুটা অংশ গাইতে হয়েছে। তাই কী ভাবে উচ্চারণ করব শব্দগুলো, সেটা বুঝতে সময় লাগে। কিন্তু গানটা যখন গাই, তার পরে অজনীশ স্যর গানটা ঋষভ শেট্টীকে পাঠিয়ে দেন। এক বার শুনেই তিনি (ঋষভ) হ্যাঁ করে দেন।’’ শতদ্রু জানান, এখনও ‘কান্তারা’র নায়কের সঙ্গে সরাসরি দেখা হয়নি তাঁর, তবে ফোনে কথা হয়েছে। তিনি শতদ্রুর কাজে খুশি, সেটা জানিয়েছেন গায়ককে। গায়ক বলেন, ‘‘গানটা পছন্দ হয়েছে বলে যখন ঋষভ শেট্টীর মেসেজটা ফোনে এল তখন মনে হল যে স্বর্গে আছি।’’
তবে বাংলার ছেলে হয়েও নিজের ঘরের মাটিতে কাজ না পাওয়ার আক্ষেপ রয়েছে। যদিও শতদ্রু জানান, কলকাতার প্রত্যাখানটা তাঁর জীবনে শাপে বর হয়েছে। শতদ্রুর কথায়, ‘‘জীবনের শুরুটা করেছিলাম একজন সুরকারের সহকারী হিসেবে। সেখানে লোকের চা পর্যন্ত আনতে হয়েছে। যাই হোক, ৫০০ টাকা পকেটে নিয়ে এখানে কাজ ছেড়েছিলাম। কিন্তু সে সব কথা মনে রাখিনি। ভবিষ্যতে ইচ্ছে আছে বাংলা ভাষায় কাজ করব। কিন্তু বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে করব না।’’